ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে টমাস ক্রমওয়েলের ভূমিকা আলোচনা করো

ভূমিকা
ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন মূলত শক্তিশালী হয়েছিল রাজা অষ্টম হেনরির আমলে। এই কাজে যাঁর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সর্বাধিক কার্যকরী হয়েছিল তিনি হলেন-অষ্টম হেনরির চ্যান্সেলার বা প্রধানমন্ত্রী টমাস ক্রমওয়েল। ধীরে ধীরে তিনি রাজার সমস্ত কাজের একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য সহায়ক থেকে নিয়ন্ত্রক-এ পরিণত হন। ক্রমওয়েলের উদ্যোগে এবং রাজার সমর্থনে ইংল্যান্ডে যে ধর্মসংস্কারের পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয় তা হল-
(1) ক্যাথোলিক চার্চের ক্ষমতা ধ্বংস: ইংল্যান্ডে চলমান ক্যাথোলিক চার্চের ও পোপের দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনাচার রুখতে ক্রমওয়েল ক্যাথোলিক দেশের পরিবর্তে প্রতিবেশী প্রোটেস্ট্যান্ট দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি চার্চের ক্ষমতা ধ্বংস করে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন, এজন্য তিনি পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস করান।
(2) জাতীয় চার্চ প্রতিষ্ঠা: রোমান চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ইংল্যান্ডে জাতীয় চার্চ বা অ্যাংলিকান চার্চ গড়ে তোলা হয়, যার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজার হাতে, পোপের অধীনে নয়।
(3) গ্রেট বাইবেল প্রকাশ: এর আগে ইংরেজিতে অনুবাদ করা বিদেশে মুদ্রিত যেসব বাইবেল ইংল্যান্ডে আনা হয়েছিল ক্রমওয়েল সেগুলিকে বাতিল করেন। তাঁর নির্দেশে মাইলস কভারডাল নতুন করে বাইবেলের ইংরেজি অনুবাদ করেন। ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই বাইবেল Great Bible নামে পরিচিত হয়। এটিকেই ইংল্যান্ডের প্রতিটি চার্চে রাখা হয় এবং জনগণকেও এই বাইবেলই কেনার অনুমতি দেওয়া হয়।
(4) অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি: টমাস ক্রমওয়েল মুখ্য ধর্মীয় আধিকারিক বা ভাইকার জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। এই পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে Act of Supremacy নামে আইন পাস করিয়ে ইংল্যান্ডের সব চার্চের সর্বোচ্চ এবং একমাত্র প্রধান রাজা, এই ঘোষণা করেন।
(5) মঠের প্রাধান্য ধ্বংস: ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডের ছোটো মঠগুলি সম্পূর্ণ বাজেয়াপ্ত করেন এবং বড়ো মঠগুলির ওপর রাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। সমস্ত যাজক ও সন্ন্যাসীদের রাষ্ট্রের নির্দেশ মানতে বাধ্য করেন। প্রতিবাদ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
মূল্যায়ন
যদিও ক্রমওয়েলের ধর্মসংস্কার সংক্রান্ত সমস্ত উদ্যোগের পিছনে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে তা অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছেছিল; তা সত্ত্বেও বলা যায় যে-এই উদ্যোগগুলি ইংল্যান্ডের জনগণের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই উপকারী হয়েছিল। পোপতন্ত্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থেকে মানুষ মুক্তি পেয়েছিল। মঠগুলি ধ্বংস হওয়ায় দরিদ্র মানুষরা অতিরিক্ত ধর্মকর দেওয়ার থেকে রেহাই পেয়েছিল।