প্রাচীন চিনে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

প্রাচীন চিনে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের কিছু আগে চিনে জ্যোতিষচর্চা শুরু হয়। সম্রাট হুয়াং তি জ্যোতিষীয় পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন (খ্রিস্টপূর্ব ২৬৫০ অব্দ)। এই মানমন্দিরে নিয়মিত রাজজ্যোতিষীরা সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহদের পর্যবেক্ষণ করে লিপিবদ্ধ করে রাখত। মানমন্দিরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নির্ভুল পঞ্জিকা প্রণয়ন। প্রায় তিন শতক পরে সম্রাট ইয়াও ক্রান্তিবিন্দু ও অয়নবিন্দু নির্ভুলভাবে গণনার জন্য রাজজ্যোতিষীদের নির্দেশ দেন।
(1) মাস ও বছর গণনা পদ্ধতি: চিনে প্রথমদিকে ৩০ দিনে মাস ও ৩৬০ দিনে বছর ধার্য করা হত। তবে পরবর্তীকালে সম্রাট ইয়াও-এর রাজত্বকাল থেকে ৩৬৫ দিনে বছর গণনা করা শুরু হয়। এ ছাড়া ১৯ বছরে (৩৬৫ দিনে বছর) এক দীর্ঘ বছর এবং এক দীর্ঘ বছরে ২৩৫ চান্দ্রযুতির আবিষ্কার ছিল চৈনিক জ্যোতিষবিদ্যার উল্লেখযোগ্য দিক।
(2) গ্রহ সম্পর্কিত জ্ঞান: চিনের গ্রহসংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের ইতিহাসও যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। জানা যায়, সম্রাট চৌন-সু’র আমলে একবার বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের সংযোগ ঘটেছিল। কেউ কেউ মনে করেন, পাঁচ গ্রহের সংযোগের এই বিরল ঘটনাটি মিথ্যা নাও হতে পারে। এর পাশাপাশি চৈনিক জ্যোতির্বিদরা গ্রহণ নির্ণয়ের কৌশল সম্পর্কেও অবগত ছিলেন। শোনা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ২১৫৯ অব্দে রাজজ্যোতিষী হি ও হো, পূর্বাহ্ন অর্থাৎ সকালবেলায় সূর্যগ্রহণের ঘোষণা করতে না পারার অপরাধে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।
(3) ধূমকেতুর ধারণা: ধূমকেতু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় চিনের ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব ৬১১ অব্দ থেকে। ধূমকেতু যে পুনরায় ফিরে আসে এই সত্যতা আধুনিক জ্যোতির্বিদরা চৈনিকদের ধারণা থেকেই লাভ করেছিল। ধূমকেতুর পুচ্ছও যে সূর্যের বিপরীতে থাকে, তারও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় চৈনিক বিবরণে।
(4) নতুন নক্ষত্র বা নোভার ধারণা: চৈনিক বিবরণে নতুন নক্ষত্র বা নোভার আলোচনা রয়েছে। এই নোভার নাম কো-সিং (Ko-hsing) বা অতিথি তারা। এই তারা প্রথম আত্মপ্রকাশের পর কীভাবে তার উজ্জ্বলতা হ্রাস পেতে থাকে তারও বর্ণনা রয়েছে চৈনিক রচনায়।
(5) অন্যান্য: শোনা যায়, প্রাচীন যুগে জনৈক চিনা শাসক বারোটি রাশিচক্রের নামকরণ করেন এবং এতে অগ্নি, বায়ু, জল ইত্যাদিকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে চিনা জ্যোতিষশাস্ত্রে জন্মমুহূর্তে চন্দ্র, সূর্য বা গ্রহের অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা স্থান পায়নি। এখানে মনে করা হয় যে, জ্যোতিষশাস্ত্র দর্শনশাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।