ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে রাজা অষ্টম হেনরির ভূমিকা কী ছিল

ভূমিকা
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রকৃতি কিছুটা আলাদা ছিল। এখানে খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে প্রবিষ্ট অনাচার, দুর্নীতির দূরীকরণের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও ক্রিয়াশীল ছিল। প্রকারান্তরে রাজা ও পোপের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দুই ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কারের মূল পটভূমি ছিল। আর এ বিষয়ে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন রাজা অষ্টম হেনরি।
(1) রাজার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য: জার্মানিতে যখন লুথার ধর্মসংস্কার আন্দোলন শুরু করেন তখন অষ্টম হেনরি লুথারের বিরোধিতা করে পোপের কাছ থেকে Defender of Faith আখ্যা পান। কিন্তু পোপের সঙ্গে তাঁর এই সুসম্পর্ক অচিরেই নষ্ট হয় রাজার একান্ত ব্যক্তিগত কারণে। অষ্টম হেনরি প্রথমা স্ত্রী ক্যাথারিনকে বিবাহবিচ্ছেদ করে দ্বিতীয় বিবাহ করতে উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু পোপ স্পেনের রাজকন্যা ক্যাথারিনের বিবাহবিচ্ছেদ করে গোঁড়া ক্যাথোলিক স্পেনের রাজার সমর্থন হারানোর ভয়ে, এই বিবাহবিচ্ছেদে অনুমোদন দিতে চাইছিলেন না। ফলে অষ্টম হেনরি পোপের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
(2) রোমান চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ: অষ্টম হেনরি পোপ ও রোমান চার্চের প্রাধান্য অস্বীকার করে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্টের অধিবেশনে ধর্মসংস্কার সংক্রান্ত কয়েকটি আইন পাস করেন। এর দ্বারা তিনি রোমান চার্চের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ইংল্যান্ডে জাতীয় অ্যাংলিকান চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রচলিত যাজকতন্ত্রের অনাচার ও তা নিয়ে মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে রাজা এই আইনগুলি পাস করেছিলেন। নতুন চার্চ রাজার বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদন করে।
(3) রিফর্মেশন পার্লামেন্ট: অষ্টম হেনরি ও বিশেষ করে চ্যান্সেলার ক্রমওয়েলের উদ্যোগে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে বেশ কিছু আইন পাস হয়, যা ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কারকে সম্পূর্ণ করে।
- অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি: ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই আইনের মাধ্যমে (Act of Supremacy) ইংল্যান্ডের রাজাকে Supreme head of the Church বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে ইংল্যান্ডের চার্চ রাজার নিয়ন্ত্রিত সংগঠনে পরিণত হয়।
- অ্যাক্ট অফ অ্যাপিল: ১৫৩৫-১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে এই আইন পাসের মাধ্যমে পোপের কাছে বিচার প্রার্থনা করার পুরোনো পদ্ধতি বাতিল করা হয়। ইংল্যান্ডের ক্যাথোলিক মঠগুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এইভাবে পার্লামেন্ট-এর সহায়তায় অষ্টম হেনরির আমলে ধর্মসংস্কার সংগঠিত হয় বলে, একে Reformation Parliament বলা হয়।
মূল্যায়ন
এইভাবে প্রথমে রাজার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে পরে তাঁর মন্ত্রী ক্রমওয়েলের উদ্যোগে পার্লামেন্টের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন ঘটে যা পরবর্তী রাজা/রানিরা বহাল রাখেন। তবে ইংল্যান্ডের জনমানসে সমকালীন চার্চ ও পোপতন্ত্রের স্বৈরাচার, দুর্নীতি, অনাচার নিয়ে ক্ষোভ ছিলই, যা রাজার উদ্যোগে দূরীভূত করার সুযোগ পান জনগণ। এই কারণে ঐতিহাসিক Eaton ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কারকে An Act of State বলেছেন।