ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর class 11

Table of Contents

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর
ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

১। ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটির বর্ণনা দাও

২। “অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস।”—কার উক্তি? কার উদ্দেশে এই উক্তি? কোন্ ঘটনার প্রেক্ষিতে এই উক্তি?

৩। “কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ।”- ‘পরের ছেলে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? উক্তিটি কার? বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?

৪। “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”-তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

৫। ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে ফটিকের মায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

৬। ছুটি গল্প অবলম্বনে ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

৭। ছুটি গল্পে ফটিকের পরিণতিতে তার মামির ভূমিকা কতখানি?

৮। ছুটি গল্প অবলম্বনে ফটিকের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

৯। কলকাতা শহরে ফটিকের স্কুলজীবন কেমন ছিল তা বর্ণনা করো

১০। ছোটোগল্প হিসেবে ‘ছুটি’ কতখানি সার্থক হয়ে উঠেছে?

১১। ‘ছুটি’ গল্পে প্রকৃতির ভূমিকা কতখানি তা আলোচনা করো

ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর class 11

“খেলার আরম্ভেই এইরূপ আশাতীত ফল লাভ করিয়া অন্যান্য বালকেরা বিশেষ হৃষ্ট হইয়া উঠিল, কিন্তু ফটিক কিছু শশব্যস্ত হইল।”-বক্তা কে? কোন্ খেলার কথা বলা হয়েছে? খেলার ফল কী হয়েছিল? ফটিক শশব্যস্ত হয়ে উঠল কেন?

বক্তা : উদ্ধৃত অংশের বক্তা প্রবাদপ্রতিম ছোটোগল্পকার স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

খেলা : ফটিক ও তার বন্ধুদলের খেলার কথা আলোচ্যাংশে বলা হয়েছে। নদীর ধারে নৌকার মাস্তুল নির্মাণের জন্য পড়ে থাকা মস্ত এক শাল কাঠের গুঁড়িকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের খেলা।

খেলার ফল: নদীর ধারে পড়ে থাকা শাল গাছের গুঁড়িটাকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফটিক ও তার বন্ধুরা। যে ব্যক্তি এই কাঠের মালিক, তিনি যে বিস্মিত, বিরক্ত ও অসুবিধার সম্মুখীন হবেন, তা বুঝেও ফটিকরা এই খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কোমর বেঁধে সবাই যখন এই কাজে মেতে ওঠে, তখন বাধ সাধে ফটিকের ছোটো ভাই মাখন। সে চট করে গুঁড়ির উপর উঠে বসে। কোনোভাবেই তাকে সেখান থেকে নড়ানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, গুঁড়ির উপর বসে থাকা মাখনকে নিয়েই গুঁড়িটাকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। কিন্তু, তাতে মাখন গুঁড়ি থেকে ভূপতিত হয়। সেসময় মাখনের গাম্ভীর্য ও গৌরব ধুলোয় লুণ্ঠিত হতে দেখে ছেলেরা বেশ আনন্দ পায়। কারণ, খেলার এই ফলাফল তাদের কাছে আশাতীত ছিল।

ফটিকের শশব্যস্ত হওয়ার কারণ: মাখনের মাটিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় ছেলেরা আনন্দ লাভ করলেও, ফটিক শশব্যস্ত হয়ে উঠল। দুরন্ত ফটিকের সুশীল শান্ত ভাই মাখন। কাজেই মায়ের সমর্থন ও পক্ষপাত সবসময় মাখনের দিকেই থাকে। মাখন আহত হলে, বাড়িতে ফিরে মায়ের বকুনি ফটিককে খেতে হবে। এই অনিবার্য ঘটনার কথা ভেবেই ফটিক শশব্যস্ত হয়ে উঠল।


Class 11 Chuti Golpo Question Answer

“এমন সময় একটা বিদেশী নৌকা ঘাটে আসিয়া লাগিল।” কোন্ সময়? সেই সময়ের আগে কী ঘটেছিল? নৌকা ঘাটে পৌঁছোনোর পর কী ঘটল?

সময় : বাংলা সাহিত্যের সার্থক ছোটোগল্পের স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। এখানে ফটিক ও তার বন্ধুদের খেলা ভেঙে যাওয়ার সময়ের কথা বলা হয়েছে।

আগের ঘটনা : বালকদের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর ভাবনা অনুযায়ী নদীর ধারে পড়ে থাকা প্রকাণ্ড শালকাঠকে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছিল ফটিকের বন্ধুরা। তাতে মাখন বাধ সাধে। সে হঠাৎ এসে শালের গুঁড়ির উপর বসে পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে ছেলেরা ঠিক করে নতুন এক খেলার। তারা ঠিক করে মাখন সমেত শালকাঠের গুঁড়িটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। কিন্তু, গুঁড়ি সামান্য এগোতে না এগোতেই পিছনে ঠেলার আঘাতে মাখন মাটিতে পরে যায়। এতে ছেলেরা বেশ আনন্দ পায়। কিন্তু মাখন সেই মুহূর্তে, ভূমিশয্যা ছেড়ে ফটিকের উপর গিয়ে পড়ে ও অন্ধভাবে তাকে মারতে থাকে। ফটিকের নাকে-মুখে আঁচড় কেটে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথে চলে যায় মাখন। ফলে তাদের খেলা ভেঙে যায়। এরপর ফটিক গোটাকতক কাশ তুলে একটি নৌকার গলুইয়ের উপর বসে চুপচাপ কাশের গোড়া চিবোতে শুরু করে। ঠিক সেই সময় এক বিদেশি নৌকা ঘাটে এসে দাঁড়ায়।

নৌকা ঘাটে পৌঁছোনোর পরের ঘটনা: নৌকা ঘাটে পৌঁছনোর পর, এক অর্ধবয়সি ভদ্রলোক, যাঁর কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল, তিনি বেরিয়ে আসেন নৌকা থেকে। সামনে ফটিককে পেয়ে জিজ্ঞাসা করেন-“চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।” ফটিক কাশের ডাঁটা চর্বণ করতে করতে উত্তর দেয়, “ঐ হোথা”। আসলে ফটিক এমনভাবে দিক নির্দেশ করে যা কারওর পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে ফটিক উত্তর দেয় “জানি নে।” বাধ্য হয়ে লোকটি অন্যের সাহায্য অবলম্বন করে চক্রবর্তীদের গৃহের সন্ধানে চলে যান।


ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Class 11

“কী হচ্ছে তোমাদের।”- কার উক্তি? বক্তার পরিচয় দাও। তিনি এতদিন কোথায় ছিলেন? তিনি আসার পর ফটিকের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

বক্তা : বাংলা সাহিত্যের ছোটোগল্পের সার্থক স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের বিশ্বম্ভরবাবুর উক্তি এটা।

বিশ্বম্ভরবাবুর পরিচয় : গল্পের প্রধান কিশোর চরিত্র ফটিক চক্রবর্তীর মামা হলেন বিশ্বম্ভরবাবু।

এতদিন যেখানে ছিলেন: কর্মসূত্রে বিশ্বম্ভরবাবু এতদিন পশ্চিমে ছিলেন। তবে তাঁর বসত ভিটে কলকাতায়।

ফটিকের বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত: কর্মসূত্রে পশ্চিমে থাকার দরুন বিশ্বম্ভরবাবু তার ছোটোবোনের কোনো খোঁজখবর এতদিন নিতে পারেননি। বোনের দুই সন্তানের জননী হওয়া, স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বম্ভরবাবু আসতে পারেননি। বহুকাল পর দেশে ফিরে এসে নিতান্ত কতর্য্যের খাতিরে বোনকে দেখতে এসেছেন। হঠাৎই ফিরে যাওয়ার দু-একদিন পূর্বে বোনের ছেলেদের পড়াশোনা ও মানসিক উন্নতি সম্পর্কে কৌতূহলী হন বিশ্বম্ভরবাবু। সেসময় ফটিকের অবাধ্যতা, পড়াশোনায় অমনযোগী উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কথা শুনে বিশ্বম্ভরবাবু বোনকে প্রস্তাব দেন ফটিককে তিনি কলকাতায় নিজের কাছে নিয়ে যাবেন এবং তার শিক্ষার দায়ভার গ্রহণ করবেন। ফটিকের মা প্রস্তাব শোনামাত্র দাদার কথায় রাজি হয়ে যান। ফটিকও তার মামা ও মায়ের প্রস্তাবে সাগ্রহে সম্মত হয়ে কলকাতায় যেতে রাজি হয়।


ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

“…যাত্রাকালে আনন্দের ঔদার্যবশত তাহার ছিপ, ঘুড়ি লাটাই সমস্ত মাখনকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ভোগদখল করিবার পুরা অধিকার দিয়া গেল।”-কার কথা বলা হয়েছে? সে কোথায় যাত্রা করে? তার যাত্রার কারণ কী? উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উদ্দিষ্ট: মানব মনস্তত্বের রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের আলোচ্য অংশে ফটিকের কথা বলা হয়েছে।

ফটিকের যাত্রা: ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য কলকাতায় নিজ বাসগৃহে নিয়ে যেতে চান। এখানে ফটিকের সেই মামার বাড়িতে যাত্রার কথাই বলা হয়েছে।

যাত্রার কারণ : বিশ্বম্ভরবাবু বহুদিন কর্মসূত্রে পশ্চিমে ছিলেন। ইতোমধ্যে ফটিকের মায়ের দুই সন্তান জন্মায় এবং অনতিবিলম্বেই ফটিকের মা বিধবা হন। তাঁর অভাবের সংসারে অবলম্বন ওই দুই ছেলে। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বিশ্বম্ভরবাবু বহুদিন বোনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারেননি। তাই কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে বোনের বাড়ি এসে তাঁর ছেলেদের পড়াশোনা ও মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন। সেসময় তিনি জানতে পারেন ফটিক অসম্ভব উচ্ছৃঙ্খল ও লেখাপড়ায় অমনোযোগী; বিপরীতে মাখন সুশীল স্বভাবের ও বিদ্যানুরাগী। ফটিকের কথা শোনার পর কত্যের খাতিরে বিশ্বম্ভরবাবু প্রস্তাব দেন তাকে নিয়ে কলকাতা শহরে নিজের কাছে রাখবেন ও তার যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন। তাই কলকাতায় মামার বাড়িতে গিয়ে থাকা ও লেখাপড়া শেখার জন্যই ফটিকের মামার বাড়িতে যাত্রা।

তাৎপর্য: কলকাতায় যাওয়ার কথা শুনে ফটিক আনন্দে নেচে

ওঠে। উত্তেজনায় রাতে তার ঘুম আসে না। কলকাতায় যাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা ফটিক তাই আবেগের বশে ভাই মাখনকে তার সামান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্থাৎ ছিপ, ঘুড়ি, লাটাই সবটুকু দিয়ে যায়। ‘পুত্রপৌত্রাদিক্রমে’ অর্থাৎ ফিরে এসেও সে তার জিনিস দাবি করবে না, এমন সম্ভাবনার কথাই এখানে বোঝানো হয়েছে। অচেনা-অজানা কলকাতা শহর ফটিকের মনকে এতটাই আনন্দের হাতছানি দিয়ে ডেকেছে যে তার মনে ফুটে উঠেছে এক অপার ঔদার্য। উদারতাবশেই ফটিক মাখনকে তার ভালোবাসার সবটুকু উজার করে দিয়ে অনন্ত জীবনপথে পাড়ি দেয়।


ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11

“সেও সর্বদা মনে মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না;”-এখানে ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? সে কোথাও কেন ঠিক খাপ খাচ্ছিল না? ১+৪

উদ্দিষ্ট: বাংলা ছোটোগল্পের স্বার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। গল্পের মূল চরিত্র কিশোর ফটিককে এখানে ‘সে’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

খাপ না খাইয়ে নিতে পারার কারণ : গ্রামের চিরপরিচিত পরিবেশ ছেড়ে দুরন্ত দামাল ফটিক মামার সঙ্গে কলকাতায় আসে। মাখনকে তার স্থাবর-অস্থাবর ঘুড়ি, লাটাই ভালোবেসেই দান করে আসে ফটিক। মামার প্রস্তাবে শহরে আসার সময় ফটিক বুঝতে পারেনি শহর জীবন তার কাছে কণ্টকাকীর্ণ হয়ে উঠবে। মামির সংসারে ঢুকতে ঢুকতেই ফটিক গলগ্রহ হয়ে ওঠে। এই অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধি মামি কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না। ফলে শুরু হল অকথ্য মানসিক অত্যাচার, বঞ্চনা ও তিরস্কার। লেখকের ভাষায় “তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না।” মায়ের স্নেহ ও প্রকৃতির অনাবিল আনন্দে বড়ো হয়ে ওঠা ফটিক মামির অনাদর, অবহেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সে ক্রমেই হারিয়ে ফেলছিল। এর জন্য স্কুলে 4 মাস্টারমশাইদের বেদম প্রহার ও তিরস্কারও তাকে সহ্য করতে হয়েছে। এমতাবস্থায় পড়াশোনার প্রতি অবহেলায় একদিন বই হারিয়ে ফেললে, শিক্ষকের কাছে যেমন তাকে তিরস্কৃত হতে হয়, তেমনি মামির কাছেও ভর্ৎসিত হতে হয়। মামাতো ভাইরাও ফটিককে ‘ভাই’ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করত। ফটিকের প্রতি স্কুলের বন্ধুদের অবহেলা, শিক্ষকদের তিরস্কার মামাতো ভাইদের মনে আনন্দ দিত। কলকাতার জীবনে ঠিক এভাবেই প্রবল অবহেলা ও লাঞ্ছনার কারণে হাঁফিয়ে উঠেছে ফটিক। এখানে মনে পড়ে যায় ‘মানসী’ কাব্যের ‘বধূ’ কবিতার বধূটির কথা। ফটিকেরও সেই একই উপলব্ধি। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে চির অচেনা পরিবেশে ফটিকের মনে হয়েছে পৃথিবীর কোথাও হয়তো সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না।


Chuti Class 11 Question Answer

“অতএব, এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর-কোনো অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক।”-কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

প্রসঙ্গঃ গ্রাম বাংলায় বড়ো হয়ে ওঠা দুরন্ত, দামাল ফটিককে দস্যিপণা ও উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের জন্য তার মা মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চায়। মামার স্বভাবসিদ্ধ ঔদার্যে, স্নেহে ও ভালোবাসায় আপ্লুত ফটিক মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে কলকাতায় মামার বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তবে যে স্নেহ ও ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষায় ফটিক ঘর ছেড়েছিল, মামার বাড়িতে মামির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই তা দূরীভূত হয়ে যায়। ‘মামার বাড়িতে ফটিক অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধির দায় গ্রহণ করে। মামির কাছে হয়ে উঠল গলগ্রহ। প্রতিনিয়ত তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর কারণে মামির তিরস্কার ও গঞ্জনা ফটিকের জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ আর মামার বাড়িকে করে তোলে নরকসম।

তাৎপর্য: বয়ঃসন্ধিকালের ফটিকের প্রয়োজন ছিল সামান্য স্নেহ ও ভালোবাসা যা অনায়াসেই তাকে বদলে দিতে পারত মাখনের মতো সুশীল স্বভাবে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্যে স্নেহ ও ভালোবাসা তো দুরস্ত, বরং জুটল মামির তিরস্কার ও গঞ্জনা। গ্রাম বাংলার নির্মল পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠা ফটিকের আবদার অভিমান ও অভিযোগের একমাত্র স্থান ছিল তার মা। অথচ মামার সামান্য স্নেহের স্পর্শ পেয়ে সেই মাকে ছেড়ে ফটিক দূর শহরে পাড়ি দিতে এতটুকু দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। উন্মুক্ত গ্রাম ছেড়ে প্রাণহীন নগরজীবনকে সে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু মামির ব্যবহারে ও মামাতো ভাইদের আচরণে শহরের প্রতি তার সমস্ত ভালোবাসা দূরীভূত হয়ে যায়। অপরিচিত কলকাতা শহর ছেড়ে সে ফিরতে চায় গ্রামের রাঙামাটির পথে। বদ্ধ শহর তাকে দেয় নরক যন্ত্রণা। অপার মাতৃস্নেহ যে কী, সে অনুভব করে মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে এসে। তাই ফটিক ছুটি চেয়েছে, তার মাতৃভবনে ফেরার জন্য ছুটি।


ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

“দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।”-কার গ্রামের কথা মনে পড়ত? কেন তার গ্রামের কথা মনে পড়ত?

মার গ্রামের কথা মনে পড়ত: বাংলা ছোটোগল্পের স্বার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। গল্পের মূল চরিত্র কিশোর ফটিকের তার গ্রামের কথা মনে পড়ত।

মনে পড়ার কারণ : পল্লি প্রকৃতির বুকে বড়ো হয়ে ওঠা ফটিক মা ও মামার ইচ্ছানুযায়ী বেছে নেয় শহর কলকাতার জীবন। উদার মুক্ত আকাশ, দিগন্তবিস্তৃত খোলামাঠে যে ফটিক সারাদিন ছুটে বেড়াত, সে এসে বন্দি হল শহরের চার দেয়ালের মধ্যে, নদীর তীরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলে বেড়ানোই ছিল ফটিকের একমাত্র সাধ। প্রকান্ড একটা ঢাউস ঘুড়ি নিয়ে আকাশে ওড়ানোর মজাই আলাদা। যখন-তখন সরু বাঁকা নদীটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটার মধ্যে ছিল এক অনাবিল আনন্দ। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে কখনও উপদ্রব কখনো-বা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করা ফটিকের জীবনযাপনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। এই সবকিছু বাধাপ্রাপ্ত হল শহর কলকাতায় এসে। মামার বাড়িতে মামির অনাদর আর মামাতো ভাইদের অবহেলা ফটিকের মনোবল ভেঙে তার মনকে করে তুলল যন্ত্রণাদীর্ণ। এক লহমায় তার মন ছুটে চলে যেতে চাইত তার মায়ের কাছে। কারণ, মা যতই ‘অত্যাচারিণী অবিচারিণী’ হোক তবুও তার কাছে ছিল অপার স্নেহ। তাই শহরে বন্দি জীবনে আবদ্ধ ফটিকের মন ছুটত গ্রামের দিকে।


ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11

“স্কুলের ছুটি হোক।”- কার উক্তি? কাকে উদ্দেশ করে উক্তি? স্কুলের কোন্ ছুটির কথা বলা হয়েছে? স্কুলের ছুটি হলে কার, কোন্ আশা পূর্ণ হত?

বক্তা : বিশ্ববরেণ্য লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে মামার বাড়িতে অবহেলায় থাকা ফটিক মায়ের কাছে যেতে চাইলে ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন।

উদ্দিষ্ট: বিশ্বম্ভরবাবু আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন তার ভাগ্নে ফটিকের উদ্দেশে।

উদ্দিষ্ট ছুটি : স্কুলে কার্তিক মাসে পুজোর ছুটি পড়ে। আলোচ্য অংশে সেই ছুটির কথা বলা হয়েছে।

স্কুলের ছুটি ও ইচ্ছাপূরণ: পল্লি জীবন থেকে শহর জীবনে এসে ফটিক তার বন্দিত্ব মেনে নিতে পারেনি। গণ্ডিবদ্ধ জীবন থেকে খানিক মুক্তি চেয়েছে সে। উপরন্তু মামার বাড়িতে মামির অবহেলা, অনাদর ও তিরস্কার তার শহর জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছিল। স্বভাবতই পড়াশোনায় মন বসেনি তার। শিক্ষকদের তিরস্কার ও বেত্রাঘাত ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার কোনো খেলার সঙ্গী ছিল না। তাই ছেলেদের যখন খেলার ছুটি হত তখন দ্বিপ্রহরে উদাস চোখে তাকিয়ে ছেলেমেয়েদের খেলা দেখত ফটিক। তখনই তার মন অধীর হয়ে উঠত গ্রামের জন্য। মাকে দেখার ইচ্ছায় ব্যাকুল হয়ে উঠত তার কিশোর হৃদয়। তাই কার্তিক মাসে পুজোর ছুটি পড়লে সে গ্রামে ফিরে যাবে এই আশায় দিন গুণতে থাকে। তবে পুজোর ছুটি ঢের দেরি বলে সে উদাস হয়ে পড়ে।


Class 11 Chuti Question Answer

“পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না।”- ‘পরদিন’ বলতে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? ফটিক কোথায় গেল? তাকে কী অবস্থায় পাওয়া গেল?

পরদিনঃ বিশ্ববরেণ্য লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোটোগল্প ‘ছুটি’-তে স্কুল থেকে ফিরে যে রাতে ফটিকের মাথা ব্যথা করতে লাগল এবং গা শিরশির করে জ্বর আসল তার ‘পরদিন’ বা পরবর্তী দিনের কথা বলা হয়েছে প্রশ্নোক্ত অংশে।

ফটিকের গন্তব্য: স্কুল থেকে ফিরে প্রবল মাথা ব্যথা ও জ্বর অনুভব করলে ফটিক অচিরেই ভেবে নেয় তার ‘ব্যামো’ মামির কাছে অনর্থক উপদ্রব হবে। মামি তার এই তীব্র শারীরিক অসুস্থতাকে অনাবশ্যক জ্বালাতনের চোখে দেখবেন। তাই ফটিক মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার বাসনা নিয়ে মামার বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়।

ফটিককে সে অবস্থায় পাওয়া যায়: ফটিক যে দিন মামার বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়, সেদিন রাত থেকে মুশলধারে বৃষ্টি নেমেছিল। ফলে সম্ভাব্য সমস্ত স্থানে খোঁজ করতে গিয়ে লোকজনকে অনর্থক অনেক ভিজতে হয়। অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দেন। সারাদিন ফটিকের কোনো সন্ধান না পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার সময় একটি গাড়ি এসে বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। দুজন পুলিশের লোক গাড়ি থেকে ফটিককে ধরাধরি করে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর কাছে দিয়ে যায়। সর্বাঙ্গ কর্দমাক্ত, আপাদমস্তক ভিজে, চোখমুখ রক্তবর্ণ অবস্থায় ফটিককে পাওয়া গেল। প্রবল জ্বরে তার গোটা শরীর কাঁপছে তখন। অবস্থার গুরুত্ব বিচার করে ও ফটিকের অবস্থা দেখে বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করে তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন।


ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11 | Class 11 Chuti QUESTION ANSWER

“পরদিন দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যালফ্যাল্ করিয়া ঘরের চারিদিকে চাহিল।” -‘পরদিন’ বলতে কোন্ দিন? ফটিক কার প্রত্যাশায় কেন ফ্যালফ্যাল করে চাইল?

‘পরদিন’: বিশ্ববরেণ্য লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোটোগল্প ‘ছুটি’-তে একদিন স্কুল থেকে ফিরে প্রবল মাথা ব্যথা ও জ্বর অনুভব করলে ফটিক ভেবে নেয় তার অসুস্থতা মামির কাছে অনর্থক উপদ্রব হিসেবে প্রতিপন্ন হবে। তাই অসুস্থ অবস্থাতেই মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মামার বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয় ফটিক। বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশের সাহায্যে প্রচুর খোঁজাখুঁজি করে জ্বরগ্রস্ত, অসুস্থ ফটিককে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক এলে চিকিৎসা করান। সেদিন ফটিক তীব্র জ্বরের প্রলাপে মামাকে জিজ্ঞাসা করে-“মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি।” এই ঘটনার পরের দিনের কথা আলোচ্য উক্তিতে বর্ণিত হয়েছে।

ফটিকের প্রত্যাশা ও ফ্যালফ্যাল করে তাকানোর কারণ : ফটিক পাঠে অমনোযোগী কিংবা অবাধ্য হলেও বোধশক্তিহীন ছিল না। তার অসুস্থতা মামির কাছে অনর্থক উপদ্রব মনে হবে তা সে অনায়াসেই বুঝতে পেরেছিল। ফলে এই অবস্থায় সে অনুভব করে অসুস্থতার সময় এই সুবিশাল পৃথিবীতে একমাত্র তার আশ্রয় নিজের মা। বাল্যকাল থেকে মায়ের স্নেহবিদ্ধ স্পর্শ বঞ্চিত হলেও পৃথিবীর অন্য কোথাও, অন্য কারওর কাছ থেকে সেবা প্রত্যাশা ফটিক করেনি। তাই অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সে চেয়েছে মাতৃস্পর্শ। সুতরাং, মায়ের আগমনের প্রত্যাশাতেই বিহ্বল দৃষ্টিতে ঘরের চারদিকে চেয়ে থাকত ফটিক।

‘বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না।’- কার সম্বন্ধে এই উক্তি? উক্তিটির মধ্যে লেখকের যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করো।

বক্তাঃ বিশ্বসাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্পে রোগশয্যায় সংজ্ঞাহীন ফটিক সম্বন্ধে উক্তিটি করেছেন স্বয়ং লেখক।

লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি : মাটির পৃথিবীতে লালিত ফটিক শহরের ইট-কাঠের স্তূপের মধ্যে ক্রমশ শুষ্ক হতে থাকল। প্রকৃতির ঔদার্য থেকে বঞ্চিত হয়ে, মমত্বের আবাল্যভূমি থেকে উৎপাটিত হয়ে ফটিকের মনের মৃত্যু হয়। সে পাড়ি দেয় অকূল সমুদ্রের পথে। গৃহবন্দি, ঘরবন্দি ফটিক মৃত্যুতেই খুঁজে নেয় নিরুদ্দেশের যাত্রাপথ। কূলহীন সমুদ্র তাকে হাতছানি দেয় অনিশ্চিতের পথে পা বাড়াতে। মৃত্যুতেই সে পায় সকলের স্নেহ ও ভালোবাসা। জীবনের আনন্দময় স্মৃতিগুলি জ্বরতপ্ত প্রলাপের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠে বঞ্চনার, যন্ত্রণার অমোঘ উচ্চারণ। মৃত্যুতেই সে সকলকে মুক্তি দেয় ও নিজেও মুক্তি পায়। মামার বাড়ি আসার সময় খালাসিদের মুখে জল মাপার শব্দ শুনেছিল ফটিক। রোগশয্যায় অচেতন ফটিক যেন কিছুতেই জীবনের তল খুঁজে পায়নি। তাই নৌকার খালাসিদের মতোই অনন্ত জীবন সমুদ্রে পাড়ি দিতে দিতে সে তল খুঁজতে চায়। বালক ফটিক এ কথা বোঝে না যে সে যে অনন্ত সমুদ্রের পথে যাত্রা করেছে সে সমুদ্রের তল কিছুতেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। চিরবিদায়ের তথা ছুটির ডাক শুনে মৃত্যুলোকের অভিমুখে অনন্ত যাত্রাপথে অন্তহীন জীবনসমুদ্রে তরি বাইছে ফটিক। অবিনশ্বর আত্মা আর অন্তহীন জীবনসমুদ্র-এরা যে সমার্থক। তাই অনন্ত ছুটির নিমন্ত্রণে ফটিকের চিরবিদায়ের মুহূর্ত গল্পকার রবীন্দ্রনাথ বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top