ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপে কী কী আইন পাস হয়েছিল

ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপে কী কী আইন পাস হয়েছিল

অথবা, ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপীয় দেশগুলি কী কী ভূমিকা নিয়েছিল

ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপে কী কী আইন পাস হয়েছিল
ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপে কী কী আইন পাস হয়েছিল

ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপীয় দেশগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। সেই সময়কার ইউরোপীয় সমাজ এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল যে, কোনও পুরুষ বা মহিলার মধ্যে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই তাকে ডাইনি বলে মনে করা হত। সমগ্র ইউরোপে প্রায় ১২,০০০ ডাইনি বিচারের ঘটনা ঘটেছিল। তবে ডাইনি দমন সর্বত্র একরকম ছিল না। বিভিন্ন দেশে এর প্রতিক্রিয়া ছিল বিভিন্ন রকম।

ডাইনিবিদ্যার অবসানে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকা

(1) জার্মানি: জার্মানিতে রাজন্যবর্গ এবং বিশপ উভয়েই ডাইনিদের দমনের কথা বলেছিলেন। ১৫৬১ থেকে ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানিতে ৩২২৯টি ডাইনি বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের ঘটনার সাক্ষ্য মেলে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ব্যাপারে শুধু ক্যাথলিক নয় প্রোটেস্ট্যান্টরাও জড়িত ছিল।

(2) ইংল্যান্ড: ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উল্লেখযোগ্য ডাইনি-বিরোধী আইন সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে। রানি প্রথম এলিজাবেথ (Elizabeth I)-এর নির্দেশে প্রবর্তিত এই আইনে বলা হয়, কোনও লোককে হত্যা করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ ডাইনিবিদ্যা প্রয়োগ করে, তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। ডাইনিমন্ত্র প্রয়োগের ফলে যদি কোনও ব্যক্তি দৈহিকভাবে আহত হয় বা তার সম্পদ নষ্ট হয়, তবে সেই ডাইনির এক বছর কারাবাস হবে। ইংল্যান্ডে স্টুয়ার্ট আমলে রাজা প্রথম জেমস (James 1) রানি এলিজাবেথের আইন বাতিল করে আরও এক কঠোর আইন পাসের উদ্যোগ নেন। ফলে পার্লামেন্টে ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে একটি ডাইনি-বিরোধী আইন পাস হয়। এই আইনে শয়তানের আরাধনা নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয় এবং এলিজাবেথের আমলের এক বছরের কারাদণ্ডকে যাবজ্জীবনে রূপান্তরিত করা হয়। রাজা দ্বিতীয় জর্জ (George II)-এর আমলে ১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে শেষ সংসদীয় ডাইনি-বিরোধী আইন পাস হয়। এতে ডাইনি বিদ্যাচর্চাকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না করে এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়। এই আইনটি ইংল্যান্ডে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

(3) স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড: ইংল্যান্ডের অনুকরণে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডেও ডাইনি-বিরোধী আইন পাস করা হয়েছিল। ডাইনি বিদ্যাচর্চা এবং ডাইনিদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা উভয়ই ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় জর্জ ১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে যে ডাইনি-বিরোধী আইন পাস করেন, সেটাই ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডেও প্রচলিত হয়।

(4) অন্যান্য দেশসমূহ: ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ডাইনি-নিধনযজ্ঞ চলেছিল সমানভাবে। স্পেন ও পোল্যান্ডে ব্যাপকভাবে ডাইনি হত্যার ঘটনার কথা জানা যায়। ডাইনি-নিধনের ব্যাপারে শুধু ক্যাথলিক নয়, প্রোটেস্ট্যান্টরাও জড়িত ছিল। ইটালিও ডাইনিদের কঠোরভাবে দমন করাকেই একমাত্র উপায় হিসেবে ধরে নিয়েছিল। তবে ফ্রান্সের পরিস্থিতি উপরোক্ত দেশগুলির তুলনায় কিছুটা মানবিক ছিল।

মূল্যায়ন

এইভাবে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী ও তার পরবর্তীকালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডাইনি অভিযোগে শত শত মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও আইন ডাইনি-নিধনের এই প্রক্রিয়ায় চার্চের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি ভয়াবহ অধ্যায় রচনা করে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top