কোপারনিকান বিপ্লবের জনক কাকে, কেন বলা হয়

কোপারনিকান বিপ্লবের জনক কাকে, কেন বলা হয়

অথবা, টীকা লেখো: কোপারনিকান বিপ্লব

অথবা, ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক’ কাকে, কেন বলা হয়

কোপারনিকান বিপ্লবের জনক কাকে, কেন বলা হয়
কোপারনিকান বিপ্লবের জনক কাকে, কেন বলা হয়

কোপারনিকাসের বিপ্লব/কোপারনিকান বিপ্লব

মহাকাশে শত শত জ্যোতিষ্ক যেমন দীপ্যমান, বিজ্ঞানচর্চার মহাকাশে সেরকমই এক জ্যোতিষ্ক হলেন পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি পোল্যান্ডের ব্র্যাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে তাঁর মনে প্রবল কৌতূহলের জন্ম হয়। তিনি শুরু করেন জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা। সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্র্যান্ড মতবাদের প্রথম আধুনিক প্রবক্তা ছিলেন তিনিই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কিত তাঁর ধারালো যুক্তি ও ব্যাখ্যার জন্য কোপারনিকাসকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক (Father of Astronomical Science) বলা হয়।

(1) নবজাগরণ পর্বে কোপারনিকাসের মতবাদ: পঞ্চদশ শতক থেকে নবজাগরণের ফলে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদকে আশ্রয় করে ইউরোপের শিল্প, সাহিত্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসে পরিবর্তন। এসময় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এরূপ পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল কোপারনিকাসের হাত ধরে। সেই সময় প্রচলিত ধারণা ছিল, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মান্ডের তত্ত্ব সমসাময়িক কালের তুলনায় অনেকটাই এগিয়েছিল। কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী বাদে সাধারণ মানুষকে তা বিশ্বাস করানো সহজ ছিল না।

(2) কোপারনিকান তত্ত্ব: কোপারনিকাস জ্যোতিষ্কমণ্ডলী সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ও গাণিতিক বিচার দ্বারা টলেমি প্রচারিত তত্ত্বের প্রায় বিপরীত এক নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।

(a) তিনি বলেন যে, ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থান

(b) বিভিন্ন গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।

(c) কোনও একটি কেন্দ্রকে ঘিরে এদের আবর্তন হচ্ছে না। যেমন, চাঁদের পরিক্রমা ঘটছে পৃথিবীর চারিদিকে। পৃথিবী-সহ সমস্ত গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। আবার চাঁদের মতোই অন্যান্য উপগ্রহগুলি বিশেষ বিশেষ গ্রহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।

(d) পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব থেকে গ্রহগুলির দূরত্ব অনেকগুণ বেশি।

(e) পৃথিবী নিজে গতিশীল বলেই দূরের গ্রহগুলিকে চলমান মনে হয়।

(f) একই কারণে পৃথিবীতে অবস্থানকারীরা পৃথিবীকে গতিহীন মনে করেন।

(g) পৃথিবী প্রদক্ষিণরত বলেই, মানুষের দৃষ্টিতে সূর্যের অবস্থান পাল্টে যায়।

(h) জ্যোতিষ্কদের যে গতি আমরা দেখি তা আসল গতি নয়, আপেক্ষিক গতি। কারণ, গতিশীল পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণের কারণে গ্রহনক্ষত্রের প্রকৃত গতি বোঝা যায় না।

(3) জ্যোতির্বিদ্যায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন: যে বছর কোপারনিকাস মারা যান (১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দ), ওই একই বছর প্রকাশিত কোপারনিকাসের ডে রেভলিউশনিবাস গ্রন্থে সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তত্ত্বটি উঠে আসে-যা জ্যোতির্বিদ্যায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে। পরবর্তীকালে বুনো, কেপলার এবং গ্যালিলিও-র মতো বিজ্ঞানীরা এই মতবাদকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর মতবাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিশ্বব্রহ্মান্ডের গঠন সংক্রান্ত আধুনিক ধারণাকে কোপারনিকাসের বিপ্লব বা কোপারনিকান বিপ্লব (Coparnican Revolution) নামে অভিহিত করা হয়।

মূল্যায়ন

আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণায় কোপারনিকাসের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাঁর প্রধান কৃতিত্ব ছিল চিরাচরিত মিথ্যা ধারণার বিরুদ্ধে পরম সত্যকে (Absolute Truth) তুলে ধরা। রেনেসাঁ যুগের একজন মানবতাবাদীরূপে (Humanist) অসামান্য মনোবল দেখিয়ে তিনি বাইবেল বিরোধী হলেও সত্যকে প্রকাশ করেন। কোপারনিকাসের পথপ্রদর্শনের ফলেই পরবর্তীকালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নানান রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment