মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

আমরা পরিবেশ তথা প্রকৃতির সন্তান। পরিবেশেই আমরা বসবাস করি, পরিবেশের মধ্যেই আমরা আমাদেরকে মেলে ধরতে পারি। আমরা আমাদের বেঁচে থাকার সকল উপকরণই সংগ্রহ করতে পারি পরিবেশের মধ্যে থেকেই। এক্ষেত্রে শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশের কথাই বলা হচ্ছে না; সামাজিক, সাংস্কৃতিক – বা পারিবারিক পরিবেশও বর্তমান সভ্যতায় বিভিন্নভাবে মানবজীবনে প্রভাব – বিস্তার করছে।

আমাদের চারিদিকে যা রয়েছে অর্থাৎ যা আমাদের জীবনধারাকে প্রত্যক্ষ  বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, প্রভাবিত করে-তা সবই আমাদের পরিবেশের  অন্তর্গত। এই পরিবেশ হতে পারে ভৌত পরিবেশ আবার হতে পারে জৈব – পরিবেশও। জল, বায়ু, মাটি, তাপমাত্রা ইত্যাদির ওপর আমরা যেমন নির্ভরশীল  হই; তেমন গাছপালা, জীবজন্তু, মানুষ, নানা শ্রেণির জীবের ওপরেও  নির্ভরশীল হই আমরা। এরা সবাই মিলেই গড়ে তোলে আমাদের পরিবেশকে।

মানুষ নিজেকে বিকশিত করে প্রাকৃতিক পরিবেশের আনুকূল্যে। অর্থাৎ ৪ মানুষের জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। প্রকৃতি থেকেই মানুষ সংগ্রহ করে বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান-জল, বায়ু, মাটি, পাহাড়, নদী, আলো ইত্যাদি থেকে। ঋতুপরিবর্তন বা দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি নানাভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। অরণ্য, পর্বত, মরুভূমি বা সাগর-নদীর মাধ্যমে আমরা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হই; তা যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে, তেমনই মনোজগতের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই সমাজের নানা ঘাতপ্রতিঘাত আমাদের সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে সমাজের নানা কাজকর্মে যুক্ত হয়। ন্যায়নীতি বা মূল্যবোধের শিক্ষা সামাজিক পরিবেশ থেকেই সংগৃহীত হয়। তাই সকলে চেষ্টা করেন সুস্থসুন্দর স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশে তাদের সন্তানদের বড়ো করতে। কারণ সমাজের মধ্যে থেকেই মানুষকে বড়ো হতে হয়। তাই সামাজিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবজীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে।

যে পরিবেশ থেকে কোনো মানুষ একজন সুসভ্য নাগরিক হয়ে ওঠার প্রেরণা লাভ করে থাকে, তা হল তার সাংস্কৃতিক পরিবেশ। আমাদের জীবনের একটা বড়ো দিক হল আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা। সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে গেলে মানুষের মূল্যবোধও হারিয়ে যায়। সুস্থসুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনকে গড়ে দিতে পারে। বিদ্যালয় ও সমাজের সাংস্কৃতিক পরিবেশ শিক্ষার্থীকে সুস্থ সংস্কৃতিসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

মানবজীবনে দারুণভাবে প্রভাব রাখে পারিবারিক পরিবেশ। শিশুর শিক্ষা শুরুই হয় তার পরিবার থেকে। পরিবার হল মানুষের প্রাথমিক শিক্ষালয়। পরিবার থেকেই ব্যক্তি তার জীবনকে গড়ে তোলার সম্পদ আহরণ করে। মা, বাবা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকেই শিশু আচার-আচরণ, ন্যায়-অন্যায়, অন্যদের শ্রদ্ধা-ভক্তি করা ইত্যাদি শিক্ষণীয় বিষয়গুলি শিক্ষা নেয়। তাই ব্যক্তিমানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে পারিবারিক পরিবেশ।

পরিবেশ থেকে মানুষ বেঁচে থাকার নানা উপকরণ সংগ্রহ করে। তাই মানুষেরও দায়বদ্ধতা থাকে পরিবেশকে সুস্থসুন্দর রাখা। বর্তমানে আমরা নানাভাবে পরিবেশকে দূষিত করে চলেছি। বুঝেও না বোঝার ভান করে পরিবেশকে নষ্ট করছি। তবে মানুষই পারে এই পরিবেশকে আবার দূষণমুক্ত ও সুন্দর করে তুলতে। মানুষকে আন্তরিকতার সঙ্গে পরিবেশের প্রতি দরদি হতে হবে।

পরিবেশের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সাধারণ জনগণের মধ্যে পরিবেশ চেতনার প্রসার ঘটাতে হবে। যথেচ্ছভাবে গাছকাটা বন্ধ করতে হবে, বৃক্ষরোপণ বা পরিবেশের সৌন্দর্যায়ন করতে হবে, দূষণমুক্ত রাখার পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবে পরিণত করতে হবে। জনগণকে মনে রাখতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে হলে সবাই মিলে বর্তমান পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে তোলায় মন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, পরিবেশ নানাভাবে মানবসমাজকে প্রভাবিত করছে, তাকেও সুস্থসুন্দর রাখার জন্য আমাদেরকেই পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top