ইউরোপে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে কী জান

ইউরোপে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে কী জান

অথবা, ইউরোপে উগ্রবাদী বা চরমপন্থী ধর্মসংস্কার সম্পর্কে যা জান লেখো

ইউরোপে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে কী জান
ইউরোপে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে কী জান

ভূমিকা

ইউরোপে প্রতিবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ইতিহাসে অ্যানাব্যাপটিস্ট-রা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। প্রাথমিকভাবে এঁরা মার্টিন লুথারের প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীকালে এঁরা আরও বেশি বৈপ্লবিক সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হন। এই কারণে এঁদের উগ্রবাদী বা চরমপন্থী বলা হয়ে থাকে। অ্যানাব্যাপটিস্টরা চার্চের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন।

(1) মূল মতবাদ : খ্রিস্টান ধর্মাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বা আচার ব্যাপটিজম (Baptism) বা দীক্ষিতকরণকে কেন্দ্র করে এঁদের কার্যকলাপ শুরু হয়। যেখানে মার্টিন লুথার ব্যাপটিজমকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন; তাঁর উগ্র অনুগামীরা যে-কোনো প্রকার ধর্মীয় আচারের বিরোধিতা করেন। স্বভাবতই ব্যাপটিজমের প্রবল বিরোধিতা করেন এঁরা, যে কারণে এঁনারা অ্যানাব্যাপটিস্ট নামে পরিচিত।

(2) নেতৃত্ব : মার্টিন লুথারের সহযোগী অধ্যাপক কার্লসটাড (Carlstad) প্রথম অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের সূচনা করেন। পরবর্তীকালে টমাস মুনজের (Thomas Muntzer), কনরাড গ্র্যাবেল (Conrad Grebel) প্রমুখ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

(3) আন্দোলনের ধারা: অ্যানাব্যাপটিস্টরা চার্চ ও পোপবিরোধী অতি উগ্রমতের ধারক ও বাহক ছিলেন। এঁরা ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত জীবনকেই একমাত্র ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের পথ বলে বিশ্বাস করতেন। কোনোরকম আচার-অনুষ্ঠান, নিয়মকানুন, বাধ্যবাধকতার বিরোধী ছিলেন এঁরা। টমাস মুনজের রচিত Sermons to the Princes গ্রন্থে এই বৈপ্লবিক ধর্মচর্চা ও ধর্মসংস্কারের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

(4) সামাজিক সাম্য ও মুক্তির দাবি: ধর্মের পাশাপাশি অ্যানাব্যাপটিস্টরা সমকালীন সমাজ নিয়েও সংস্কারের পথে এগিয়েছিলেন। ধর্মচর্চার মাধ্যমে শুধু পারলৌকিক মুক্তি নয়, ইহজীবনে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা ও শোষণের বন্ধন থেকে নিম্নবিত্ত, দরিদ্র, কৃষক, শ্রমিক, কারিগরদের মুক্তির আন্দোলন করেন এঁরা। দক্ষিণ জার্মানির বিভিন্ন স্থানে খেটে খাওয়া মানুষেরা অ্যানাব্যাপটিস্টদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন

(5) দমনপীড়ন : প্রতিবাদী কার্যকলাপের ফলে অ্যানাব্যাপটিস্টরা রাষ্ট্র ও চার্চ উভয়ের রোষের মুখে পড়েন। বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয়। অ্যানাব্যাপটিস্টদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য কঠোর আইন জারি করে (১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দ) বলা হয় যে, এই মতবাদে দীক্ষিত ও দীক্ষাদানকারীদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে।

মূল্যায়ন

চার্চ ও রাষ্ট্রের নিষ্ঠুর নিপীড়নে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন বেশি প্রসারলাভ করতে না-পারলেও সামাজিক সাম্যের দাবি করে তারা যে মানবিক দৃষ্টান্তস্থাপন করেছিলেন তা সে যুগের নিরিখে অসীম নিঃস্বার্থতা ও দূরদর্শীতার পরিচায়ক।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top