প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান মানবসভ্যতার উত্তরণের সিঁড়ি। আদিম মানুষের নৈসর্গিক বিস্ময় যেদিন যুক্তি ও বিচারবিশ্লেষণের পথ ধরে বিশ্লেষিত হয়েছিল, সেই দিনেই বিজ্ঞানের শুভ সূচনা ঘটেছিল। আদিম অরণ্যচারী মানুষ প্রকৃতির কাছে কতই-না অসহায় ছিল। তবে চাকার আবিষ্কারের ফলেই সভ্যতার বিজয়রথের পথচলা শুরু হয়েছিল, আর বিজ্ঞান আজ মানুষের কাছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো। বিজ্ঞানের ছোঁয়াতেই মানুষ আজ প্রভূত শক্তি ও সম্পদের অধিকারী।

বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন সমার্থক। আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অনিবার্য উপস্থিতি। এদিক থেকে বিজ্ঞান মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী ও বন্ধু। ব্যাবহারিক ও দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা এক পা-ও চলতে পারি না, তাকে ছাড়া আমাদের জীবন অচল-অনড়-জড়।

বিজ্ঞানীদের অতন্দ্র তপস্যার ফলে আজ বিজ্ঞানের বিজয়কেতন জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে উড্ডীন। বিজ্ঞান তার জাদুতে মরুকে রূপান্তরিত করেছে সবুজ প্রান্তরে। দুরন্ত নদীর চঞ্চল জলধারাকে বন্দি করে ঊষর প্রান্তরে সেই জলধারা সেচন করে ঘটিয়েছে সবুজ বিপ্লব। বিজ্ঞানের কৃপায় দূর আর দূর নেই, হয়েছে নিকট। সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা আজ বিজ্ঞানের কৃপায় সহজ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান একান্ত অপরিহার্য। সকালে শয্যাত্যাগ থেকে শুরু করে রাতে শুতে যাওয়ার প্রাক্-মুহূর্ত পর্যন্ত বিজ্ঞান আমাদের সেবায় নিযুক্ত থাকে। দিনের প্রথম পর্বে ঘড়ি আমাদের জানিয়ে দেয় সময়ের সংকেত, রান্নার জন্য ব্যবহৃত হয় গ্যাস বা ইলেকট্রিক ওভেন, কুকিং রেঞ্জ। শীতকালে স্নানের সময় পেয়ে যায় ওয়াটার হিটার। দিনের দ্বিতীয় পর্বে

ছাত্রছাত্রী, অফিসযাত্রী সকলেরই নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো পড়ে যায়। সেজন্য ট্রাম, বাস, ট্যাক্সি, রেল, চক্ররেল, পাতালরেল, রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পো অপেক্ষা করে থাকে। যোগাযোগকে সহজ করেছে টেলিফোন বা দূরভাষ। জরুরি প্রয়োজনে থানা, হাসপাতাল, দমকল প্রভৃতির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যায়। দূরকে নিকট করেছে টেলিফোন ও টেলিগ্রাম। আজকাল বহুতল অফিস-কাছারিতে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় না, তার জন্য রয়েছে লিফট বা এসকালেটর। গ্রীষ্মে স্বস্তি দিতে এগিয়ে এসেছে কুলার বা এয়ারকন্ডিশনার। টিভি আর রেডিয়ো ঘরের মধ্যে বিশ্বকে এনে দিয়েছে। অবসর সময় কাটানো ও বিনোদনের প্রধান বাহন আজ এগুলি। তা ছাড়া, এই ইলেকট্রনিক প্রচারমাধ্যম দুটি প্রতি মুহূর্তে সংঘটিত বিশ্ব-ব্যাপারের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করে চলেছে। সারাদিনের কর্মক্লান্তির পর মানুষ ঘরে ফিরে টিভির পর্দায় চোখ রেখে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখে ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করে। এভাবেই দিনের শুরু থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞান বিশ্বস্তভাবে মানুষের সেবা করে চলেছে।

বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত উপাদানে গৃহিণী তাঁর রান্নাঘরকে নবসাজে সজ্জিত করার সুযোগ পেয়েছেন। ডিভিডি কিংবা আইপ্যাডের দৌলতে ঘরে বসে আমরা ভালোলাগা ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছি, টেপরেকর্ডারে গান শুনে মনকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত করতে পারছি। এককথায় বিজ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে মসৃণ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে।

বর্তমান যুগে মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে শতদল মাথায় করে জীবনকে করেছে সুন্দর। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনের প্রতিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নব নব সৃষ্টিকে কাজে লাগিয়েছে মানুষ। বিজ্ঞান দৈনন্দিন জীবনে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞান আজ মানুষের বন্ধু, সহযোগী সেবক। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান আমাদের নিত্যসেবা করে চলেছে। এ কথা ভাবলে শিউরে উঠতে হয় যে, বিজ্ঞান যদি এত প্রসন্ন না-হত তাহলে এই গতিময় বিশ্বে আমরা বাঁচতাম কী করে!

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top