জাদুবিদ্যাকে প্রাক্-বিজ্ঞান বা প্রায়-বিজ্ঞান (Proto Science) বলা হয় কেন

মূলত বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার ও নানাবিধ কৌশলের মাধ্যমে অলৌকিক তথা অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলির সৃষ্টি। দ্বারা দর্শকদের বিস্মিত ও অভিভূত করার প্রক্রিয়াই জাদু বা ম্যাজিক (Magic) নামে। পরিচিত। বস্তুত, জাদুবিদ্যাকে প্রাক্-বিজ্ঞান বা প্রায়-বিজ্ঞান বলার মূল কারণ হল, প্রাথমিক পর্বে অর্থাৎ বিজ্ঞানের বিকাশের পূর্বে মানুষ বস্তু ও প্রকৃতি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ এবং বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণের জন্য জাদুবিদ্যার সাহায্য নিত।
জাদুবিদ্যাকে প্রাক্-বিজ্ঞান বা প্রায় বিজ্ঞান বলার কারণ
(1) প্রাকৃতিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা: ইউরোপের প্রাচীন সমাজব্যবস্থায় প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনা, যেমন- আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রাণীর আচরণ, রোগের উপদ্রব ইত্যাদি ব্যাখ্যার জন্য জাদুবিদ্যা ও অলৌকিক শক্তির ধারণা গৃহীত হত। পরবর্তীকালে এইসব বিষয়গুলির যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার জন্য নানা পরীক্ষানিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
(2) পদ্ধতিগত প্রয়োগ: জাদুবিদ্যার সাহায্যে মানুষ সাধারণত নির্দিষ্ট মন্ত্র, নিয়ম ও বস্তুর ব্যবহার দ্বারা নির্দিষ্ট ফল লাভের চেষ্টা করত। এমনকি প্রাকৃতিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যেও একটি প্রাথমিক পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা করা হত। জাদুবিদ্যার এই পদ্ধতির সঙ্গে বিজ্ঞানের পরীক্ষামূলক পদ্ধতির কিছু মিল রয়েছে।
(3) আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি: ইউরোপে মধ্যযুগে প্রচলিত জাদুবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়গুলি পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। উল্লেখ্য যে, জ্যোতির্বিদ্যার প্রাথমিক রূপ ছিল জ্যোতিষচর্চা এবং রসায়নের প্রাথমিক রূপ হিসেবে অ্যালকেমি বা অপরসায়নবিদ্যা চর্চিত হত।
(4) নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য: জাদুবিদ্যা ও বিজ্ঞান উভয় বিষয়ই বিশ্বব্রষ্মাণ্ডকে বোঝার এবং নিয়ন্ত্রণ করার জ্ঞানদান করে। পার্থক্য এটুকুই যে, জাদুবিদ্যা নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও প্রথার দ্বারা উক্ত কার্যসিদ্ধ করতে চায়। অন্যদিকে, বিজ্ঞান গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষার উপর নির্ভরশীল। উপরোক্ত বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করে বহু গবেষকগণ জাদুবিদ্যা বা Magic-কে Proto Science বা আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশের প্রথম ধাপরূপে বিবেচনা করে থাকেন।