জাদুবিদ্যা বা ডাইনিবিদ্যার প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করো

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে শক্তিরূপে গণ্য করে তাকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে দুধরনের শক্তির কথা বলা যায়- শুভ শক্তি এবং অশুভ শক্তি। এই শুভ ও অশুভ শক্তির সন্তুষ্টিবিধানের কারণে মানুষ উদ্ভাবন করেছে নানারকম জাদুবিদ্যা ও জাদুমন্ত্রের। এই সকল জাদুবিদ্যা ও জাদুমন্ত্রই ধীরে ধীরে ডাইনিবিদ্যা (Witchcraft)-র রূপ ধারণ করেছে।
ডাইনিবিদ্যার প্রকারভেদ
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাদুবিদ্যা বা ডাইনিবিদ্যার উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ লক্ষ করে একে দুভাগে ভাগ করা হয়-শুক্ল ইন্দ্রজাল বা সাদা জাদু বা White Magic এবং কৃষ্ণ ইন্দ্রজাল বা কালো জাদু বা Black Magic. কিন্তু অনেকে আবার জাদুবিদ্যাকে তিনভাগে ভাগ করার পক্ষপাতী- সাদা জাদু, ধূসর জাদু এবং কালো জাদু। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল।
(1) সাদা জাদু: যে জাদু বা ডাইনিবিদ্যা বা অতিপ্রাকৃত শক্তি মানুষের মঙ্গলসাধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তাকে সাদা জাদু বা White Magic বলা হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, সাদা জাদু প্রয়োগ করে সুরক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, বিভিন্ন রোগনিরাময়, ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়।
(2) ধূসর জাদু: যে জাদু বা ডাইনিবিদ্যা পরোক্ষভাবে মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় ধূসর জাদু বা Grey Magic. ধূসর জাদু ক্ষতিকারক নয় বলে অনেকে একে সাদা জাদুর অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। এই বিদ্যা মূলত মানুষের বিপদাপদ এড়ানো, রোগ- ব্যাধির প্রতিষেধক ও কালো জাদুর প্রভাব এড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
(3) কালো জাদু: কালো জাদু বা Black Magic প্রত্যক্ষভাবে মানুষের শারীরিক, মানসিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। কালো জাদু প্রয়োগ করে জাদুকর বা ডাইনিরা মানুষের দেহে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি, অর্থসম্পত্তির ক্ষতিসাধন ও জীবননাশ পর্যন্ত করে থাকে। এরা রোগ সৃষ্টির জন্য মানুষের মধ্যে রোগের জীবাণু ছড়িয়ে দিত। যেমন বসন্তরোগে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংস্পর্শে আনত, খাবারে বিষ প্রয়োগ করত, পানীয় জলসংগ্রহের জলাশয়ে কলেরা রোগীর মলমূত্র মিশিয়ে দিত। এর পাশাপাশি এরা মন্ত্রশক্তি ও বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে অলৌকিক শক্তিপ্রয়োগের কথাও বলত।