ভক্তিবাদী আন্দোলনে কবীরের অবদান লেখো

ভূমিকা
ভারতের মধ্যযুগে ভক্তিবাদী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। এই ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা হলেন কবীর।
(1) পূর্ব পরিচয়: কবীরের জন্মগত বৃত্তান্ত সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। কথিত আছে, জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ সন্তান। কিন্তু পালিত হন এক মুসলমান জোলা বা তাঁতি পরিবারে। তিনি প্রথম জীবনে রামানন্দের ভক্ত ছিলেন। তিনি গুরু রামানন্দের কাছে প্রেম ও ভক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার পর ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচার করেন।
(2) মতাদর্শ: কবীরের মতাদর্শের মূলভিত্তিই ছিল প্রেম ও ভক্তি। তিনি মনে করতেন নিছক বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। এর জন্য চাই আন্তরিক ভক্তি ও প্রেম। তিনি বলতেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর মতে, আল্লাহ ও রাম একই ঈশ্বরের পৃথক নাম। তিনি ছিলেন মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। তিনি বলেছেন, “পাথরের মূর্তির মধ্যেই যদি থাকে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান, তাহলে আমি সুবিশাল পর্বতকেই দেবতা হিসেবে পূজা করার পক্ষপাতী।” তিনি ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে বলতেন, “ঈশ্বর মসজিদে নেই, মন্দিরেও নেই, কাবাতেও নেই, কৈলাসেও নেই; আচারেও নেই, অনুষ্ঠানেও নেই…।” তাঁর মতে, ঈশ্বরের অধিষ্ঠান মানুষের হৃদয়ের মধ্যে। তিনি জাতিভেদ প্রথার ঘোরবিরোধী ছিলেন।
অবদান
মধ্যযুগে ভারতের একজন অন্যতম ভক্তিবাদী সাধক হলেন কবীর। তাঁর ভক্তিবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসংখ্য হিন্দু-মুসলমান তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিষ্যরা কবীরপন্থী নামে পরিচিত। তাঁর বাণী ও উপদেশগুলি হিন্দি ভাষায় দু-লাইনের ছড়া বা শ্লোক আকারে লিখিত যা, দোহা নামে পরিচিত। এগুলি হিন্দি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ঐতিহাসিক তাঁরাচাঁদের মতে, “সর্বধর্ম-বর্ণ-সমন্বয়ী প্রেমের ধর্মপ্রচার করাই ছিল কবীরের লক্ষ্য।”