সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো

সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো

সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো
সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো

রোমান রাষ্ট্রচিন্তার একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি হিসেবে সিসেরোর (Cicero, খ্রিস্টপূর্ব ১০৬-৪৩ অব্দ) নাম একবাক্যে উচ্চারিত হয়। তাঁর পুরো নাম হল- মার্কাস টুল্লিয়াস সিসেরো (Marcus Tullius Cicero)। 

পরিচয়

রোমের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আরপিনাম (Arpinum)-এ ১০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিসেরোর জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন রোমের অশ্বারোহী বাহিনীর একজন অভিজাত সদস্য। সিসেরো মূলত ছিলেন একজন রাজনৈতিক নেতা। তবে সুবক্তা এবং আইনজ্ঞ হিসেবেও তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিল। ম্যাক্সি (Maxey)-র মতে, ‘রাষ্ট্রনীতির দার্শনিক হিসেবে নয়, সিসেরো একজন সুবক্তা এবং রাষ্ট্রনেতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

রাজনৈতিক সংকট

সিসেরো ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মাত্র ৩১ বছর বয়সে স্থানীয় শাসকপদে (কোয়েস্টর) নিযুক্ত হন তিনি। এরপর ৪৩ বছর বয়সে উন্নীত হন রোমের সর্বোচ্চ শাসক কনসাল পদে (৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। এই সময় তিনি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ক্যাটিলিন বিদ্রোহীদের (Lucius Sergius Catilina বা Catiline- এর অনুগামীবৃন্দ) বিনা বিচারে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। এজন্য সিসেরোকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য এক বছরের মধ্যেই (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮-৫৭ অব্দ) তিনি দেশে ফেরার অনুমতি পান।

কিন্তু জুলিয়াস সিজারের (Julius Caesar) হত্যাকান্ডের পর পুনরায় তিনি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সেসময় মার্ক অ্যান্টনির (Mark Antony) বিরুদ্ধে সিসেরো অক্টাভিয়ানকে (Octavian) সমর্থন জানান। কিন্তু রাজনীতির জটিল তত্ত্ব তাঁর অজানা ছিল। শেষপর্যন্ত অ্যান্টনি এবং অক্টাভিয়ান এক গোপন সমঝোতা দ্বারা সিসেরোকে হত্যা করেন (৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। এইভাবে রাজনীতির ঘোলা জলে পড়ে রোমের একজন প্রতিশ্রুতিবান প্রতিভার অকাল বিনাশ ঘটে।

গ্রন্থ রচনা

রোমের শ্রেষ্ঠ বাগ্মী এবং রাজনীতিবিদ সিসেরোর রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি প্লেটো, অ্যারিস্টটল, পলিবিয়াস ও স্টোয়িকদের মতবাদ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। De Republica (ইংরেজিতে On the Republic) এবং De Legibus (ইংরেজিতে On the Laws) গ্রন্থ দুটি থেকে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। সম্ভবত প্লেটোর অনুকরণে সিসেরো তাঁর গ্রন্থের এরূপ নামকরণ করেছেন। কারণ, প্লেটোরও একই নামের দুটি গ্রন্থ ছিল। তাছাড়া প্লেটোর পদ্ধতিতেই কথোপকথনের ভিত্তিতে সিসেরো তাঁর মতপ্রকাশ করেছেন।

সিসেরোর রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য

  • সিসেরোর রাষ্ট্রচিন্তা কোনও ছোটো নগররাষ্ট্র বা একক রাষ্ট্রের ধারণাকে লক্ষ্য হিসেবে রেখে পরিকল্পিত হয়নি। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রে ছিল এক বিশ্বরাষ্ট্রের (Great Commonwealth) ধারণা। 
  • তিনি কেবল নৈতিকতা বা ন্যায়বোধের শক্তিতে আস্থা রাখেননি। সিসেরো বিশ্বাস করতেন যে, মানবসমাজের কল্যাণ নির্ভর করে আইনসম্মতভাবে গঠিত ও পরিচালিত সমাজসংগঠনের উপর। 
  • বিশ্বরাষ্ট্রের কল্পনা থাকলেও সিসেরো অতিকেন্দ্রিকতার বিরোধী ছিলেন। মানবজীবনের স্বাতন্ত্র্য, স্বাধীনতা বা বৈচিত্র্যকে তিনি অস্বীকার করেননি।
  • সিসেরোর রাষ্ট্রচিন্তায় যুক্তি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁর মতে, মানুষের চিন্তাভাবনাকে যুক্তির পথে পরিচালিত করতে পারলে তা মানুষ ও সমাজ উভয়ের পক্ষেই কল্যাণকর হয়ে উঠবে। 
  • তাছাড়া মানুষের আবেগ ও ভালোবাসা রাজনীতির ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে বলে তিনি মনে করেন। জগৎ ও জীবনে এই গুণাবলিকে অস্বীকার করা যায় না।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top