‘তাওবাদ’ বলতে কী বোঝ

‘তাওবাদ’ বলতে কী বোঝ

অথবা, তাওবাদী দর্শনের মূল দিকগুলি উল্লেখ করো

'তাওবাদ' বলতে কী বোঝ
‘তাওবাদ’ বলতে কী বোঝ

ভূমিকা

প্রাচীন চিনে কনফুসীয়বাদের ন্যায় আরও একটি মতাদর্শ বা দার্শনিক মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেটি তাওবাদ নামে পরিচিত। কিংবদন্তি অনুসারে, এই মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন লাওৎ-সি বা লাওৎ-সু।

(1) উপাদান : তাওবাদী দর্শন সম্পর্কে জানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ বা উপাদান হল তাও-তে চিং। এর রচয়িতা ছিলেন তাওবাদী দর্শনের প্রবক্তা লাওৎ-সি। এই গ্রন্থ থেকে তাওবাদী দর্শন সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করা যায়।

(2) অর্থ: চিনা তাও শব্দের অর্থ হল মার্গ বা পথ। প্রকৃতির মধ্যে মার্গ লাওৎ-সি বা পথের অনুসন্ধান করা হল তাওবাদের মূলকথা। তাওবাদী দর্শনে বলা হয়েছে যে, প্রকৃতিই হল যাবতীয় জ্ঞানের উৎস।

(3) তাওবাদী দর্শনের মূলতত্ত্ব: তাওবাদী দর্শন বিশ্লেষণ করে এর কতকগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যায়। এগুলি হল-

  • প্রকৃতিবাদ: তাওবাদী দর্শনে বলা হয়েছে যে, প্রকৃতিই হল সকল জ্ঞানের উৎস। তাই প্রকৃতি থেকেই সকলের জ্ঞান অর্জন করা উচিত। অর্থাৎ তাওবাদে প্রকৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
  • শান্তিবাদ: তাওবাদী দর্শন মূলত শান্তিবাদী। তাওবাদীরা ছিলেন দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের বিরোধী। তাঁরা সংঘাতপূর্ণ সমাজে সর্বদাই শান্ত ও অবিচল থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
  • আপেক্ষিকতা: তাওবাদীরা মনে করতেন যে, ভালো-মন্দ, জীবন-মৃত্যু প্রভৃতি জগতের সব কিছুই আপেক্ষিক।
  • রাষ্ট্রীয় আদর্শ: তাওবাদে শাসকের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি ছিল শাসকের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী দর্শন।

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায় যে, চিনে কনফুসীয়বাদের মতো তাওবাদী দর্শন ততটা জনপ্রিয়তা অর্জন বা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তথাপি চিনা সংস্কৃতির প্রধান ধারণাসমূহের মধ্যে তাওবাদ একটা ভারসাম্য রক্ষা করেছিল।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top