ফাস্ট পাস্ট দ্য পোস্ট ব্যবস্থার সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো

ফাস্ট পাস্ট দ্য পোস্ট ব্যবস্থার সুবিধা
ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট ব্যবস্থা অথবা সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি অন্যায্য বলে মনে হলেও এটি অধ্যয়ন করলে এর একাধিক সুবিধাকে চিহ্নিত করা যায়। এই সুবিধাগুলির আলোচনা আবশ্যক। সুবিধাগুলি হল-
(1) সরলতা
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির সবথেকে বড়ো সুবিধা হল এই পদ্ধতিতে কোনোরূপ জটিলতা নেই। এই পদ্ধতি এতটাই সরল প্রকৃতির হয় যে, সাধারণ ভোটার অর্থাৎ যাদের মধ্যে রাজনীতি বা নির্বাচন সম্পর্কে কোনো গভীর জ্ঞান নেই, তারাও সহজে নির্বাচনি ফলাফলকে বুঝতে পারেন। কারণ এইরূপ ব্যবস্থায় ভোটারদের ভোট হস্তান্তরযোগ্য নয়, বরং প্রত্যেক নাগরিককে একটি করে গোপন ভোট প্রদানের মাধ্যমে নিজ নির্বাচনি এলাকা বা কেন্দ্র থেকে একজনমাত্র প্রার্থীকে নির্বাচন করতে হয়। এই ব্যবস্থাটি সেই প্রার্থীকেই নির্বাচন করে, যিনি সর্বাধিক সংখ্যক ভোট লাভ করেন। অর্থাৎ ভোটারদের প্রথম পছন্দের প্রার্থীই জয়যুক্ত হয়।
(2) ফলাফলের সহজবোধ্যতা
এই পদ্ধতিটি অনুধাবন (Understand) এবং বাস্তবায়ন করা সহজ। ফলত, নির্বাচনি ফলাফলও সহজবোধ্য হয়। প্রতিটি ভোটার একজন প্রার্থীর জন্য ভোট প্রদান করে এবং যে প্রার্থী সবথেকে বেশি সংখ্যক ভোট লাভ করে, তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, পদ্ধতির সরলতার জন্য ভোটগণনা ও বাস্তবায়ন করাও কর্তৃপক্ষের জন্য সহজ হয়।
(3) শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল সরকার
ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতি নির্বাচনি ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য পরিচিত। এই পদ্ধতি প্রায়শই সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করে জোট সরকার গঠনের প্রবণতা বা সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। এটি মূলত একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করে জোট সরকারের প্রয়োজনীয়তাকে সংকুচিত করে। সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির ফলে একটি রাজনৈতিক দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে, যা তত্ত্বগতভাবে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল সরকার গঠনের পাশাপাশি সিদ্ধান্তমূলক শাসনের দিকে পরিচালিত করে। আইনসভা ও শাসনবিভাগে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সংখ্যাধিক্য থাকার ফলে সহজে নীতি প্রণয়ন ও নীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়।
(4) পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিতে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সহজেই নির্বাচন করতে পারে বা প্রার্থী চয়ন করতে পারে। কারণ এই ব্যবস্থাটি নির্বাচকদের সরাসরি সরকার নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করে। এই পদ্ধতিটি একটি প্রার্থীকেন্দ্রিক ভোটিং ব্যবস্থা এবং এই পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনি এলাকা থেকে একজন প্রার্থীকেই নির্বাচিত করা যায়। ফলে দলীয় প্রতীক, চিহ্ন বাদলের নাম দেখে নাগরিকরা সহজেই ভোট প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দসই প্রার্থীকে নির্বাচন করতে পারে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিতে ভোটদাতারা রাজনৈতিক দল দ্বারা উপস্থাপিত প্রার্থী তালিকা (List System) গ্রহণ করার পরিবর্তে, প্রার্থীর কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা মূল্যায়ন করার সুযোগ পায় এবং সেই অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করে। ফলত, নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(5) আদর্শ ব্যবস্থা
অনেকে মনে করেন, বৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি অনুসরণ করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সহজ। ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচনে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা অন্য কোনোরূপ নির্বাচন ব্যবস্থা উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় না। এমনকি এরূপ নির্বাচনি ব্যবস্থায় দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই নির্বাচনি এলাকার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হয়।
(6) স্পষ্ট নির্বাচনি প্রতিনিধিত্বের সুনিশ্চিতকরণ
প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় একজন করে স্পষ্ট প্রতিনিধি থাকে। ফলস্বরূপ, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভোটারদের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হয়।
(7) দায়িত্বশীল প্রতিনিধি
এই পদ্ধতিটি যেহেতু প্রতিনিধিকেন্দ্রিক, সেহেতু ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন। একটি নির্বাচনি এলাকা থেকে যেহেতু একজনমাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, সেহেতু আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে তার নির্বাচনি এলাকা ও এলাকাবাসীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলস্বরূপ, ভোটাররা বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য তাদের প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধ রাখতে পারে। অন্য ভাষায় বলা যায়, এই নির্বাচনি পদ্ধতি জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি করাকে সহজ করে তোলে।
(8) দ্রুত নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা
সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিটি সহজ হওয়ার কারণে ভোটগণনার পদ্ধতিটিও সহজবোধ্য হয়। ফলে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হলে দ্রুত ফলাফল জানা যায়।
(9) রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিতে যেহেতু জনগণ প্রত্যক্ষভাবে প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পায়, সেহেতু জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট ব্যবস্থার অসুবিধা
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজসরল এবং রাজনৈতিকভাবে অজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত হলেও, এই ব্যবস্থাটি বিবিধ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। সমালোচকরা এই পদ্ধতির বিভিন্ন অসুবিধাকে চিহ্নিত করেছেন। এগুলি হল-
(1) সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজন
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি অনুসৃত নির্বাচন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ ভোটার অপেক্ষা সম্প্রদায় বা জাতিভিত্তিক ভোটব্যাংক (Vote Bank) গড়ে তোলার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলি নিজস্ব ভোটব্যাংক গড়ে তুলতে সক্ষম হলে দলগুলির নির্বাচনে জয় লাভ করার পথ প্রশস্ত হয়। এর ফলস্বরূপ, সম্প্রদায় ও জাতিভিত্তিক বিভাজন এবং তোষণের রাজনীতির উদ্ভব ঘটেছে। এ ধরনের প্রবণতা সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে অশুভ বলে বিবেচিত হয়।
(2) অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির সবথেকে বড়ো অসুবিধা হল, এই পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী খুব কম সংখ্যক ভোটারের সমর্থন লাভ করেই জয়ী ঘোষিত হন, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য কখনোই যথার্থ বলে বিবেচিত হতে পারে না। সংসদীয় গণতন্ত্রে সাধারণভাবে বহুদলীয় ব্যবস্থা স্বীকৃত। এর ফলে নির্বাচনি ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে খুব কম ভোটেও প্রার্থী জয়ী হতে পারেন। অর্থাৎ, জয়ী প্রার্থীর জয়ের পশ্চাতে অধিকাংশের সমর্থন থাকে না।
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা অন্য কোনো নির্বাচন পদ্ধতিতে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে প্রার্থী জয় লাভ করতে পারে না। কারণ এই পদ্ধতিগুলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Absolute Majority) লাভ করা আবশ্যক। ফলে অনেকে ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট সিস্টেমকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলে অভিহিত করেছেন।
(3) অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল
এই নির্বাচনি পদ্ধতিতে একটি রাজনৈতিক দলের জয়ী আসনের সংখ্যা সর্বদা তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতকে প্রতিফলিত করে না, বরং প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ এবং জয়ী আসনের শতাংশের মধ্যে প্রায়শই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকে। এর ফলে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলি তাদের প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় অসম পরিমাণ তথা অধিক সংখ্যক আসন লাভ করে। যেমন-উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি দল ৩৭.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, কিন্তু লোকসভায় ৫৫ শতাংশের অধিক আসন দখল করেছিল।
(4) বিপক্ষ ভোটের অবহেলা
এই পদ্ধতি অনুসারে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারানোর জন্য বা একজন প্রার্থীর জয়ী হওয়ার জন্য যে পরিমাণ ভোটের প্রয়োজন, তার থেকে বেশি ভোেট নির্বাচনি ফলাফলকে প্রভাবিত করে না, ফলে বিপুল সংখ্যক ভোট নষ্ট হয়। কারণ, এই পদ্ধতি অনুযায়ী যেসকল প্রার্থী নির্বাচনে কম ভোট পেয়ে থাকেন, তাদের ভোটের কোনো মূল্য থাকে না। এইরকম বহু দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে বিজিত প্রার্থী অপেক্ষা বিরোধী প্রার্থীদের মিলিত ভোট সংখ্যা বা ভোটের শতকরা হার বেশি। কিন্তু ভোট ভাগাভাগি হওয়ার কারণে তারা জয় লাভ করতে পারেননি। এর ফলে যারা বিপক্ষ প্রার্থীদের ভোট দিয়েছিলেন, তাদের ভোটের মূল্য থাকে না। এমনকি এই পদ্ধতি অনুসরণের কারণে ভোটারদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে উদাসীনতা দেখা দিতে পারে বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা মনে করেন, নির্বাচনে জনগণের ভোটের প্রভাব প্রায় মূল্যহীন।
(5) ছোটো ও সংখ্যালঘু দলগুলির পক্ষে অনুপযুক্ত
অনেকে মনে করেন, ছোটো ও সংখ্যালঘু দলগুলির জন্য সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। ক্ষুদ্র এবং সংখ্যালঘু দলগুলিকে প্রায়ই প্রতিনিধিত্ব লাভের জন্য কঠোর প্রতিযোগিতা করতে হয়। তা সত্ত্বেও আইনসভায় আসন লাভ করার ক্ষেত্রে দলগুলি অসমর্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ৪৬.৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ৮০ শতাংশ আসন দখল করে রেখেছিল। অন্যদিকে বাকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একত্রিতভাবে ৫২ শতাংশ ভোট লাভ করলেও আইনসভায় মাত্র ২০ শতাংশ আসন লাভ করেছিল।
আসলে এই ক্ষুদ্র দলগুলি নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট লাভ করে আইনসভায় সেই অনুযায়ী সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব লাভ করার সুযোগ পায় না, যা তাদের সুবিধাবঞ্চিত করে। ফলে এই রাজনৈতিক দলগুলি বৃহৎ দলগুলির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না। তাই কখনো কখনো নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য বৃহৎ দলগুলির সঙ্গে জোট বাধা ছাড়া বা রাজনৈতিক দরকষাকষি করা ছাড়া উপায় থাকে না। উদাহরণস্বরূপ বহুজন সমাজ পার্টি (BSP), বা আম আদমি পার্টি (AAP)-এর মতো ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলগুলির কথা বলা যায়।
(6) দলীয় নিয়ন্ত্রণ
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারদের পছন্দকে (Choice)-কে গুরুত্ব বা মূল্য দেওয়া হয় না। অনেকসময় রাজনৈতিক দলগুলি বহিরাগত কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনীত করলে, সেই দলের সমর্থক ভোটারদের কাছে দ্বিতীয় কোনো পছন্দের সুযোগ থাকে না। প্রার্থী ঘোষণা করার ক্ষেত্রে জনপছন্দ অপেক্ষা দলীয় নিয়ন্ত্রণ অধিক পরিলক্ষিত হয়।
(7) সংখ্যালঘু মতামতে গুরুত্বহীনতা
ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট ব্যবস্থায় যেহেতু বিজয়ীরাই যাবতীয় ক্ষমতা লাভ করে, সেহেতু এই পদ্ধতিতে সংখ্যালঘু মতামতের যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিনিধিত্ব থাকে না বা অন্য ভাষায় বলা যায়, তাদের মতামতকে অস্বীকার করা হয়। ভোটের শতাংশে সামান্য পার্থক্যই আসন লাভে বৃহৎ অসমতা সৃষ্টি করে। ফলে ভিন্নমতগুলি প্রকাশের জায়গা সীমিত হয়ে পড়ে।
(8) আঞ্চলিকতাবাদ
ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতিটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে উৎসাহ প্রদান করে, যা অখণ্ড রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের পরিবর্তে খন্ডিত রাজনীতির দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং জাতীয় সমস্যার পরিবর্তে আঞ্চলিকতাবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তামিলনাড়ুর ডি এম কে (দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম), মহারাষ্ট্রের শিবসেনা, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস ইত্যাদি দলের কথা বলা যায়। এই আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাব কেবল বিশেষ একটি বা কয়েকটি রাজ্যে পরিলক্ষিত হয়, জাতীয় স্তরে দলগুলির প্রভাব এবং সমর্থকদের সংখ্যা নগণ্য।
উপসংহার
ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতিটি সরলতা এবং স্থিতিশীল সরকার স্থাপনের সম্ভাবনার জন্য পরিচিত। এই পদ্ধতিটি কেবল দলগুলির মধ্যে নয়, প্রার্থীর যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়। – অর্থাৎ, ভোটাররা একটি রাজনৈতিক দল দ্বারা উপস্থাপিত প্রার্থীতালিকা – গ্রহণ করার পরিবর্তে প্রার্থীদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করে নির্বাচন করতে – পারেন। ফলে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার – সুযোগ প্রদান করে। কিন্তু একইসঙ্গে এই ব্যবস্থা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং ন্যায্য সংখ্যক আসন লাভের ক্ষেত্রকে চ্যালেঞ্জ জানায়। এই পদ্ধতির – নানান অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই ভারতের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের সময় অনেকে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাটি বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যদিও শেষপর্যন্ত সংবিধান প্রণেতাগণ স্থিতিশীল সরকার গঠনের সুবিধার্থে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিকেই গ্রহণ করেছিলেন।
তবে সবশেষে বলা যায়, এমন কিছু দেশ রয়েছে যারা একদা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিটিকে নির্বাচন ব্যবস্থায় গ্রহণ করলেও পরবর্তীকালে তা বর্জন করে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আয়ার্ল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি। তবে আমাদের দেশে এই পদ্ধতিটি বর্জনের কথা বলা না হলেও ‘ইন্ডিয়ান ল কমিশন’ (Indian Law Commission) তাদের ১৭০তম রিপোর্ট (মে, ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ) এবং ২৫৫তম রিপোর্ট (২০১৫ সাল)-এ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য আবেদন জানিয়েছে এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির সঙ্গে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থার সংমিশ্রণে একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করেছে। তবেই ভারতের মতো বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় দেশে যথাযোগ্য প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
Read More – The Garden Party Question Answer