ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জুইংলির অবদান আলোচনা করো

ভূমিকা
ষোড়শ শতকের ইউরোপের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হল রিফর্মেশন বা ধর্মসংস্কার আন্দোলন। মার্টিন লুথার প্রথম ধর্মসংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। মার্টিন লুথারের প্রতিবাদী মতাদর্শকে অনেকেই মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর আদর্শ প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এইরকমই একজন ব্যতিক্রমী ধর্মসংস্কারক হলেন-উলরিখ জুইংলি। তিনি সুইজারল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
(1) ধর্মীয় বিশুদ্ধতা প্রতিষ্ঠা: ধর্মপ্রাণ ও যুক্তিবাদী জুইংলি ক্যাথোলিক খ্রিস্টান ধর্মের শুদ্ধতার ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, যাজকরা বিবাহ করার অধিকার পেলে তাদের চারিত্রিক কলুষতা ও অনাচার বন্ধ হবে। চার্চের সঙ্গে যুক্ত সকল স্তরের ব্যক্তিদের চারিত্রিক পবিত্রতা ও নৈতিক জীবনযাপনের কথা বলেন তিনি।
(2) ক্যাথোলিক চার্চের বিরোধিতা: জুইংলি প্রচার করেন বাইবেল অভ্রান্ত। সাধারণ মানুষ বা পোপ কেউই বাইবেলের বক্তব্য পরিবর্তনের অধিকারী নন। কাজেই চার্চ বা পোপ যে কেউই বাইবেল বহির্ভূত কোনো কাজ করবেন, তা ধর্মবিরোধী। জুইংলি এজন্য পোপতন্ত্রের বিরোধিতা করে জুরিখের ধর্মসভায় ৬৭টি থিসিস প্রকাশ করেন। তিনি ইনডালজেন্স বা মার্জনাপত্র বিক্রয়ের তীব্র বিরোধিতা করেন।
(3) প্রিভি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব: জুইংলি রাষ্ট্র ও চার্চকে একই প্রতিষ্ঠানের দুটি দিক বলে মনে করতেন। এজন্য তিনি জুরিখে একটি প্রিভি কাউন্সিল গঠন করে, তার হাতে রাষ্ট্র ও চার্চের শাসনভার তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
(4) ক্যাথোলিক প্রতিক্রিয়া: জুইংলির সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে সুইজারল্যান্ডে অসংখ্য ক্যাথোলিক মঠ ধ্বংস হলে রোমান ক্যাথোলিক চার্চ প্রতিশোধের জন্য জুইংলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। জুইংলি নিজে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে কেপেলের যুদ্ধে তিনি প্রাণত্যাগ করেন।
মূল্যায়ন
ক্যাথোলিক চার্চ ও পোপতন্ত্র জুইংলিকে দমন করতে পারলেও তাঁর মতবাদকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বেশ কিছু সুইস ক্যান্টনে তাঁর মতবাদের গভীর প্রভাব ছিল; যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীকালে সুইস কনফেডারেশন প্রতিটি ক্যান্টনের বাসিন্দাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার করেছিল।