দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা 500+শব্দে

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

কোনো এক মনীষী বলেছিলেন, উনিশ শতকটা ছিল দার্শনিকদের যুগ। বিশ শতক এল বিজ্ঞানীদের যুগ হয়ে। এই সূত্র ধরে এখন বলা যায়, একবিংশ শতাব্দী নিয়ে এসেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগল অন্বেষণ ও সমন্বয়ের পালা, এবার হয়তো মেলবন্ধন ঘটবে প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকের।

‘বিজ্ঞান’ দেয় নিত্যনতুন সত্যের সন্ধান, আর সেই আবিষ্কৃত সত্যকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি আমাদের হাতে হাতে উপহার দিচ্ছে ব্যাবহারিক নানা জিনিস। যে বিদ্যুৎ একদা আকাশের মেঘে মেঘে সংঘর্ষে উৎপন্ন হয়ে পৃথিবীর জীবজগৎকে কাঁপিয়ে তুলেছিল, তার শক্তি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন-তাকে মানবকল্যাণে যে ব্যবহার করা যায়, সে ইঙ্গিত তাঁরা দিলেন। কিন্তু তাকে ব্যাবহারিক জীবনে কাজে লাগাল যে, সে হল প্রযুক্তি। প্রযুক্তির বিশেষ কৌশলে বিদ্যুৎকে বন্দি করে আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিল। এ এক অভাবিত ফল!

বিদ্যুৎ যে অনেক বড়ো বড়ো কাজে ব্যবহৃত হয়, তা চোখের সামনে প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে আমরা তাকে কাজে লাগিয়ে চলেছি একটি চাকরের মতো। আমাদের ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে, মাটির ভিতর থেকে জল তুলে তা ট্যাংকে ভরে দেয় এই বিদ্যুৎ। রেডিয়ো, টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ারকুলার সবই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফসল। এই ব্যবহার দিকে দিকে বেড়ে চলেছে।

মাটির তলায় রয়েছে অযুত গ্যাসের ভান্ডার। বিজ্ঞান তার সন্ধান দিল এবং তাকে যে আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তার ইশারাও দিল। বিজ্ঞানের হাত ধরাধরি করে পরে এগিয়ে এল প্রযুক্তি। তাকে ভরে ফেলল সিলিন্ডারে। এর নতুন নাম হল, ‘লিক্যুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস’-এই গ্যাস এখন আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে রান্নার কাজে লাগছে। আজ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এই রান্নার গ্যাসের প্রভাব অপরিসীম।

আজ আমাদের ঘরে ঘরে যে টেলিফোন এবং হাতে হাতে ‘মোবাইল ফোন’ তাও সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে, মোবাইল ফোন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কতখানি প্রয়োজনীয়, তা ব্যাখ্যা করে বোঝানোর দরকার হয় না। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, দোকানদার, সবজিওয়ালা, রিকশাওয়ালা- কেউই মোবাইল ফোন ছাড়া প্রাত্যহিক জীবনে এক পা চলতে পারে না। এই ফোনযোগে দূরত্ব বা কোনো দুর্গমতা থাকে না। আমেরিকার মানুষও এই মোবাইলে এসে ধরা দেয়। বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে প্রযুক্তি যেভাবে দিনে দিনে উন্নীত করছে, তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহার আরও এক বিস্ময়ের দরজা খুলে দিয়েছে। জটিল গাণিতিক হিসাব নিমেষে সমাধান করে প্রযুক্তিগত উন্নতির এক অপরিহার্য উপাদান হয়ে ধরা দিয়েছে কম্পিউটার। ইনটারনেট আর কম্পিউটারের যুগলবন্দি এখন সমস্ত অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘরে বসে বড়ো বড়ো চিঠি, প্রবন্ধ, লেখা ‘ই-মেল’ করে দূরদূরান্তে পাঠিয়ে দিতে পারি এবং এই পাঠানো বিবরণ সঙ্গে সঙ্গে প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়। এইভাবে আমরা ঘরে বসে ‘fax’ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি নানা বার্তা ও সংবাদ। এই কম্পিউটার যন্ত্রটি এখন আমাদের ঘরে এক নিতান্ত আবশ্যিক সামগ্রী।

কম্পিউটার খুলে ঘরে বসে সারাবিশ্বের খবর সংগ্রহ করা যায়। শেয়ার বাজার থেকে বাজারদর, কর্মখালি থেকে সরকারি বিজ্ঞপ্তি, আরও নানান প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় তথ্য মুহূর্তে আমাদের কাছে এসে যাচ্ছে-এই কম্পিউটার যন্ত্রটি খুলে সারাবিশ্বের খবরের কাগজও আমরা চটপট পড়ে নিতে পারি। বর্তমানে প্রযুক্তির আরও উন্নতিতে ‘কম্পিউটার’ যন্ত্রটি হাতের ব্যাগে ঢুকে পড়ছে। এখন সে হয়ে গেছে ‘ল্যাপটপ’। আমাদের চলার পথের সঙ্গী হয়ে আমাদের প্রতি মুহূর্তের কাজের সহায়ক হয়ে উঠেছে।

চিকিৎসা জগতেও বিপ্লব এনেছে এইসব প্রযুক্তি। এক্স-রে দিয়ে যার শুরু হয়েছিল, এখন তাকে ছাড়িয়ে আমরা অনেক দূর চলে এসেছি। যন্ত্রের সাহায্যে এখন চলেছে চোখ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি প্রভৃতির অপারেশনও। চলছে অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড!

বিজ্ঞান চলেছে আগে আগে, প্রযুক্তি চলছে তার পিছু পিছু। আমাদের এই পৃথিবীতে এমন কিছু নেই, যেখানে প্রযুক্তির হাত নেই। প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে কিছুই ভাবা যায় না। এখন শুধু প্রয়োজন পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি, যা প্রকৃতির মৌলিকতা ও ভারসাম্যকে অটুট রেখে মানুষকে দেবে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নির্ভরতা।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top