আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Class 11 | Adda Probondher Question Answer

১। ‘একটি বিষয়ে আড্ডার কিঞ্চিৎ বক্তব্য আছে।’-কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এমন উক্তি? তিনি যে তুলনা দিয়ে বিষয়টি নিবেদন করেছেন, তার পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি সৈয়দ মুজবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটি করেছেন স্বয়ং লেখক। লেখক বলেছেন-আড্ডা সম্পর্কে ভালো কিছু লেখা বাংলায় প্রকাশিত হওয়ার পরে ইংরেজিতেও উক্ত বিষয়ে লেখা বেরিয়েছে। এ যেন চন্ডীমণ্ডপের ভট্টাচার্যমশাই এবং জমিদার হাবেলির মৌলবী হঠাৎ কোট-প্যান্ট-কামিজ পরিধান করে গড়্গট্ করে স্টেটসম্যান অফিসে ঢুকছেন। আড্ডার এরূপ প্রসারে লেখকের আনন্দই হয়েছে। এমন ‘আড্ডা’ বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গেই বক্তা উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন। • লেখকের মতে এদেশের আড্ডাবাজরা বলেন যে, বাংলার বাইরে নাকি আড্ডা নেই। এই ব্যাপারে লেখকের দুই ধরনের বক্তব্য আছে, তা হল-কথাটা খানিকটা ঠিকও, আবার অনেকটাই ভুল। এই বিষয়টির পক্ষে লেখক তুলনা টেনেছেন ইলিশ মাছকে দিয়ে। বাঙালির খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ইলিশ মাছ। এটি অত্যন্ত উপাদেয় এক মাছ। বাংলার বাইরে এই মাছকে ‘ইলিশ’ বলে অনেকেই জানেন না। স্থানভেদে বা দেশভেদে ইলিশ ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। নর্মদা উজিয়ে ভরোচ শহরে যে মাছ ধরা পড়ে তার নাম ‘মাদার’। সিন্ধু নদ উজিয়ে যে মাছ ধরা পড়ে তার নাম ‘পাল্লা’। আবার গঙ্গা-পদ্মায় এই একই মাছ ‘ইলিশ’ নামে খ্যাত, যা বাঙালির মন-প্রাণকে আকুল করে তোলে। অন্যদিকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে এই মাছই ‘হিল্সা’ নামে পরিচিত। এইভাবে ইলিশের নানা স্থানে নানা নামের তুলনা করে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন ‘আড্ডা’ সর্বত্রই আছে, তবে তার প্রকৃতি ভিন্নতর।
২। ‘আমার মতে ভোজনরস সর্বরসের রসরাজ।’- উক্তিটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। আড্ডার স্থান নিয়ে কাইরোবাসীদের অভিমত লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদৃত অংশটি রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইলিশ মাছের নামকরণে যেমন স্থানভেদে ভিন্নতা আছে, তেমনই এর রন্ধনপ্রণালীর ভিন্নতার শরণে স্বাদেও ভিন্নতা রয়েছে। সরষে বাটা আর ফালি ফালি কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বাঙালি যেভাবে ইলিশ মাছ রান্না করে, লেখকের মতে অন্যরা তা করতে পারে না। আবার সিন্ধীরা আমাদের সরষে-ইলিশ খেয়ে নাক সিঁটকায়, তারা এটা পছন্দই করে না। অন্যদিকে ভৃগুকচ্ছের মহাজনগণ সিন্ধীর ‘পাল্লা’ খেয়ে ‘আল্লা আল্লা’ বলে রোদন শুরু করেন। একইভাবে বহু দেশেই আড্ডা থাকলেও আমাদের মতো তরিবৎ করে রসিয়ে রসিয়ে চাখতে তারা জানে না। এই প্রসঙ্গেই লেখক উক্তিটি করেছেন।
কাইরোর আড্ডাবাজদের মতে কেবল তাঁরাই নাকি সঠিকভাবে আড্ডা দিতে জানেন। তাঁদের আড্ডা কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তিবিশেষের বাড়িতে বসবেই না। এর কারণ আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে কিছু খানাপিনার ব্যবস্থাও থাকে, খালি পেটে তো আড্ডা জমে না। যার বাড়িতে আড্ডা বসে, সেই ব্যক্তি যদি পানটা, খিচুড়িটা বা ইলিশ ভাজাটার ব্যবস্থা করে দেন আড্ডাবাজদের জন্য, তবে আড্ডার সবাই যেন তাঁকে একটু বেশিই ‘তোয়াজ’ করতে থাকেন। এর ফলে আড্ডাটা অনেক সময় ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়তে পারে। তখন সেই আড্ডায় আর ব্যক্তিনিরপেক্ষতা বজায় থাকে না। গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। সেই শর্তও এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়। এই কারণেই কাইরোর আড্ডাবাজরা বলেন, তাঁদের আড্ডার নিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্র বজায় রাখতেই কোনো ব্যক্তির বাড়িতে আড্ডা বসে না।
৩। ‘কারো গিন্নী এসে উপস্থিত হবেন সে-ভয়ও নেই’-কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এমন উক্তি করেছেন? কাইরোর কালো কফি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আড্ডার নিরপেক্ষতা নিয়ে এখানে আলোচনা করেছেন লেখক। কাইরোর আড্ডা কারও বাড়িতে বসে না, ফলে কেউ কাউকে ‘খয়ের খাঁ’ বানাতে পারে না। সেখানে জাতপাত নেই, সবাই ভাই-ভাই। সব থেকে বড়ো কথা হল বাড়ির গিন্নীর মুখঝামটা খেতে হয় না গৃহকর্তাকে, অথবা বাড়ির গিন্নী “মুখপোড়া মিনষেরা ওঠে না কেন”-এমন কথা শুনিয়ে বা আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়ে অকারণে এবং অসময়ে আড্ডার গলায় ছুরি চালিয়ে আড্ডার মজাকে ধ্বংস করতে পারে না। দিব্যি কাফেতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন আড্ডাবাজরা, পছন্দমাফিক মমলেট কাটলেট খাওয়া চলছে, জমজমাটে আড্ডা থেকে কেউ বাড়িতেও যাবার নাম অবধি করে না। কাইরোবাসীর কাফেতে আড্ডার মজার কথা প্রসঙ্গেই লেখক প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক উল্লেখ করেছেন কাইরোর নীলনদ কাফেতে একপাত্র কফির মূল্য ছয় পয়সা মাত্র। রাবড়ির মতো ঘন সেই কফি। তবে তা দুধহীন। স্বাভাবিকভাবেই সেই কফির রং হবে কালো। তবে লেখক জানিয়েছেন এই কালো রং নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। দু-দিন যেতে-না-যেতেই ওই কালো কফিপানেই সকলের অভ্যাস হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে রসিকতার সুরে বলেছেন উক্ত কফি পান করলে গায়ের রং ফর্সা হয়ে যাবে। ‘কাফে দ্য নীল’-এর কালো কফির এমন বর্ণনাই লেখক ‘আড্ডা’ প্রসঙ্গে তুলে ধরেছেন।
৪। ‘আমাদের আড্ডাটা বসত কাফের উত্তর-পূর্ব কোণে,’ – এই আড্ডার আড্ডাবাজদের প্রকৃতি বর্ণনা করো।
উত্তর : সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বলেছেন তাঁদের আড্ডাটা ‘কাফে দ্য নীল’-এর উত্তর-পূর্ব কোণের কাউন্টারের গা ঘেঁষে। লেখকদের আড্ডায় নানা ধরনের আড্ডাবাজদের সমাগম ঘটত। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-রমজান বে, সজ্জাদ এফেন্দি। এঁরা দুজন খাঁটি মিশরীয় মুসলমান। ওয়াহহাব আন্তিয়া খ্রিস্টান হিসেবে যতটা কট্টর, আবার ততোধিক খাঁটি মিশরীয়। কারণ তাঁর শরীরে বইছে ফ্যারাওদের রক্ত। জুর্নো ফরাসি হলেও বেশ কয়েক বছর ধরেই কাইরোতে বসবাস করছেন। জুর্নো আরবিতে খুব ভালো কবিতা লেখেন। আর সেই কবিতার মূল বক্তব্য হল-তিনি তলোয়ার নিয়ে আড়াই ডজন বেদুইনকে ঘায়েল করে প্রিয়াকে উটে চাপিয়ে মরুভূমির দিদিগন্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। তবে লেখক ও তাঁর সঙ্গিরা জানতেন জুর্নো যতটুকু মরুভূমি দেখেছেন, সেটা পিরামিড দেখার সূত্রেই, তাও জীবনে মাত্র একবারই। উট তিনি কখনোই চড়েননি, কারণ ট্রামের ঝাঁকুনিতেই তাঁর বমি পায়। তলোয়ার যে তিনি ধরেননি, সেটা তো বলাই বাহুল্য। লেখকদের আড্ডার একজন অন্যতম সদস্য হলেন মার্কোস। তিনি জাতে গ্রিক হলেও প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে পারিবারিকভাবেই মিশরের অধিবাসী। এমনকি মিশরের গ্রিক রানি ক্লিয়োপাত্রার সঙ্গেও নাকি তাঁর ‘খোশকুটুম্বিতা’ আছে। কাফের গণতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রেখেই মার্কোস তাঁর লভ্যাংশ থেকে বন্ধুদের মাঝেমধ্যেই খাইয়ে দিতেন। তিনি কোনো ঝগড়া-ঝামেলায় নিজেকে জড়াতেন না। আড্ডায় এলেও অধিকাংশ সময়েই তিনি চেয়ারের হেলানে মাথা রেখে আকাশের দিকে হাঁ করে ঘুমাতেন; কখনও আবার খবরের কাগজের তুলোর ফাটকা বাজারের বুল-অ্যান্ড বিয়ারের খবর মুখস্থ করতেন।
আলোচ্য প্রবন্ধ থেকে ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডাবাজদের এই প্রকৃতির পরিচয়ই পাওয়া যায়।
৫। ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক কীভাবে ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডার সদস্য হয়েছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন-তাঁর বাড়ির নিতান্ত গা ঘেঁষে ‘কাফে দ্য নীল’ ছিল বলে তিনি সকাল-সন্ধ্যায় নিছক কফিপানার্থেই উক্ত কাফেতে যেতেন। বিদেশ-বিভুঁই, সকলেই অচেনা-অজানা-তাই দেশভ্রমণ পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ-ই তাঁর খেয়াল হয় কাফের উত্তর-পূর্ব কোণের টেবিলটির প্রতি। সেখানে এক ব্রাহ্মমুহূর্তে উক্ত কাফের আড্ডাবাজদের সঙ্গে লেখকের চোখাচোখি হয়। লেখক যে একজন খাঁটি আড্ডাবাজ সেই তত্ত্বটা ওঁদের মনেও ঝিলিক দিয়ে যায়। আড্ডাবাজরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে পরিতোষের স্মিতহাস্য বিনিময় করে বুঝিয়ে দেন যে, লেখককে আড্ডার সদস্যরূপে বিবেচনা করে তাঁরা ভুল করেননি। এমনকি কাফের ছোকরাটি পর্যন্ত বিষয়টা অনুভব করেছিল যে লেখক ছন্নছাড়া। তাই ‘রোঁদ’ পরিবেশন করার সময় সহাস্যে আড্ডার সকলের সামনে লেখকের ‘কেস রেকমেন্ড’ করে বলেছিল-লেখক অতিশয় ভদ্রলোক এবং ‘জোর টিপ্স’ দেন। সেইসময় আড্ডাবাজ জুর্নো লেখকের উদ্দেশ্যে বলেন-“খাসা আরবী বলেন আপনি”। জুর্নোর কথায় লেখকের মন-প্রাণ যেন শীতল হল। এই পরিস্থিতিতে নিজের মনের অবস্থার পরিচয় দিয়েছেন লেখক রবীন্দ্রনাথের কাব্যের মাধ্যমে-
“এত বলি সিক্ত পক্ষ দুটি চক্ষু দিয়া
সমস্ত লাঞ্ছনা যেন লইল মুছিয়া
বিদেশীর অঙ্গ হতে-”
অর্থাৎ জুর্নোর কথায় যেন লেখকের প্রবাসলাঞ্ছনা একঝটকায় দূরে সরে গিয়েছিল। এভাবেই লেখক ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডার সদস্য হয়েছিলেন।
৬। ‘এক কদম এগিয়ে গিয়েছে, প্রিয় অসত্যও বলবে।’- কোন্ প্রসঙ্গে লেখক উক্তিটি করেছেন? আলোচ্য প্রবন্ধে ‘হেলায় মক্কা করিলা জয়’ কথাটি কেন লেখক ব্যবহার করেছেন?
উত্তর: প্রশ্নের উদ্ধৃিতিটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে দেখি লেখকের মুখে আরবি শুনে আড্ডাবাজ জুর্নো প্রশংসা করে লেখককে বলেন-“খাসা আরবী বলেন আপনি”। জুর্নোর কথায় উৎসাহিত লেখক মনে মনে ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে-অল্প কয়েকদিনের আরবিকে যদি তাঁরা (কাইরোর আড্ডাবাজরা) ‘খাসা’ বলে প্রশংসা করেন, তবে তাঁরা অবশ্যই খানদানি মানুষ হবেন। এরপর লেখক হাতজোড় করে আড্ডাবাজদের বলেন-সত্য ও প্রিয় কথা বলাই ভারতবর্ষের নীতি; অপ্রিয় সত্য ভারতীয়রা বলে না। তবে আরবীয়রা আরও কিছুটা এগিয়েছে। এই কথা প্রসঙ্গেই লেখক উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
সুদূর কাইরোর আড্ডাবাজ রমজান বে-এর মুখে লেখক বাংলার আড্ডাবাজদের প্রশংসা শুনে একইসঙ্গে বিস্মিত ও গর্বিত হয়েছিলেন। লেখক কখনোই ভাবতে পারেননি যে, একজন কাইরোবাসীর মুখে তার জাতভাইদের প্রশংসা শুনতে পাবেন। সেই কথার সূত্রেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “হেলায় লঙ্কা করিল জয়” চরণটির অনুকরণে “হেলায় মক্কা করিল জয়” উদ্ধৃতিটি ব্যবহার করেছেন। একদা বাংলার বীর সেনানীরা বিজয় সিংহের নেতৃত্বে অনায়াসে সিংহল জয় করেছিলেন। একদিকে রমজান বে বলেছেন-তিনি তার মামার মুখে শুনেছেন ‘বিঙ্গালা’ বা ‘বাঙালী’ প্রদেশের মানুষ দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে আর অবশিষ্ট সময় কোনো চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। এ কথা শুনে উত্তেজনায় ফেটে পড়েন লেখক। লেখক নিজের মনেই ভাবেন-রামকৃষ্ণদেব, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের দেশে নিজে বাঙালি বলে এত গর্ব তো আগে হয়নি, এখন শ্রীহট্ট, নোয়াখালি, চাঁটগা বা কলকাতার উপকণ্ঠে খিদিরপুরের আড্ডাবাজ সুদূর কাইরোতে নাম করেছেন! এতো অনায়াসে মক্কা জয়ই হল, তাই লেখক উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
৭। ‘এ দোকানে তো মদ বেচার লাইসেন্স নেই।’-বক্তা কখন এ কথা বলেছেন? ‘কাফে দ্য নীল’-এর ফর্শী হুঁকোটির পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি ছিলেন কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডার নতুন সদস্য। আড্ডার গ্রিক সদস্য মার্কোস নতুন সদস্যের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের সময় একবারমাত্র ‘সালাম আলাইক্’ বলে খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়েছিলেন, হঠাৎ করে তিনিই বলে উঠলেন “দাঁও মেরেছি”। তারপর কাফের মালিকের উদ্দেশ্যে বলেন- “একটা শ্যাম্পেন হবে? আমাদের নূতন মেম্বার-”। হাতের ইঙ্গিতেও মার্কোস ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দেন তিনি কী চাইছেন। মার্কোস ডান হাত দিয়ে দেখান ফোয়ারার জল লাফানোর মুদ্রা। ম্যানেজার সোৎসাহে ঘাড়খানা দুই ডিগ্রি কাৎ করে ইতিবাচক ইঙ্গিত করেন। এইসময় লেখক (বক্তা) প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেন।
আড্ডাবাজ মার্কোসের নির্দেশে ‘কাফে দ্য নীল’-এর ছোকরাটি তামাক সাজিয়ে একটি সুন্দর ফর্শী হুঁকো নিয়ে আসে আড্ডাবাজদের আনন্দদানের জন্য। ছোকরা যে ফর্শী হুঁকো এনেছিল, তাতে হনুমানের লেজের মতো সাড়ে তিনগজী দরবারি নল ছিল না, এ ছাড়া সমস্ত জিনিসটার গঠন বেশ ভোঁতা ভোঁতা। লেখকের মতে ফর্শীর গঠনটা ‘যেন একটু গাঁইয়া’ ধরনের; তবে হুঁকোর ছিলিমটা বেশ ভালো পরিমাণের ছিল, যা দেখে লেখকের ভক্তি হয়েছিল ছিলিমটার প্রতি। একপো তামাক হেসেখেলে তার ভিতর ঢুকে যেতে পারে। তাওয়াও ছিল তাতে; তবে টিকের আগুনটা হয়তো ধিকিধিকি গোলাপি ছিল না, কারণ টিকে বানানোর গুহ্যতথ্য হয়তো তাঁরা জানতেন না। তবে তামাকের সুগন্ধ বেশ জোরালো ছিল। লেখক রসিকতার সুরে বলেছেন ১৪ বছর পরেও সেই সুগন্ধ তাঁর নাকে লেগে ছিল। কাইরোর কাফেতে ছোকরার আনা হুঁকোটির এমন পরিচয়ই পাওয়া যায় আলোচ্য প্রবন্ধে।
৮। ‘তুমি নিশ্চই জানো সুন্দরী ইজিপশিয়ান সিগারেট ভুবন বিখ্যাত।’ -ইজিপশিয়ান সিগারেট বানানোর কৌশল আলোচনা করো। জাহাজে তামাকের স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুণ্ণ রাখা হয় কীভাবে?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন যে, ইজিপশিয়ান সিগারেট তার সুগন্ধের জন্য ভুবনবিখ্যাত। লেখকের হাতে মিশরীয়রা যে পৃথিবীবিখ্যাত সুগন্ধযুক্ত সিগারেট বানাতে পারে তার পিছনে যেমন বিস্তর ইতিহাস আছে, তেমনই আছে রাজনৈতিক কৌশল এবং রসায়নশাস্ত্রের জ্ঞান। সিগারেটের জন্য ভালো তামাক জন্মায় আমেরিকার ভার্জিনিয়া, গ্রিসের মেসেডোট এবং রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরের উপকূলে। একদা তুর্কিরা গ্রিসের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ফলে গ্রিসের সকল তামাক তারা ইস্তাম্বুলে নিয়ে এসে কাগজে পেঁচিয়ে সিগারেট বানাত। মিশরও তখন ছিল তুর্কিদের আয়ত্তে। তাই তুর্কির কর্তারা কিছুটা তামাক পাঠাতেন মিশরেও। এরপর মিশরের কারিগররা সেই গ্রিক তামাকের সঙ্গে খাঁটি মিশরীয় ‘খুশবাই’ মাখিয়ে তৈরি করতেন বিশ্ববিখ্যাত ইজিপশিয়ান সিগারেট।
আলোচ্য প্রবন্ধে তামাকের গন্ধ ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখার উপায়টি লেখক বিবৃত করেছেন। লেখক বলেছেন যে, জাহাজে কাঁচা তামাকই সেবন করা হত, তাতে কড়া গন্ধওয়ালা কোনো বস্তু নেওয়া হত না, কারণ তাতে উক্ত পদার্থের গন্ধে তামাকের গন্ধ ও স্বাদ নষ্ট হয়। অর্থাৎ কাঁচা তামাক যে – জাহাজে নেওয়া হত, সেখানে কড়া গন্ধযুক্ত অন্য কোনো পদার্থ না-নিলেই তামাকের গন্ধ ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।
৯। ‘মিশরীয়রাও ঠিক সেই রকম সুগন্ধ-তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায়নি।’-কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা উক্তিটি করেছেন? মিশরীয়রা যে সুগন্ধ-তত্ত্ব ভুলে যায়নি তার প্রমাণ লেখক কীভাবে অনুভব করলেন?
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন- পাঠান-মোগল যুগে যেরকম আমাদের অনেকখানি রসায়নবিদ্যা অনাদরে লোপ পেয়েছে, তবুও এখনও আমরা মকরধ্বজ, চবনপ্রাস বানাতে পারি, ঠিক তেমনই ঝড়তি-পড়তি যেটুকু এলেম এখনও মিশরীয়দের পেটে আছে তাই দিয়েই তারা তামাকের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেও সুগন্ধ ছড়িয়ে দিতে পারে সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমে। প্রাচীন মিশর তাদের মমিগুলিকে পচনের হাত থেকে কীভাবে বাঁচাতেন, বর্তমানে সেই তত্ত্ব ভুলে গেলেও, তামাকের খুশবাই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভোলেনি তারা-এই কথা প্রসঙ্গেই বক্তা প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, মিশরীয়রা তাদের সুগন্ধীতত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায়নি। ঝড়তি-পড়তি যতটুকু ক্ষমতা তাদের আছে, তা দিয়েই সমস্যা সমাধান করেছে। সেভাবেই তামাকের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেই তার খুশবাই বজায় রেখেছে। তাই যখন কোনো নামজাদা তামাক কদরদারের তদারকিতে কাইরোর কাফেতে তামাক সাজা হয় এবং সেই কদরদার সেই তামাকের নীলাভ ধোঁয়াটি ফুরফুর করে নাকের ভিতর দিয়ে যখন বাইরে ছাড়েন এবং নীলনদের মৃদুমন্দ শীতল বাতাস যখন সেই ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে গিয়ে তাকে ছিন্নভিন্ন করে কাফের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়; তখন সেই সৌগন্ধময় বাতাস কাফের বাইরের রাস্তায় পথচলতি মানুষকেও উন্নাসিক করে তোলে। পাঁড় সিগারেট-খেকো, পাইকারি সিগারেট ফোঁকা মানুষও তখন সেই সুগন্ধে অত্যন্ত বিমুগ্ধ হয়ে পড়েন এইভাবেই লেখক প্রমাণ পেয়েছেন যে মিশরীরা সুগন্ধ তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যাননি।
১০। ‘আমি যে মিছিমিছি এক ঘণ্টা ধরে চিঠিটা লিখলুম।’ -বক্তার এক ঘণ্টা ধরে চিঠি লেখার কারণ কী? উক্তিটির মাধ্যমে তার কোন্ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন ওয়েটার যখন আপনাকে কফি দিতে আসবে, তখন আপনি তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারবেন যে, আপনার নামে কোনো চিঠি আসেনি। গৃহিণীর ভয়ে আপনি আপনার প্রিয়াকে কাফের ঠিকানা দিয়েছিলেন। আপনার কোনো ফোন এসেছিল কি না জানতে চাইলে ওয়েটার আপনাকে জানাবে-ফোন আসেনি, তবে আপনার আড্ডার সদস্য ইউসুফ বে আপনাকে বলতে বলেছেন যে, তিনি একুট দেরিতে আসবেন। আপনি যেন না যান-সে-কথাও ওয়েটার আপনাকে জানাবে। তখন আপনি বিরক্তির সঙ্গে আবার জানতে চাইবেন যে, আপনার কোনো চিঠি বা ফোন আছে কি না। ওয়েটার কাঁচুমাচু হয়ে ‘না’ বলবেন। ওয়েটার তখন আপনার আদেশে কাফের নামঠিকানা লেখা চিঠির কাগজ, খাম, ব্লটিং প্যাড এক মিনিটের মধ্যেই উপস্থিত করবে। এরপর গভীর মনোযোগের সঙ্গে আপনি প্রেমপত্র লিখবেন। গৃহিণীর ভয়ে আপনি আপনার ঠিকানা দিয়েছেন ‘কাফে দ্য নীল’-এর। প্রিয়ার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ করার বাসনা রয়েছে। কখন কোথায় সেটা হবে, তার খবর আপনি তখনও পাননি। অর্থাৎ রমজান বে আপনাকে সেই খবর তখনও দেননি। তবে আপনার মনে হয়তো অনেক কথাই জমা হয়ে আছে, যেগুলির প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন। তাই আপনি এক ঘণ্টা ধরে চিঠি লিখবেন।
উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্যে বক্তার একইসঙ্গে রমজান বে-র প্রতি বিরক্তি ও রাগের প্রকাশ ঘটেছে আবার প্রিয়ার প্রতি অনুরাগের প্রকাশও ঘটেছে।
রমজান বে জেনেবুঝেই কথককে তখনও প্রকৃত কথা জানায়। তাই অনেক ভেবেচিন্তে চিঠি লিখতে হয়েছে কথককে এবং তাতে একইসঙ্গে মেধা ও শ্রমের অপব্যয় হয়েছে। অন্যদিকে প্রিয়া তাঁকে কোনো খবর দেয়নি অনুভব করে কথক হয়তো চিন্তান্বিতও হয়েছেন। অর্থাৎ কথকের রাগ ও উৎকণ্ঠার প্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নের উক্তিটিতে।
১১। ‘এ কাফে আপনাকে উদ্বাহু হয়ে অভ্যর্থনা করবে-‘ -কোন্ কাফের কথা বলা হয়েছে? উক্ত কাফে আপনার সঙ্গে কেমন আচরণ করবে?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটিতে লেখক ‘আপনি’ অর্থাৎ পাঠকের উদ্দেশ্যে কথাটি বলেছেন। শহর থেকে মাইল তিনেক দূরের একটি কাফে, যেখানে পাঠকের এক বন্ধু ওই কাফেরই উপরতলায় থাকেন। কাফের সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নীল নদ। পাঠকের – বন্ধুই সেই কাফের আড্ডাবাজদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন পাঠকের। এখানে সেই কাফের কথা বলা হয়েছে।
এই কাফের আড্ডাবাজরা দু-হাত তুলে আপনাকে স্বাগত জানাবে। কারণ আপনি সেখানে কালেভদ্রে যান। তাই আপনাকে পেয়ে আড্ডায় আলোচ্য পুরোনো বিষয়গুলিকে নতুন করে আলোচনার সুযোগ পাবে সবাই। তাঁরা আপনার রায় জানতে চাইবে। পাঠক যে রায়ই দেবেন-তাতে তিনি ছাড় পাবেন না। কারণ পাঠক গান্ধির দেশের মানুষ। পাঠক যতই চেষ্টা করুক বোঝাতে যে, গান্ধির সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই- তাতে কোনো লাভ নেই। আড্ডাবাজদের ধারণা পাঠক ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ধারণ করেন। তাই তাঁর জ্ঞানগম্যিতে আড্ডাবাজদের কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই রায় তাঁকে দিতেই হবে। আর এভাবে চলতে চলতে আড্ডা যখন শেষ হবে, তখন পাঠক তাঁর বাড়ি ফেরার বাস পাবেন না। অর্থাৎ পাঠকের সঙ্গে আড্ডাবাজরা খুব আন্তরিক আচরণ করবে। পাঠককে পেয়ে আড্ডাবাজরা পাঠককে এমন অভ্যর্থনা করবে যেন পাঠক তাঁদের অনেক দিনের হারিয়ে-যাওয়া ফিরে পাওয়া ভাই।
১। ‘উপর্যুক্ত সর্ব মৎস্য একই বস্তু-দেশভেদে ভিন্ন নাম’ ।-মৎস্যের উল্লেখ করে প্রবন্ধে আলোচিত তার ভিন্ন নামগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে বাঙালির প্রিয় ইলিশ মাছের কথা বলা হয়েছে।
ইলিশ মাছ উপাদেয়। স্থানভেদে বা দেশভেদে ইলিশ ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-সিন্ধু নদ উজিয়ে যে মাছ ধরা পড়ে তার নাম ‘পাল্লা’। নর্মদা উজিয়ে ভরোচ শহরে যে মাছ ধরা পড়ে তার নাম ‘মদার’। আবার গঙ্গা-পদ্মায় এই মাছ ‘ইলিশ’ নামে পরিচিত; যা বাঙালির মন-প্রাণকে আকুল করে তোলে। আবার খোট্টা মুল্লুকে অর্থাৎ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে এই মাছই ‘হিল্সা’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ একই মাছ স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে খ্যাত।
২। ‘’তাতে করে আড্ডার নিরপেক্ষতা-কিংবা বলুন গণতন্ত্র -লোপ পায়।’-কারা, কেন এ কথা বলেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্ত কথাগুলি বলেন কাইরো শহরের আড্ডাবাজগণ।
কাইরোর আড্ডাবাজদের মতে কেবল তাঁরাই নাকি সঠিকভাবে আড্ডা দিতে জানেন। তাঁদের আড্ডা কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তিবিশেষের বাড়িতে বসবেই না। এর কারণ আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে কিছু খানাপিনার ব্যবস্থাও থাকে, খালি পেটে তো আড্ডা জমে না। যার বাড়িতে আড্ডা বসে, সেই ব্যক্তি যদি পানটা, খিচুড়িটা বা ইলিশ ভাজাটার ব্যবস্থা করে দেন আড্ডাবাজদের জন্য, তবে আড্ডার সবাই যেন তাঁকে একটু বেশিই ‘তোয়াজ’ করতে থাকে। এর ফলে আড্ডাটা অনেক সময় ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়তে পারে। তখন সেই আড্ডায় আর ব্যক্তিনিরপেক্ষতা বজায় থাকে না। গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। সেই শর্তও এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়। এই কারণেই কাইরোর আড্ডাবাজরা বলেন, তাঁদের আড্ডার নিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্র বজায় রাখতেই কোনো ব্যক্তির বাড়িতে আড্ডা বসে না।
৩। ‘কালো কফি খেলে রঙভী ফর্সা হয়।’-প্রসঙ্গসহ উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এ তাঁদের আড্ডা বসত। সেই কাফের ‘কফি’ প্রসঙ্গে রসিকতার সুরে তিনি উক্তিটি করেছেন।
লেখকের মতে শতকরা নব্বই জন কাইরোবাসী আড্ডাবাজ এবং তার দশআনা পরিমাণ অর্ধেক জীবন কাটায় কাফেতে আড্ডা মেরে। এর পরেই লেখক বলেন, নীলনদ কাফেতে একপাত্র কফির মূল্য ছিল ছয় পয়সা। রাবড়ির মতো ঘন সেই কফি। তবে কোনো দুধ সেখানে পাওয়া যাবে না; অর্থাৎ কফি হবে দুধহীন। স্বাভাবিক কারণেই সেই কফির রং কালো। তবে এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, দু-দিন যেতে-না-যেতেই ওই কালো কফিপানেই অভ্যাস হয়ে যায়। কোনো অসুবিধা হয় না। সেইসঙ্গে লেখক জানান কালো কফি পান করলে গায়ের রং ফর্সা হয়ে যায়। লেখকের এই উক্তি থেকে তাঁর রসিকতাময় মানসিকতার পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।
৪। ‘যদিও আমরা সবাই জানতুম’- ‘আমরা’ কারা, কী জানতুম?
উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘আমরা’ বলতে কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডাবাজ লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের কথা বলা হয়েছে।
লেখকদের আড্ডাবাজ বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন জুর্নো। তিনি জাতিগতভাগে ফরাসি হলেও বেশ কয়েকপুরুষ ধরেই তিনি কাইরোতে বসবাস করছেন। জুর্নো একজন কবি এবং তিনি আরবি ভাষায় ভালো কবিতা লেখেন।
তাঁর কবিতার মূলকথা হল-তিনি তলোয়ার চালিয়ে আড়াই ডজন বেদুইনকে ঘায়েল করে প্রিয়াকে উটের ওপর তুলে মরুভূমির দিদিগন্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। তবে লেখক ও তাঁর আড্ডাবাজ বন্ধুরা জানতেন যে, জুর্নো মরুভূমি দেখেছেন কেবল পিরামিড দেখতে গিয়ে। তাও জীবনে একবার। উট তো – তিনি কখনও চড়েননি। এমনকি ট্রামের ঝাকুনিতেই তিনি বমি করে ফেলেন। আর তলোয়ার চালানোর কথা তো ভাবাই যায় না। অর্থাৎ জুর্নোর কবিতার বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর আচরণের বা কৃতকর্মের কোনো বাস্তবতা নেই। এ কথাই লেখকরা জানতেন।
৫। ক্লিয়োপাত্রার সঙ্গে তার নাকি খোশকুটুম্বিতা আছে।’- উদ্দিষ্টের পরিচয় দিয়ে ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে তাঁর সম্পর্কে যা বলা হয়েছে লেখো।
উত্তর : প্রশ্নোদৃত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘তাঁর’ বলতে আড্ডার সঙ্গী মার্কোসকে বোঝানো হয়েছে।
‘কাফে দ্য নীল’-এ লেখকদের আড্ডাবাজ দলের একজন সঙ্গী মার্কোস জাতিতে গ্রিক হলেও প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে তাঁরা মিশরেই আছেন। গ্রিক রমণী-মিশরের সর্বশেষ ফারাও ক্লিয়োপাত্রার সঙ্গেও নাকি তাঁদের দারুণ কুটুম্বিতা ছিল। কাফের গণতন্ত্র ক্ষুণ্ণ না-করেই মার্কোস ব্যাবসার লাভ থেকে প্রাপ্ত অর্থে বন্ধুদের মাঝে মাঝেই খাইয়ে দিতেন। কাফের কোনোরকম ঝগড়া-ঝামেলায় অংশগ্রহণ করতেন না। তিনি ছিলেন নির্বিবাদী মানুষ। আড্ডায় এসেও অধিকাংশ সময়তেই তিনি চেয়ারে হেলানে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁ করে ঘুমোতেন। কখনও আবার খবরের কাগজে তুলোর ফাটকা বাজারের তেজি-মন্দির (বুল-অ্যান্ড বিয়ার) সমস্ত খবর মুখস্থ করতেন। আড্ডা প্রবন্ধে মার্কোসের এমন পরিচয়ই পাওয়া যায়।
৬। ‘কাফের ছোকরাটা পর্যন্ত ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছে।’- উদ্ধৃত উক্তিটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করে ব্যাপারটা বুঝে ফেলে ছোকরাটি কী করেছিল লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এ অন্যান্য আড্ডাবাজদের মতোই লেখকও একজন আড্ডাবাজ, তবে তিনি ছিলেন নবীন। তিনি নিছক কফিপানার্থেই প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় উক্ত কাফেতে যেতেন। সেখানেই একদিন কাফের উত্তর-পূর্ব কোণের আড্ডাটি তাঁর নজরে আসে। সেখানে এক ব্রাহ্মমুহূর্তে আড্ডাবাজদের সঙ্গে লেখকের চোখাচোখি হয় এবং আড্ডায় সদস্য হতে আর দেরি হয় না লেখকের। আড্ডার সদস্যরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে পরিতোষের স্মিতহাস্য বিনিময় করে বুঝিয়ে দেন যে, লেখককে আড্ডার সদস্যরূপে বিবেচনা করে তাঁরা ভুল ব্যক্তিকে বাছেননি। এমনকি উক্ত কাফের ছোকরাটি পর্যন্ত বিষয়টা অনুভব করেছিল। এই প্রসঙ্গেই লেখক উক্তিটি করেছেন।
বক্তা তথা লেখকের ছন্নছাড়া ভাবটাও ছোকরা অনুভব করেছিল। তাই ‘রোঁদ’ পরিবেশন করার সময় সহাস্যে আড্ডার সকলের সামনে লেখকের ‘কেস রেকমেন্ড’ করে বলেছিল যে, লেখক অতিশয় ভদ্র লোক এবং ‘জোর টিপ্স’ দেন।
৭। ‘আমি কিন্তু মনে মনে বললুম,’-বক্তা কখন, কী বলেছিলেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। কাফে দ্য নীল-এ নতুন আড্ডাবাজরূপে লেখকের যুক্ত হওয়ার সময় লেখকের হয়ে ‘কেস রেকমেন্ড’ করে কাফের ছোকরাটি। সেইসময় আড্ডাবাজ জুর্নো লেখকের উদ্দেশ্যে বলেন যে, লেখক খাসা আরবি বলেন। জুর্নোর কথায় লেখকের প্রবাসলাঞ্ছনা যেন একমুহূর্তে মরে যায়। এমন সময় বক্তা তথা লেখক মনে মনে কিছু কথা বলেন।
লেখক মনে মনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলেন যে, অল্প কয়েকদিনের (অর্থাৎ তেরো দিনের) আরবিকে যদি তাঁরা (কাইরোর আড্ডাবাজরা) ‘খাসা’ বলে প্রশংসা করেন, তাঁরা তবে অবশ্যই খানদানি (অভিজাত) মানুষ হবেন। এর পরেই বক্তা হাতজোড় করে আড্ডাবাজদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভারতবর্ষের নীতিই হল সত্য ও প্রিয় কথা বলা; অপ্রিয় সত্য কথা না-বলা। তবে তাঁরা (আরবিরা) আরও এক পা এগিয়ে, তাঁরা অপ্রিয় সত্যও উচ্চারণ করেন (অর্থাৎ অক্লেশে প্রকাশ করেন)।
৮। ‘হেলায় মক্কা করিলা জয়।’-উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। সুদূর কাইরোর এক কাফের আড্ডাবাজদের মুখে নিজের জাতভাই বাংলার মানুষের আড্ডাবাজরূপে প্রশংসা শুনে লেখকের মনে দারুণ আনন্দ তথা গর্ব অনুভূত হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গেই লেখক উক্তিটি করেছেন। সেই প্রসঙ্গ ধরেই লেখক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতার চরণ ‘হেলায় লঙ্কা করিল জয়’-এর অনুকরণে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
একদা বাংলার বীর সেনানীরা বিজয় সিংহের নেতৃত্বে অনায়াসে সিংহল জয় করেছিলেন। কাইরোর কাফের জনৈক আড্ডাবাজ রমজান বে বলেন, তিনি তাঁর মামার মুখ থেকে শুনেছেন কোনো এক প্রদেশের (‘বিঙ্গালা’ বা ‘বাঙীলা) মানুষ দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে আর বাদবাকি সময় এক চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। নিজের দেশের নাম শুনে লেখকের হৃদয় উত্তেজনায় ফেটে পড়ে এবং তিনি বলে ওঠেন, প্রদেশটি ‘বাঙালা’। নিজের মনেই তিনি ভাবেন যে-রামকৃষ্ণদেব, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম তো বাঙালি কিন্তু নিজে বাঙালি বলে এত গর্ব আগে তো হয়নি। আর এখন শ্রীহট্ট, নোয়াখালি, চাঁটগা, কাছাড়ের বাঙালি খালাসি বা কলকাতার উপকণ্ঠে খিদিরপুরের আড্ডাবাজ হয়েও সুদূর কাইরোতে আড্ডাবাজরূপে নাম করেছেন-এ তো মক্কা জয়েরই সামিল। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে লেখক এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
৯। ‘ম্যানেজার কুল্লে দুই ডিগ্রী কাৎ করে ঘাড় নাড়ল।’ -কোথাকার ম্যানেজার কেন এমন আচরণ করলেন?
উত্তর: প্রশ্নোদৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘কাফে দ্য নীল’-এর ম্যানেজারের কথা বলা হয়েছে।
কাফে দ্য নীল-এর আড্ডাবাজদের মধ্যে একদম নতুন সদস্য হলেন আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক। আড্ডার গ্রিক সদস্য মার্কোস নতুন সদস্যের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের সময় একবারমাত্র ‘সালাম আলাইক্’ করে খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়ে দিলেন। আড্ডার কোনোকথাই হয়তো তাঁর কানে যাচ্ছিল না। লেখক ভাবলেন মার্কোস হয়তো রাশভারী লোক। হঠাৎ-ই মার্কোস খবরের কাগজ থেকে মুখ সরিয়ে বলে উঠলেন ‘দাঁও মেরেছি’। কাফের কাউন্টারের পিছনে দাঁড়ানো মালিকের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, “একটা শ্যাম্পেন হবে? আমাদের নূতন মেম্বার-।” -বলার সঙ্গে তিনি হাতের ইঙ্গিতেও ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দেন। মার্কোসের কথায় ম্যানেজার ইতিবাচক ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়ান। ম্যানেজার তাঁর কাফের খড়িদ্দারদের কখনোই বিমুখ করতে চাননি। তা ছাড়া আড্ডার নতুন সদস্যকে অভ্যর্থনা বা খুশি করার দিকটিও রয়েছে। তদুপরি মার্কোসের কথায় সম্মত হলে তাঁর ব্যাবসারও লাভ হবে। তাই তিনি প্রশ্নোদ্ভূত আচরণ করেছেন।
১০। ‘দিব্যি ফশী হুঁকো এল।’-কোথায়, কখন, কোন্ হুঁকোটি এসেছিল?
উত্তর: কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এ আড্ডাবাজদের আনন্দদানের উদ্দেশ্যে মার্কোস কাফের ছোকরাটিকে তামাক সাজানোর হুকুম করলে, ছোকরাটি একটি সুন্দর ফর্শী হুঁকো নিয়ে এসেছিল।
ছোকরা যে ফর্শী হুঁকো এনেছিল, তাতে হনুমানের লেজের মতো সাড়ে তিনগজী দরবারি নল ছিল না, এ ছাড়া সমস্ত জিনিসটার গঠন বেশ ভোঁতা ভোঁতা। লেখকের মতে ফর্শীর গঠনটা ‘যেন একটু গাঁইয়া’ ধরনের; তবে হুঁকোর ছিলিমটা বেশ ভালো পরিমাণের ছিল, যা দেখে লেখকের ভক্তি হয়েছিল ছিলিমটার প্রতি। একপো তামাক হেসেখেলে তার ভিতর ঢুকে যেতে পারে। তাওয়াও ছিল তাতে; তবে টিকের আগুনটা হয়তো ধিকিধিকি গোলাপি ছিল না, কারণ টিকে বানানোর গুহ্যতথ্য হয়তো তাঁরা জানতেন না। তবে তামাকের সুগন্ধ বেশ জোরালো ছিল। লেখক রসিকতার সুরে বলেছেন ১৪ বছর পরেও সেই সুগন্ধ তাঁর নাকে লেগে ছিল। কাইরোর কাফেতে ছোকরার আনা হুঁকোটির এমন পরিচয়ই পাওয়া যায় আলোচ্য প্রবন্ধে।
১১। ‘এই সিগারেট বানানোর পিছনে বিস্তর ইতিহাস,’- প্রসঙ্গসহ উদ্ধৃতাংশের ‘বিস্তর ইতিহাস’-এর পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইজিপশিয়ান সিগারেট তার সৌগন্ধের জন্য ভুবনবিখ্যাত। তবে মিশরেই কেন এমন সুগন্ধী সিগারেট তৈরি হয়, সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
লেখকের হাতে মিশরীয়রা যে পৃথিবীবিখ্যাত সৌগন্ধযুক্ত সিগারেট বানাতে পারে তার পশ্চাতে যেমন বিস্তর ইতিহাস আছে, তেমনই আছে রাজনৈতিক কৌশল এবং রসায়নশাস্ত্রের জ্ঞান। সিগারেটের জন্য ভালো তামাক জন্মায় আমেরিকার ভার্জিনিয়া, গ্রিসের মেসেডোট এবং রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরের পারে পারে। একদা তুর্কিরা গ্রিসের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
ফলে গ্রিসের সকল তামাক তারা ইস্তাম্বুলে নিয়ে এসে কাগজে পেঁচিয়ে সিগারেট বানাত। মিশরও তখন ছিল তুর্কিতের আয়ত্তে। তাই তুর্কির কর্তারা কিছুটা তামাক পাঠাতেন মিশরেও। এরপর মিশরের কারিগররা সেই গ্রিক তামাকের সঙ্গে খাঁটি মিশরীয় ‘খুশবাই’ মাখিয়ে তৈরি করতেন বিশ্ববিখ্যাত ইজিপশিয়ান সিগারেট। এই ইতিহাসের কথাই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত অংশে বলতে চেয়েছেন।
১২। ‘পারেনি বিশ্বসংসার বের করতে’-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বসংসার কী বের করতে পারেনি লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। তামাকের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেও সিগারেটকে কীভাবে খুশবাইয়ে মজানো যায়, তা কেবল মিশরীয়রাই জানত। বহু গুণী ব্যক্তি পরমাণু বোমার মালমশলা মেশানোর সকল কৌশল জানলেও, তামাকের সঙ্গে খুশবাইয়ের পিছনে যে তত্ত্ব রয়েছে, তা তাদের কাছে রহস্যই রয়ে গেছে। একইভাবে অজন্তার দেয়ালচিত্রের রং কোন্ কোন্ মশলা দিয়ে বানানো হয়েছিল বা পাঠান আমলে পাথরে পাথরে জোড়া দেওয়ার জন্য কোন্ উপাদান কী পরিমাণে ব্যবহার হয়েছিল-এসব তত্ত্ব বহু চেষ্টা করেও আমরা বের করতে পারিনি। মমিগুলির ক্ষেত্রেও এমন কথাই খাটে। এইসকল প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।
আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, কোন্ কৌশল অবলম্বন করে এবং কী মশলা প্রয়োগ করে মিশরীয়রা তাদের মমিগুলিকে পচনের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, তা বিশ্বসংসার বের করতে পারেনি।
১৩। ‘বুকের উপর হাত রেখে আসমানের দিকে তাকিয়ে ‘অলহমদুলিল্লা’ (খুদাতালার তারিফ) বলে।’-কারা, কেন এমন আচরণ করেছিল?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এর পার্শ্ববর্তী রাস্তার পথচলতি জনগণ প্রশ্নে বর্ণিত আচরণ করেন।
আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, মিশরীয়রা তাদের সুগন্ধীতত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায়নি। ঝড়তি-পড়তি যতটুকু ক্ষমতা তাদের আছে, তা দিয়েই সমস্যা সমাধান করেছে। সেভাবেই তামাকের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেই তার খুশবাই বজায় রেখেছে। তাই যখন কোনো নামজাদা তামাক কদরদারের তদারকিতে কাইরোর কাফেতে তামাক সাজা হয় এবং সেই কদরদার সেই তামাকের নীলাভ ধোঁয়াটি ফুরফুর করে নাকের ভিতর দিয়ে যখন বাইরে ছাড়েন এবং নীলনদের মৃদুমন্দ শীতল বাতাস যখন সেই ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে গিয়ে তাকে ছিন্নভিন্ন করে কাফের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়; তখন সেই সুগন্ধময় বাতাস কাফের বাইরের রাস্তায় পথচলতি মানুষকেও উন্নাসিক করে তোলে। পাঁড় সিগারেট-খেকো, পাইকারি সিগারেট ফোঁকা মানুষও তখন সেই সুগন্ধে অত্যন্ত বিমুগ্ধ হয়ে পড়েন এবং সেই কারণেই তাঁরা প্রশ্নোদ্ভূত আচরণের মাধ্যমে ঈশ্বরের তারিফ করেন।
১৪। ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বর্ণিত বাঙালি, কাবুলি, ইংরেজ, পেশওয়ারি, পাঠান ও মিশরীয়দের একটি করে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর: বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে কথা প্রসঙ্গে মানুষের জাতিগত কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাঙালি সর্বদাই তার মাথার চুলকে কেতাদুরস্ত করে রাখতে ভালোবাসে; কাবুলিরা সময়-সুযোগ পেলেই তাদের পায়জারে (জুতো বা পাদুকা) কয়েকটি পেরেক ঢুকিয়ে নেয়; ব্রিটিশ অর্থাৎ ইংরেজদের স্বভাব হল সামনে আয়না পেলেই টাইটা ঠিক মাঝখানে আছে কি না তা দেখে নেওয়া এবং তার তদারকিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে; পেশওয়ারি পাঠানদের যত্ন থাকে তাদের মাথার আবরণ পাগড়ির প্রতি। এই শিরাভরণকে তারা অতি সতর্কতার সঙ্গে এবং সম্মানের সঙ্গে মাথায় ধারণ করে; মিশরীয়দের একটি বৈশিষ্ট্য হল তাদের জুতোর প্রতি দুর্বলতা। তারা সর্বদাই তাদের জুতোজোড়াকে ‘বালিশ’ (আরবিতে ‘বালিশ’ মানে ইংরেজিতে ‘পালিশ’) করে রাখে। আড্ডা প্রবন্ধে লেখক প্রশ্নোদ্ভূত জাতিগুলির এমন বৈশিষ্ট্যই উল্লেখ করেছেন।
১৫। ‘আপনি বলবেন, চিঠিপত্র নেই?’-আপনি কাকে, কখন এই প্রশ্ন করবেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্ত প্রবন্ধে বর্ণিত ‘কাফে দ্য নীল’-এর ওয়েটারকে আপনি প্রশ্নটি করবেন, যে-ওয়েটারটি আপনাকে কাফি দিতে এসেছিল।
আপনি ‘কাফে দ্য নীল’-এর একজন নিয়মিত আড্ডাবাজ। আপনি কাফেতে প্রবেশ করার পরে আড্ডার সদস্যরা বিভিন্নভাবে আপনাকে সমাদর করবেন। কেউ বলবেন ‘শুভ দিবস’, কেউ হয়তো বলবেন ‘এই যে’, কেউ আবার আপনাকে দেখে একুট হালকা করে হাসবেন, কেউ আবার এসব না-করে নিজের মুখটি খবরের কাগজের আড়ালে রেখেই কাগজখানা ঈষৎ দুলিয়ে দেবেন। এমন সময় ওয়েটার আপনার জন্য কফি নিয়ে আসবে। সে ঠিক জানে যে আপনি কতটা কড়া, কতখানি চিনি এবং কোন্ ঢঙের কাপে কফি পান করতে পছন্দ করেন। এমন সময় অর্থাৎ ওয়েটার কফির পাত্র নিয়ে আপনার সামনে উপস্থিত হলেই আপনি তার কাছে জানতে চাইবেন যে, আপনার নামে কোনো চিঠিপত্র এসেছে কি না।
১৬। ‘জানে আজ আপনি দরাজ হাতে বখশিশ দেবেন না।’-যে জানে তার এমন জানার কারণ লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য অংশে ‘কাফে দ্য নীল’-এর ওয়েটারের কথা বলা হয়েছে।
ওয়েটার যখন আপনাকে কফি দিতে আসবে, তখন আপনি তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারবেন যে, আপনার নামে কোনো চিঠি আসেনি। গৃহিণীর ভয়ে আপনি আপনার প্রিয়াকে কাফের ঠিকানা দিয়েছিলেন। আপনার কোনো ফোন এসেছিল কি না জানতে চাইলে ওয়েটার আপনাকে জানাবে-ফোন আসেনি, তবে আপনার আড্ডার সদস্য ইউসুফ বে আপনাকে বলতে বলেছেন যে, তিনি একুট দেরিতে আসবেন। আপনি যেন না যান-সে-কথাও ওয়েটার আপনাকে জানাবে। তখন আপনি বিরক্তির সঙ্গে আবার জানতে চাইবেন যে, আপনার কোনো চিঠি বা ফোন আছে কি না। ওয়েটার কাঁচুমাচু হয়ে ‘না’ বলবেন। এই অবস্থায় ওয়েটার বুঝতে পারবে যে, আপনার মনের অবস্থা তখন ভালো নেই, কারণ আপনি আশা করেছিলেন আপনার জন্য আপনার প্রিয়া কোনো চিঠি বা ফোন পাঠাবেন কিন্তু তা না-হওয়ায় আপনি হতাশ হয়েছেন। তাই এই অবস্থায় আপনার কাছে বখশিশ আশা করা যায় না। এই কারণেই ওয়েটার জানে যে আজ আপনি দরাজ হাতে বখশিশ দেবেন না।
১৭। ‘আরো চটে গিয়ে বলবেন,’-কে, কার ওপরে, কেন চটবেন?
উত্তর: ‘কাফে দ্য নীল’-এর একজন আড্ডাবাজ রমজান বে-র ওপরে আপনি চটে যাবেন।
কাফের ওয়েটারের কাছে আপনি (কথক) জানতে পারেন যে, আপনার কোনো চিঠি বা ফোন নেই। এর পরেই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আপনি আপনার প্রিয়ার জন্য একটি চিঠি লিখে যখন ওয়েটারকে সেই চিঠিটি ডাকে দেওয়ার কথা বলবেন, তখন রমজান বে জানতে চাইবেন আপনি কাকে চিঠি লিখলেন। রমজানের কথায় আপনি রেগে গেলে তিনি আপনাকে জানাবেন যে, আপনার প্রেমিকা ‘বিল্কিস’ আপনাকে সাড়ে এগারোটার সময় ‘ফামিনা’ সিনেমার গেটে দেখা করতে বলেছে। এই সংবাদে আপনি আরও রেগে যাবেন। কারণ এই এক ঘণ্টা ধরে আপনি অনেক পরিশ্রম করে অনেক ভাবনাচিন্তা করে প্রেমিকাকে চিঠি লিখেছেন, হয়তো দুশ্চিন্তাও করে থাকবেন, কারণ প্রেমিকা আপনাকে কোনো চিঠি বা ফোন করেনি। তা ছাড়া রমজান বে জেনেশুনে ইচ্ছে করেই এতক্ষণেও তাঁকে খবরটি দেননি। খবরটি আগে পেলে তাঁর চিঠি লেখার পরিশ্রম বা ভাবনাচিন্তা করতে হত না; শুধু শুধু চিঠি লেখার জন্য সময় নষ্টও হত না। এইসব কারণেই আপনি (কথক) রমজান বে-র কথায় চটে যাবেন।
১৮। ‘আলোচনার বিষয়বস্তু হটতে হটতে পৌঁছবে সেই সনাতন প্রশ্নে’-সনাতন প্রশ্নটি কী এবং সেই প্রসঙ্গে লেখকের অভিমত লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখকের মতে, আলোচনার সনাতন প্রশ্নটি হল-“কোন্ দেশের রমণী সবচেয়ে সুন্দরী হয়?”
প্রেম একটি আলোচনার মুখরোচক বিষযবস্তু। সেই আলোচনা চলতে চলতে বিষযবস্তু গিয়ে পৌঁছোয় সুন্দরী মহিলাকে কেন্দ্র করে। কোন্ দেশের রমণী সবচেয়ে বেশি সুন্দরী-এই প্রশ্নটি খুব জনপ্রিয় একটি প্রশ্ন। লেখকের মতে প্রশ্নটি অবান্তর নয়। তা ছাড়া লেখক দেশ-বিদেশের বহু স্থানে ঘুরেছেন, ফলে নানা দেশের নানা রমণীকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। যাঁরা দেশ-বিদেশে ঘোরেননি তাঁদের রমণীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু লেখকের সেই ধারণা আছে। তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তিনি ভেবে দেখেছেন এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া যায় না। কারণ সবচেয়ে সুন্দরী রমণী কোনো একটি বিশেষ স্থানের হতেই পারে না। তা ছাড়া এমন বিষয়টি অনেকখানিই ব্যক্তিনির্ভর। তাই লেখক বুদ্ধিদীপ্ত অভিমত ব্যক্ত করেন- “এনারা আছেন, ওনারাও আছেন”। লেখকের এমন অভিমতে কেউই অখুশি হবে না।
১৯। ‘আড্ডা অনায়াসে নিজের মুখে ঝাল খেয়ে নিতে পারে।’-কোন্ প্রসঙ্গে, কেন বক্তা এমন ধারণা পোষণ করেছেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচনা করতে করতে লেখক বলেন উপযুক্ত প্রাণাভিরাম বিষয় নিয়ে আলোচনা করার যদি কোনো সত্যকার ‘হক্ক’ থাকে তবে তা আছে কাইরো শহরের। এই প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নের উক্তিটি করেছেন।
লেখক বহু দেশ-বিদেশে ঘুরেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি অনুভব করেছেন যে, কাইরোতে নানা জাতের, নানা ভাষাভাষী মানুষের আনাগোনা আছে। তিনি বলেন, কাইরোতে খাঁটি বাসিন্দারূপে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে গ্রিক, আরবি, তুর্কি, হাবশি, সুদানি, ইতালীয়, ফরাসি, ইহুদি এবং আরও নানান ধরনের মানুষ। এদের কেউ কেউ বোরখা পরেন তবু অক্লেশে বলা যায় যে এরা কাফের দরজার দিকে মুখ করে বসে এবং আড্ডার বিষয়বস্তুর সব স্বাদই তারা অনুভব করতে পারে। একইভাবে আড্ডাও এদের কাছ থেকে বিষযবস্তু পেয়ে সমৃদ্ধ হয়। এই কারণেই লেখক (বক্তা) প্রশ্নোদ্ভূত ধারণাটি পোষণ করেছেন।
২০। ‘মিশরী আড্ডাবাজরা দৈবাৎ একই আড্ডায় জীবন কাটান।’-উক্তিটির মাধ্যমে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটি করেছেন স্বয়ং লেখক।
লেখক আলোচ্য প্রবন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, ‘মিশরী মাত্রই আড্ডাবাজ’। দৈনন্দিন জীবনের একটা বড়ো অংশই তাঁরা আড্ডায় কাটিয়ে দেন। তবে একই আড্ডায় তাঁরা সময় কাটান না। একই ব্যক্তি বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন কাফেতে আড্ডা দেন। কেউ হয়তো অফিস থেকে ফেরার পথে ‘কাফে দ্য নীল’-এর উত্তর-পূর্ব কোণে বসেন। সেই টেবিলে হয়তো তাঁর পাঁচজন বন্ধু আড্ডা দেন। সেই আড্ডার সর্বমোট সদস্য হয়তো দশজন। কিন্তু সবাই সবদিন আসেন না। সেই ব্যক্তি আবার সপ্তাহে দু-দিন বাড়ির পাশের সেমিরামিস কাফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসেন। ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডাবাজরা আবার তাঁদের চেনেন না। এ থেকেই বোঝা যায় যে, কোনো আড্ডাবাজই একই আড্ডায় সারাজীবন কাটান না। অর্থাৎ একই মানুষ বিভিন্ন আড্ডায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
২১। ‘এ আড্ডার সদস্যদের সবাই সবজান্তা।’-যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের সম্পর্কে এমন কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। কথকের বাড়ির পাশের ‘সেমিরামিস কাফে’-তে যে চ্যাংড়ার দল আড্ডা দেয় তাদের সম্পর্কে প্রশ্নের কথাটি বলা হয়েছে।
চ্যাংড়ার দল রাজনীতি, সাহিত্য থেকে শুরু করে জগতের সব কিছুকেই আড্ডার আলোচনার বিষয়বস্তু করে তুলতে পারে। এরা মিশর তথা সমগ্র পৃথিবীর সকল গোপন বা গুরুত্বপূর্ণ খবর রাখে। এদের কথাবার্তা বা হাবভাব দেখে কোনো সন্দেহ থাকবে না যে, এদের প্রত্যেকের চোখের সামনে অদৃশ্য, অশ্রুত টেলিপ্রিন্টার খবর জানিয়ে যাচ্ছে এবং সেইসব খবরের জোগান দিচ্ছেন “রাশার বেরিয়া, জর্মানির হিমালয় এবং কলকাতার টেগার্ট”। এঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু শুনলে মনে হতে পারে এঁদের সাহায্য ছাড়া মিশর তথা দুনিয়ার বাদবাকি সরকারগুলি চলছে কীভাবে! মনে হবে পৃথিবীতে এমন কোনো বিষয় নেই, যাদের সম্পর্কে এখানকার আড্ডাবাজরা জানেন না। এই কারণেই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।
২২। ‘আপনি নির্ঘাত শেষ বাস মিস করবেন।’-বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো।
অথবা, ‘বন্ধুর ফ্ল্যাটে সোফার উপর চতুর্থ যাম যাপন করে পরদিন সকালবেলা বাড়ি ফিরবেন।’-কেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখক তথা বক্তা মধ্যম পুরুষের উদ্দেশ্যে কথাটি বলেছেন। যদি আপনি শহর থেকে মাইল তিনেক দূরে কোনো কাফেতে যান, তবে সেখানকার আড্ডাবাজরা দু-হাত তুলে আপনাকে স্বাগত জানাবে। কারণ আপনি সেখানে যান কালেভদ্রে। তাই আপনাকে কাছে পেয়ে তারা তাদের পুরোনো আলোচ্য বিষয়গুলিকে নতুন করে আলোচনা করার সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা আপনার রায় জানতে চাইবে। আপনি যে রায়ই দিন-না-কেন আপনার ছাড়া পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। আপনি গান্ধির দেশের লোক, আপনি যতই বলার চেষ্টা করুন গান্ধির সঙ্গে আপনার কোনো যোগাযোগ নেই-তাতে কোনো লাভ হবে না আপনার। কারণ আপনার জ্ঞানগম্যিতে আড্ডার কারও কোনো সন্দেহ নেই। তাদের ধারণা আপনি ইন্দ্রিয় ধারণ করেন। কাজেই আলোচনা এবং রায়দান থেকে বেরিয়ে আসতে আপনি পারবেনই না। আর এর ফলে আড্ডাতেই আপনার অনেকটা সময় ব্যয় হবে। সেই কারণেই নিশ্চিত করেই আপনি শেষ বাসটি ‘মিস করবেন’। তাই সেই রাতে বন্ধুর ফ্ল্যাটে সোফার ওপর শুয়ে রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে আপনাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
১। ‘আমার তাতে আনন্দই হল।’-বক্তার আনন্দের কারণ কী?
উত্তর: প্রশ্নে উক্ত কথাটির বক্তা হলেন ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। আড্ডা সম্পর্কে কয়েকটি ভালো লেখা বাংলায় বেরোবার পরে লেখকের চোখে পড়ে ইংরেজিতেও ‘আড্ডা’ সম্পর্কে লেখা বেরোচ্ছে। এ যেন চন্ডীমণ্ডপের ভট্টাচার্য্য মশাই এবং জমিদার হাবেলির মৌলবী হঠাৎ কোট-প্যান্ট-কামিজ পড়ে গড়্গট্ করে স্টেটসম্যান অফিসে ঢুকছেন। আড্ডার এই প্রসারতাই বক্তার আনন্দের কারণ।
২। ‘বাঙলার বাইরে নাকি আড্ডা নেই।’-এবিষয়ে লেখকের অভিমত কী?
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে এদেশের আড্ডাবাজরা বলেন যে, বাংলার বাইরে নাকি আড্ডা নেই। লেখকের মতে আড্ডাবাজদের এরূপ কথা যেমন ঠিক, তেমন ভুলও। অর্থাৎ লেখকের মতে বহু দেশেই আড্ডা আছে কিন্তু তাদের রূপ আমাদের বাংলা দেশের আড্ডার মতো নয়। আমাদের মতো রসিয়ে বসিয়ে আড্ডার মজা নিতে সবাই জানে না।
৩। ‘অতি উপাদেয় মৎস্য।’- যে মৎস্যের কথা বলা হয়েছে স্থানভেদে তার নামের বিভিন্নতা উল্লেখ করো।
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের উদ্ধৃত অংশে ইলিশ মাছের { কথা বলা হয়েছে। অতি উপাদেয় এই ইলিশ মাছের নাম স্থানভেদে ভিন্ন। যেমন-সিন্ধু নদ থেকে ধৃত এই মাছের নাম ‘পাল্লা’, নর্মদা থেকে ধৃত এই মাছের নাম ‘মদার’, গঙ্গা-পদ্মা থেকে ধৃত বাঙালির প্রিয় এই মাছ ‘ইলিশ’, আবার খোট্টা মুলুকে এর নাম ‘হিল্সা’।
8। ‘খোট্টা (মাফ কী জীয়ে) মুন্নুকে পৌঁছনর পর তার নাম হয় হিল্সা’-‘তার নাম’ বলতে কার নামের কথা বলা হয়েছে এবং ‘খোট্টা মুল্লুক’ কোথায়?
উত্তর : ‘তার নাম’ বলতে গঙ্গা-পদ্মা উজিয়ে যে মাছ বাঙালিকে আকুল করে তোলে, সেই ইলিশ মাছকে বলা হয়েছে।
‘খোট্টা’ বলতে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের হিন্দি ভাষাভাষীদের বোঝানো হয়। তাই ‘খোট্টা মুল্লুক’ বলতে উক্ত স্থানগুলিকেই বোঝানো হয়েছে।
৫। ‘তফাৎ মাত্র এইটুকু’-কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে ‘আড্ডা’-র নানান প্রকার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক বলেছেন ‘ইলিশ’ মাছ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। তবে বাঙালিরা ইলিশ মাছ যে পদ্ধতিতে রান্না করে, অন্যরা সেই পদ্ধতিতে করে না। অর্থাৎ একই মাছ ‘ইলিশ’-এর রন্ধন পদ্ধতির বিভিন্নতা প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন।
৬।’ একমাত্র তাঁরাই নাকি আড্ডা দিতে জানেন।’-যাঁরা এ আড্ডার কথা বলেন তাঁদের আড্ডার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, কাইরোর আড্ডাবাজরা বলেন যে কেবল তাঁরাই নাকি আড্ডা দিতে জানেন। আর তাদের আড্ডার একটি বৈশিষ্ট্য হল-কোনো অবস্থাতেই তাদের আড্ডা কারও বাড়িতে বসে না।
৭। ‘কফির দাম ছ’পয়সা।’-কোথাকার কফির দাম ছ’পয়সা এবং সেই কফি কেমন?
উত্তর : ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তার কাইরোবাসী আড্ডাবাজ বন্ধুদের সাথে যে কাফেতে বসে আড্ডা দিতেন কাইরোর সেই ‘কাফে দ্য নীল’ বা ‘নীলনদ কাফে’-তে প্রতি পাত্র কফির দাম ছিল ছ’পয়সা।
এখানকার কফির বৈশিষ্ট্য ছিল-রাবড়ির মতো ঘন কফি কিন্তু তা দুধহীন, ফলে কফির রং হল কালো।
৮। ‘অতি উত্তম আরবী কবিতা লেখে’- কবির নাম উল্লেখ করে তাঁর কবিতার আসল বক্তব্য কী?
উত্তর: জাতিগতভাবে ফরাসি কিন্তু কয়পুরুষ ধরে কাইরোর বাসিন্দা জুর্নো অতি উত্তম আরবি কবিতা লেখেন।
জুর্নোর কবিতার আসল বক্তব্যবিষয় হল-তিনি তলওয়ার চালিয়ে আড়াই ডজন বেদুইনকে ঘায়েল করে প্রিয়াকে উটের ওপর তুলে মরুভূমির দিদিগন্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন।
৯। ‘ঝগড়া-কাজিয়ায় সে কস্মিনকালেও হিস্যা নিত না;’-যার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে সে আড্ডার সময় কী করত?
উত্তর : কাইরোতে বসবাসকারী জাতিগতভাবে মার্কোস সম্পর্কে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলা হয়েছে। আড্ডায় অংশগ্রহণ করলেও অধিকাংশ সময় মার্কোস চেয়ারে হেলানে মাথা রেখে আকাশের দিকে হাঁ করে ঘুমোতেন অথবা খবরের কাগজ থেকে তুলোর ফাটকা বাজারের তেজি-মন্দির (বুল-অ্যান্ড বিয়ার) হালহকিকৎ মুখস্থ করতেন।
১০। ‘ঐ কাফেতে আমি রোজ সকাল-সন্ধ্যা যেতুম।’-বক্তা কোন্ কাফেতে, কেন রোজ যেতেন?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটির বক্তা হলেন ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা কাইরোতে অবস্থিত ‘কাফে দ্য নীল’ বা ‘নীলনদ কাফে’-তে যেতেন।
লেখক কাইরোর যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির গা ঘেঁষেই ‘কাফে দ্য নীল’ বা ‘নীলনদ কাফে’-টি অবস্থিত ছিল। তাই নিছক কফি পানের উদ্দেশ্যেই লেখক প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ওই কাফেতে যেতেন।
১১। ‘হঠাৎ খেয়াল গেল কাফের কোণের আড্ডাটির দিকে।’-বক্তার কখন এমন খেয়াল হয়েছিল?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটির বক্তা হলেন ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। লেখকের বাড়ির গা ঘেঁষেই ছিল নীলনদ কাফে। কাইরোতে তখনও লেখক কাউকে বড়ো একটা চিনতেন না, ছন্নছাড়ার মতো এদিকে-ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর দেশভ্রমণ যে কতটা পীড়াদায়ক সে বিষয়ে ‘কেতাব’ লিখবেন বলে ভাবছিলেন। এমন সময়েতেই তাঁর খেয়াল পড়েছিল ‘নীলনদ কাফে’-র উত্তর-পূর্ব কোণের কাউন্টারের গা ঘেঁষে বসা আড্ডাটির দিকে।
১২। ‘এক ফরাসী কবি বলেছেন,’-উক্তিটির উৎস লিখে ফরাসি কবির বক্তব্যটি লেখো।
উত্তর: উদ্ধৃত উক্তিটির উৎস হল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ। জনৈক ফরাসি কবি তাঁর ব্যক্তিজীবনের ব্রাহ্মমুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, প্রেমের সবচেয়ে মহান দিবস সেদিন, যেদিন প্রথম তিনি তাঁর প্রিয়াকে বলেছিলেন যে তিনি তাঁকে ভালোবাসেন।
১৩। ‘ভাবখানা ভুল লোককে বাছা হয়নি।’- কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটি করেছেন লেখক স্বয়ং। লেখক নীলনদ কাফেতে প্রথম যখন যেতেন, তখন সেখানকার কারও সঙ্গেই লেখকের যোগাযোগ ছিল না। তবে যখন সেই কাফের আড্ডাবাজদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়, তখন অল্পসময়েই সেখানকার আড্ডাবাজরাও বুঝে যায় যে, বক্তা নিজেও একজন ভালো আড্ডাবাজ। অর্থাৎ লেখক যে আড্ডাবাজ সে-কথা প্রসঙ্গে লেখক নিজেই উক্তিটি করেছেন।
১৪। ‘জুর্নো তাড়া লাগিয়ে বললেন,’-জুর্নো কে এবং তিনি কী বললেন?
উত্তর: জুর্নো জাতিগতভাবে ফরাসি কিন্তু কয়েকপুরুষ ধরে তিনি কাইরোতেই বসবাস করেন, তিনি আরবি ভাষায় ভালো কবিতা লেখেন।
‘কাফে দ্য নীল’-এর ছোকরা লেখকের পক্ষে আড্ডাবাজদের সামনে কিছু বলার চেষ্টা করলে, জুর্নো ওই ছোকরাকে তাড়া লাগিয়ে বলে- ‘ছোঁড়া’ যেন ৪ বেশি জ্যাঠামো না-করে। আবার লেখকের দিকে তাকিয়ে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলে-তিনি (লেখক) ভালো আরবি বলেন।
১৫। ‘রবিঠাকুর বলেছেন’-রবিঠাকুরের বক্তব্যটি হুবহু উল্লেখসহ কোন্ প্রসঙ্গে লেখক তা ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে ব্যবহার করেছেন লেখো।
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে প্রকাশিত রবিঠাকুরের বক্তব্যটি হল-
“এত বলি সিক্তপক্ষ্ম দুটি চক্ষু দিয়া
সমস্ত লাঞ্ছনা যেন লইল মুছিয়া
বিদেশীর অঙ্গ হতে-“
‘কাফে দ্য নীল’ কাফের জনৈক আড্ডাবাজ জুর্নো লেখকের আরবির প্রশংসা করে আড্ডার সঙ্গী হিসেবে সাদরে তাঁকে গ্রহণ করেন এবং সেইসঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে লেখকের প্রবাসলাঞ্ছনার অবসান ঘটান। এই প্রসঙ্গেই লেখক আলোচ্য প্রবন্ধে রবিঠাকুরের উক্তিটি ব্যবহার করেছেন।
১৬। ‘দুম্ করে রমজান বে বললে,’-রমজান বে কে এবং তিনি কী বলেছিলেন?
উত্তর : ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এ যে আড্ডাবাজদের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন ছিলেন রমজান বে, তিনি ছিলেন খাঁটি মিশরী মুসলমান।
রমজান বে বলেছিলেন যে, তাঁর মামা আগের বছর হজ করতে গিয়েছিলেন, সেখানে কয়েকজন ভারতীয়দের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তারা নাকি দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে আর অবশিষ্ট সময় চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারে।
১৭। ‘তারা নাকি কোন্ এক প্রদেশের-বিঙ্গালা’-বক্তার এই বক্তব্যে লেখকের মনোভাব কী হয়েছিল?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটির বক্তা বলেন ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে উল্লিখিত জনৈক আড্ডাবাজ রমজান বে। রমজান বে যখন অশুদ্ধ উচ্চারণে বাংলাকে ‘বিঙ্গালা’, ‘বাঙালী’ বলতে থাকেন তখন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনে মনে আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং উত্তেজনার বসেই তিনি রমজানকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি যে প্রদেশের কথা বলছেন সেটা ‘বাঙলা’ কি না।
১৮। ‘কখনো তো এত গর্ব অনুভব করিনি’-বক্তা কখন, কীসের জন্য গর্ব অনুভব করেন?
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক তথা বক্তা সৈয়দ মুজতবা আলী কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এ রমজান বে-র মুখে যখন আড্ডাবাজ হিসেবে বাঙালিদের প্রশংসা শোনেন, তখন আড্ডাবাজ হিসেবে নিজেও গর্ব অনুভব করেন। লেখক ভাবেননি যে সুদূর কাইরো মুলুকে বসে তাঁর জাতভাইদের প্রশংসা শুনবেন। তাই তাঁর কাছে বিষয়টি গর্বের হয়ে উঠেছিল।
১৯। ‘আমি ভাবলুম, রাশভারী লোক,’-বক্তা কাকে, কেন ‘রাশভারী লোক’ বলে ভেবেছিলেন?
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের লেখক তথা বক্তা সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁদের আড্ডার গ্রিক সদস্য মার্কোসকে রাশভারী লোক বলে ভেবেছিলেন।
‘কাফে দ্য নীল’-এ নতুন সদস্য হিসেবে আড্ডাবাজদের সঙ্গে বক্তার প্রথম পরিচয় ঘটার সময় মার্কোস কেবল একবার বক্তাকে উদ্দেশ্য করে ‘সালাম আলাইক্’ বলেই খবরের কাগজের পিছনে মুখ লুকান। লেখক তথা বক্তার মনে হচ্ছিল আড্ডার কোনো কথাতেই মার্কোসের কোনো মন ছিল না। মার্কোসের এমন আচরণেই বক্তা তাঁকে রাশভারী বলে মনে করেছিলেন।
২০। ‘সে সম্বন্ধে ঈষৎ গবেষণা করা যাক্!’-প্রসঙ্গ নির্দেশ করো।
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখক বলেছেন যে, ইজিপশিয়ন সিগারেট জগদ্বিখ্যাত। কিন্তু তার কারণ অনুসন্ধান করি না আমরা। বিশেষত মিশরই কেন তরিবৎ করে সুগন্ধি সিগারেট বানানো শিখল, এই বিষয়ে তত্ত্ব ও তথ্য অনুসন্ধান প্রসঙ্গেই লেখক উক্তিটি করেছেন।
২১। ‘ইজিপশিয়ন সিগারেট’-এর বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: ইজিপশিয়ন সিগারেট হল একপ্রকার সুগন্ধিযুক্ত সিগারেট। গ্রিক তামাকের সঙ্গে খাঁটি মিশরের খুশবাই মাখিয়ে মিশরের দক্ষ কারিগরগণ এইপ্রকার সিগারেট তৈরি করতেন।
২২। জাহাজে তামাকের গন্ধ ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখা হয় কীভাবে?
উত্তর: সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে কথা প্রসঙ্গে তামাকের গন্ধ ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখার উপায়টি বিবৃত করেছেন। তিনি বলেছেন, যে জাহাজে কাঁচা তামাক বোঝাই করা হয়েছে, তাতে কড়া গন্ধওয়ালা অন্য কোনো বস্তু নেওয়া হয় না; কারণ তাতে উক্ত পদার্থের গন্ধে তামাকের গন্ধ ১ ও স্বাদ নষ্ট হয়। অর্থাৎ কাঁচা তামাক যে জাহাজে নেওয়া হয় সেখানে কড়া গন্ধযুক্ত অন্য কোনো পদার্থ না-নিয়ে তামাকের গন্ধ ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
২৩। ‘কিচ্ছু বাড়িয়ে বলছিনে।’-বক্তা কী বাড়িয়ে বলছেন না?
উত্তর: অজন্তার দেয়াল ও ছবির রং কোন্ কোন্ মশলা দিয়ে বানানো হয়েছিল, পাঠান যুগে পাথরে পাথরে জোড়া দেওয়ার জন্য কী মালমশলা কতটা পরিমাণে লাগানো হয়েছিল সেইসকল তত্ত্ব বহু চেষ্টা করেও আমরা বের করতে পারিনি। এই কথাগুলি সম্পূর্ণ সত্য। বক্তা এই কথাগুলিই এতটুকুও বাড়িয়ে বলেননি।
২৪। ‘মিশরীয়ও ঠিক সেই রকম সুগন্ধ-তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যায়নি।’-বক্তা কেন এরূপ কথা বলেছেন?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বলেছেন, প্রাচীন মিশর তাদের মমিগুলোকে পচনের হাত থেকে কীভাবে বাঁচাতেন বর্তমানে সেই তত্ত্ব ভুলে গেলেও, তামাকে কীভাবে খুশবাই জোড়া যায়-সেই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভোলেনি তারা। বক্তার মতে ঝড়তি-পড়তি যতটুকু এলেম এখনও মিশরীয়রা বজায় রেখেছেন, তার সাহায্যে তামাকের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখেই তামাকের সুগন্ধ বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই বক্তা প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন।
২৫।’ছোকরা এসে আপনাকে সেলাম ঠুকবে।’-কোন্ ছোক্রা, কখন এমন করবে?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বর্ণিত ‘কাফে দ্য নীল’-এর বুট পালিশকারী ছোকরার কথা বলা হয়েছে।
মিশরীয়দের চরম দুর্বলতা তাদের জুতোর পালিশকে নিয়ে। তাই কাফেতে প্রবেশ করা মাত্রই সেখানকার জুতো পালিশের ছোকরা তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে সেলাম ঠুকবে এবং জুতো পালিশ করে দেওয়ার অনুমতি চাইবে।
২৬। ‘তাই দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলবেন,’- দাঁতমুখ খিঁচিয়ে কে, কাকে, কী বলবেন? উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বর্ণিত কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এর বুট পালিশকারী ছোকরা যখন সেখানে আগত কোনো ব্যক্তিকে সেলাম ঠুকবে, তখন আগত ব্যক্তি (আপনি) দাঁতমুখ খিঁচিয়ে সেই ছোকরাকে বলবেন ‘যা, যা’। আসলে এর মাধ্যমে বক্তা ছোকরাকে বলতে চাইবেন ‘আচ্ছা পালিশ কর’।
২৭। ‘ইতিমধ্যে আপনার কফি এসে উপস্থিত।’- কোথায়, কখন এমন হবে?
উত্তর: প্রশ্নে উক্ত ঘটনাটি ঘটবে কাইরোর ‘কাফে দ্য নীল’-এ।
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখক জানিয়েছেন যে, আড্ডাবাজদের মধ্যে কেউ কাফেতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আড্ডার কোনো সদস্য বলবেন ‘শুভ দিবস’, কেউ বলবেন ‘এই যে’, কেউ কেউ একটু মৃদু হাসবেন, কেউ আবার খবরের কাগজের আড়ালে মুখ রেখেই কাগজটি সামান্য দুলিয়ে দেবেন। এমন সময়েতেই আগন্তুকের টেবিলে কফি চলে আসবে।
২৮। ‘যাও, চিঠির কাগজ নিয়ে এস।’-বক্তা কাকে, কেন এমন নির্দেশ দিয়েছেন?
উত্তর : প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘কাফে দ্য নীল’-এ আগত জনৈক আড্ডাবাজ বক্তা কাফের ওয়েটারকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। রোলটা চালক মকুবরা সকি
বক্তা ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর নামে কোনো চিঠি বা ফোন এসেছিল কি না। ওয়েটার নেতিবাচক উত্তর দিলে, বক্তা তাঁর প্রিয়াকে চিঠি লেখার উদ্দেশ্যে ওয়েটারকে প্রশ্নোদ্ভূত নির্দেশ দিয়েছিলেন। রফিক
২৯। ‘তখন হঠাৎ রমজান বে শুধাবে,’-রমজান বে কখন, কী শুধাবে? ২
উত্তর: ‘কাফে দ্য নীল’-এর ওয়েটার মিনিটের মধ্যে কাফের নাম-ঠিকানা লেখা চিঠির কাগজ, খাম, ব্লটিং প্যাড যাবতীয় সরঞ্জাম উপস্থিত করলে, আপনি গভীর মনোযোগের সঙ্গে একটি প্রেমপত্র লিখে ঘণ্টাখানেক পরে আড্ডার টেবিলে ফিরে এসে ওয়েটারকে যখন উক্ত চিঠিটা ডাকে ফেলতে বলবেন, তখনই রমজান বে আপনাকে শুধাবেন যে-আপনি কাকে চিঠিটা লিখলেন।
৩০। ‘রমজান বে আরও উদাস সুরে বলবে,’-রমজান বে কাকে, কী বলবেন? উত্তর: রমজান বে ‘আড্ডা’ প্রবন্ধের কথককে উদাস সুরে বলবেন।
কথক প্রায় এক ঘণ্টা ধরে প্রিয়াকে একটি প্রেমপত্র লেখার পরে রমজান বে-র মুখেই শুনতে পাবেন কথকের প্রেমিকা কথককে ‘ফামিনা’ সিনেমার গেটের কাছে সাড়ে এগারোটায় দেখা করতে বলেছে। তখন কথক রমজানের কাছে জানতে চান যে, এ কথা আগে কেন বলেনি? তখন রমজান আরও উদাস সুরে কথককে বলবেন-কথকদের দেশের প্রেমের রেওয়াজ তিনি জানেন না, তবে কাইরোতে প্রিয়া পাশের ঘরে থাকলেও, আর-এক ঘরে বসে প্রেমিকা পাতার পর পাতা প্রেমপত্র লিখেই চলে।
৩১। ‘এতক্ষণ একটা মুখরোচক আলোচনার বিষয়বস্তু উপস্থিত হল।’-আলোচনার বিষয়বস্তুটি কেমন ছিল?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে বর্ণিত আলোচনার বিষয়বস্তুটি ছিল প্রেম। প্রাবন্ধিকের মতে-রেশনশপ খোলা মাত্রই নারী-পুরুষ যেভাবে দোকানে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সমগ্র আড্ডাটিও তেমনই প্রেমপত্র লেখার সময়-অসময়, মোকা-বে-মোকা, কায়দা-কেতা সম্পর্কে আলোচনায় মশগুল হয়ে উঠবে। অর্থাৎ আড্ডা যেন নতুন প্রাণে উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। আলোচনার বিষয়বস্তুটি এমনই ছিল।
৩২। ‘বিষয়বস্তু হটতে হটতে পৌঁছবে সেই সনাতন প্রশ্নে,’-প্রশ্নটি কী এবং এর উত্তরে বক্তা কী বলেন?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে আড্ডার আলোচনার বিষয়বস্তু সরতে সরতে যে সনাতন প্রশ্নে এসে পৌঁছোবে তা হল-‘কোন্ দেশের রমণী সবচেয়ে সুন্দরী হয়।’
বক্তা তথা লেখকের মতে প্রশ্নটা অবান্তর নয়, তবে কিছুটা বুদ্ধিদীপ্তভাবে এবং কৌশল অবলম্বন করেই তিনি উত্তর দেন- ‘এনারা আছেন, ওনারাও আছেন’। অর্থাৎ লেখকের মতে সবচেয়ে সুন্দরী বিশেষ কোনো দেশের হয় না, সুন্দরী সর্বত্রই আছে।
৩৩। ‘সে শহর কাইরো।’- কোন্ প্রসঙ্গে এখানে কাইরোর নাম এসেছে?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। আড্ডার আলোচনার বিষয়বস্তুর ভিন্নতা নিয়ে বক্তা কথাটি বলেছেন। বক্তার মতে উপযুক্ত প্রাণাভিরাম বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সত্যিকারের দাবি যদি থাকে, তবে তা করতে পারে কাইরো কারণ পৃথিবীর • নানা প্রান্তের লোকজন এখানে আড্ডায় অংশগ্রহণ করেন, ফলে বিষয়ের ভিন্নতা থাকেই। এই প্রসঙ্গেই লেখক উক্তিটি করেছেন।
৩৪।’কাইরো ট্যুরিস্টজনের ভূস্বর্গ’-কখন, কেন এমন হয়?
উত্তর: ট্যুরিস্টদের কাছে শীতকালে কাইরো ভূস্বর্গ হয়ে ওঠে।
কাইরোতে সারাবছর খুব সামান্য বৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গ্রীষ্মের কারণে শীতকাল ছাড়া অন্যান্য সময়ে কাইরোতে ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা যেতেই চান না। শীতকালে সেখানে না-গরম, না-ঠান্ডা-নাতিশীতোয় আবহাওয়া। এই প্রকারের আবহাওয়া ট্যুরিস্টদের কাছে অতীব পছন্দের সময়। এই কারণেই শীতকালের কাইরো ট্যুরিস্টদের ভূস্বর্গ।
৩৫।শীতকালে ট্যুরিস্ট ছাড়া আর কারা কাইরোতে আসেন?
উত্তর: সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন শীতকালের কাইরো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্বর্গভূমি। তবে কেবল ভ্রমণপিপাসুরাই নন, অন্যান্যরাও এই সময়ে এখানে আসেন নানা কারণে। যেমন-মার্কিন লক্ষপতিরা আসেন নানা ধান্দায়। তাঁদের খোঁজে আসেন সারা বিশ্বের ডাকসাইটে সুন্দরীরা, আসেন হলিউডের ছায়াছবির নির্দেশকগণ; তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে আসেন একঝাঁক সুন্দরী।
৩৬। ‘কামিনী-কাঞ্চন সম্বন্ধে আলোচনা শাস্ত্রে নিষেধ।’- বিষয়টির প্রসঙ্গ উল্লেখ করো।
উত্তর : কাইরো গ্রীষ্মপ্রধান শহর। বছরে সেখানে অতিসামান্য বৃষ্টিপাত হয়। ফলে গ্রীষ্মের কারণে সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলি জনশূন্য হয়ে পড়ে থাকে। শীতকালে তাই সারা পৃথিবী থেকে দলে দলে লোক আসে সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলিতে। লক্ষপতিরা আসেন নানা ধান্দায়, তাঁদের সঙ্গে আসেন দুনিয়ার নামজাদা সুন্দরীগণ; সেইসঙ্গে আসেন হলিউডের চিত্রপরিচালকগণ। তাঁরা সঙ্গে আনেন একঝাঁক সুন্দরী। সুন্দরীদের কথা চলে আসাতেই লেখক রসিকতার সুরে মনে করিয়ে দেন শাস্ত্রের নিষেধের কথা। শীতকালে কাইরোতে সুন্দরীদের সমাগম প্রসঙ্গেই লেখক প্রশ্নের উক্তিটি করেছেন।
৩৭। ‘এমনকি সাদ জগলুল পাশা পর্যন্ত দিনে অন্তত একবার আড্ডার সন্ধানে বেরতেন।’-সাদ জগলুল পাশার পরিচয় দিয়ে তিনি কীভাবে আড্ডা জমাতেন লেখো।
উত্তর: সাদ্ জগলুল পাশা ছিলেন মিশরের একজন বিপ্লবী এবং রাষ্ট্রনায়ক। তিনি মিশরের জাতীয়তাবাদী ওয়াফদ দলের নেতা ছিলেন।
সাদ জগলুল পাশা কাফেতে প্রবেশ করে টেবিলে গিয়ে বসতেন। তারপর চোখের ইশারায় এঁকে-ওঁকে ডেকে নিয়ে আড্ডা জমাতেন।
৩৮। ‘এরা হয়ত চ্যাংড়ার দল,’-‘এরা’ কারা এবং আড্ডায় এদের আলোচ্য বিষয় কী?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘এরা’ বলতে কাইরোর ‘সেমিরাসিস কাফে’-তে আগত চ্যাংড়ার দল, যারা হয়তো কলেজে পড়ে, কেরানিগিরি করে, বেকার • বা ইনশিওরেন্স-এর এজেন্ট-তাদের কথা বলা হয়েছে।
আড্ডায় এদের আলোচনার বিষয়বস্তু হল রাজনীতি, সাহিত্য বা দুনিয়ার হাজার জিনিস।
৩৯। ‘আপনার মনে আর সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকবে না’-কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এমন উক্তি করেছেন?
উত্তর: ‘আড্ডা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী রসিকতার সুরে বলেছেন যে, যেসকল লোকজন কাইরোর কাফেগুলিতে আড্ডায় অংশগ্রহণ করে, তাদের আলোচনা শুনলে মনে হবে তারা সবাই সবজান্তা। এদের যদি মস্কো, বার্লিন, লন্ডন, দিল্লির বড়োকর্তা করে দেওয়া হয়, তবে দুনিয়ার সকল সমস্যার সমাধান একমুহূর্তে এরা করে দিতে পারে। এই কথা প্রসঙ্গেই লেখক প্রশ্নের মন্তব্যটি করেছেন।
৪০। ‘সে রেওয়াজটা তেমন নেই’-বক্তা কোন্ রেওয়াজ নেই বলে মনে করেছেন?
উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আড্ডা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন স্বয়ং প্রাবন্ধিক। আমাদের দেশে সাধারণভাবে বড়োদের সামনে ছোটোরা সিগারেট, বিড়ি টানে না (অর্থাৎ ধূমপান করে না)। কিন্তু কাইরোতে সেই রেওয়াজটা নেই বলে লেখক মনে করেন। কাইরোর আড্ডাবাজেরা বড়োদের সমীহ করতে পারে কিন্তু বড়োদের সামনে একটুও কুণ্ঠা না-করেই তারা ধূমপান করে।
৪১। ‘আপনার রায় জানতে চাইবেন।’-কারা, কোন্ বিষয়ে আপনার রায় জানতে চাইবেন?
উত্তর: কাইরোর কাফেগুলিতে যাঁরা আড্ডায় জমে ওঠেন তাঁরা আপনার রায় জানতে চাইবেন। আপনি যদি কালেভদ্রে সেই ক্যাফেতে যান, আপনাকে কাছে পেয়ে আড্ডাবাজগণ খুশি-আনন্দের সঙ্গে আপনাকে গ্রহণ করবে। কারণ পক্ষকাল ধরে তারা যেসব বিষয়ে আলোচনা করে করে সেগুলিকে প্রায় চাটনি বানিয়ে ফেলেছেন, সেগুলিই নতুন করে ‘হাড়কাটে ঢুকিয়ে রাম দা ওঁচাবেন’; অর্থাৎ বিষয়গুলির চর্বিতচর্বনের সুযোগ পাবেন তাঁরা এবং উক্ত – বিষয়গুলিতে আপনার রায় জানতে চাইবেন।