আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণ আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণ আলোচনা করো

অথবা, আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনার কারণসমূহ আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণ আলোচনা করো
আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণ আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞান অবশ্যই প্রাচীন বিজ্ঞানভাবনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। এক বিচারে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের শেষে আলেকজান্দ্রিয়ার দুই বিজ্ঞানী টলেমি (Ptolemy) ও গ্যালেন (Galen)-এর জীবনাবসানকে প্রাচীন বিজ্ঞানচর্চার সমাপ্তিপর্ব বলা যায়। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাজগতে পরিবর্তন আসে- বিকাশ ঘটে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির। আর এভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের পটভূমি রচিত হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল তা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ। নবজাগরণ বা রেনেসাঁর প্রভাবেই আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছিল।

আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি / সূচনার কারণসমূহ

(1) চিন্তার স্বাধীনতা: ষোড়শ শতক নাগাদ ধর্মাশ্রয়ী চিন্তা থেকে মানুষের মানসিক জগতের মুক্তি ঘটে। মানুষ বাস্তব জগৎ ও ব্যক্তিগত উন্নতির কথা চিন্তা করতে শুরু করে এবং পার্থিব জীবনকে সুখকর করতে উদ্যোগী হয়।

(2) সমালোচনার মনোভাব: মধ্যযুগে ইউরোপের মানুষের জীবনকে পোপ ও চার্চ নিয়ন্ত্রণ করত। নবজাগরণের পর্বে সীমিত হলেও মানুষ পোপ ও চার্চতন্ত্রের দুর্নীতির সমালোচনা এবং স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে শুরু করে। এই পথ ধরেই যুক্তিবাদ গড়ে ওঠে।

(3) কৌতূহলী মনন: নবজাগরণ পর্বে মানুষের অজানাকে জানা ও অদেখাকে দেখার কৌতূহল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। জ্যোতিষচর্চা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান, অপরসায়নচর্চা থেকে সূচনা হয় আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার। আদিপর্বের বিজ্ঞানীদের নানান বাধা ও সীমাবদ্ধতাগুলি এযুগে দূরীভূত হতে থাকে।

(4) রাজনৈতিক পটপরিবর্তন: বারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্রের আবিষ্কার তথা ব্যবহার আলোচ্য পর্বে রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গুরুতর পরিবর্তন ঘটায়। এর পাশাপাশি সামন্তসেনা, পোপ ও চার্চ গুরুত্ব হারায়। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতক নাগাদ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সবল রাজতন্ত্র (Absolute Monarchy) প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে এক নতুন পরিবেশ এবং স্থিতিশীলতা গড়ে ওঠে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিজ্ঞানচর্চার সহায়ক ছিল।

(5) বৈজ্ঞানিকদের আবির্ভাব : রবার্ট বয়েল, প্যারাসেলসাস, জর্জ এগ্রিকোলা, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, আইজ্যাক নিউটন, হার্ভে-সহ বহু বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিকদের আবির্ভাব এবং তাঁদের পরীক্ষানিরীক্ষা ও প্রমাণিত সিদ্ধান্তগুলি আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা করে।

(6) অন্যান্য কারণ: আধুনিক যুগের বিজ্ঞানকে প্রেরণা জুগিয়েছিল মধ্যযুগীয় নানা পরীক্ষানিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবনও ছিল বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাছাড়া তৎকালীন আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণির প্রচেষ্টাও আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পরিশেষে বলা যায়, বিজ্ঞান হল একটি স্বকীয় ও স্বতঃপ্রণোদিত বিষয়। ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের ধারা উৎসারিত হয়েছে। গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা বিভিন্ন যন্ত্রের ছবি, আধুনিক বিজ্ঞানের জনক রজার বেকনের দ্বারা আবিষ্কৃত আতস কাচ ইত্যাদি আবিষ্কার আধুনিক বিজ্ঞানের ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top