আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করো
আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশের সঙ্গে প্রাচীন জাদুবিদ্যার (Magic) একটি জটিল এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। জাদুবিদ্যা, অ্যালকেমি, রহস্যবাদ, গুপ্তবিদ্যা ইত্যাদি ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের প্রাথমিক রূপ। আসলে জাদুবিদ্যায় প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষানিরীক্ষার পদ্ধতি ব্যবহৃত হত, যা পরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার পথ প্রশস্ত করেছিল।

আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্ক

(1) জাদুবিদ্যার ধারণা ও এর বিভিন্ন ঘরানা: বিশ শতকের প্রারম্ভেই ইউরোপে Magic অর্থাৎ জাদু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার সূচনা হয়েছিল। মনে করা হয় যে, প্রাচীন গ্রিস, ব্যাবিলন, মিশর প্রভৃতি দেশের জাদু তথা তন্ত্রের চর্চা থেকে ইউরোপীয় জাদুবিদ্যার ধারণাটি এসেছে। ফলিত জ্যোতিষ, অ্যালকেমি- এই বিষয়গুলি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। নবজাগরণ পর্বে ইউরোপে জাদুবিদ্যার একটি বিশেষ ঘরানা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, সেটি হল Hermetic Tradition. তাছাড়া মধ্যযুগের শেষলগ্নে ইউরোপে প্রাকৃতিক জাদু বা Natural Magic নামক জাদুবিদ্যাচর্চার আরও একটি নতুন ঘরানার উদ্ভব ঘটতে দেখা যায়। এই পর্বে প্রাকৃতিক জাদুর সূত্রে জ্যোতিষশাস্ত্র ও অ্যালকেমির চর্চা দ্বারা মহাকাশ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি সম্পর্কে জানা সম্ভবপর হয়। ফ্রেজার (Frazer)-এর ভাষায় Magic হল-‘A kind of Primitive Science.’

(2) জাদুবিদ্যা ও বিজ্ঞানের সম্পর্কর বিভিন্ন দিক: আধুনিক বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে অনেকেই জাদুবিদ্যা এবং বিজ্ঞানের সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেননি। জাদুবিদ্যার মূল ভিত্তিই হল অলৌকিক ও রহস্যময় ক্রিয়াকলাপ। অন্যদিকে বিশুদ্ধ পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞানই হলবিজ্ঞানের ভিত্তি। বিজ্ঞানের সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর বলে মনে হলেও গভীর বিশ্লেষণ দ্বারা প্রমাণিত যে, মধ্যযুগে অপরসায়ন ও জ্যোতিষবিদ্যার কিছু চর্চা, যা জাদুবিদ্যা নামে পরিচিত হয়েছিল, সেগুলি আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সহায়ক ছিল। আধুনিক

বিজ্ঞানসাধনায় প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষিত হয়। প্রাচীন জাদুবিদ্যার মধ্যেও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা সক্রিয় ছিল। এই কারণে জাদুবিদ্যা বা Magic-কে অনেকে প্রায় বিজ্ঞান বা Proto Science বলে মনে করেন। প্রচলিত জাদুবিদ্যার দুটি বিশেষ ক্ষেত্র হল অপরসায়ন এবং জ্যোতিষবিদ্যা। অতিপ্রাকৃত শক্তি বা প্রকৃতির গুপ্তশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের উপকারে প্রয়োগ করাই ছিল এই সকল বিদ্যার মূল লক্ষ্য। একই উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলা বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে তাই প্রচলিত জাদুবিদ্যার একটা সেতুবন্ধন লক্ষ করা অসম্ভব নয়। পরিশেষে বলা যায় যে, জাদুবিদ্যা প্রাথমিক বিজ্ঞানের পথনির্দেশ করেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস ও জাদুবিদ্যা থেকে আলাদা হয়ে বিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top