রেঁনেসা বা নবজাগরণের যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে টীকা লেখো

রেঁনেসা বা নবজাগরণের যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে টীকা লেখো

রেঁনেসা বা নবজাগরণের যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে টীকা লেখো
রেঁনেসা বা নবজাগরণের যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে টীকা লেখো

ভূমিকা

মধ্যযুগের শেষে খ্রিস্টীয় চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কাল একাধারে নবজাগরণ এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সূচনালগ্ন হিসেবে চিহ্নিত। ঐতিহাসিক ডেভিড জে কলিন্স এ বিষয়ে বলেছেন-তৎকালীন সময়ে বিজ্ঞান এবং ধর্মের অন্তর্দ্বন্দুে মানুষ কুসংস্কার এবং যুদ্ধের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। আধুনিক বিজ্ঞানের নানা শাখার প্রতিষ্ঠা ও গবেষণা রেনেসাঁ যুগকে আলোকিত করেছে।

(1) চিকিৎসাবিজ্ঞান: জিরোলামো ফ্রাকাসটেরো এ যুগের চিকিৎসকদের পথপ্রদর্শক। অপরসায়নবিদ প্যারাসেলসাস (১৪৯৩-১৫৪১  খ্রিস্টাব্দ) বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেন। এ ছাড়াও লিবাভিয়াস, ভ্যান হেলমন্ট প্রমুখ চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান রাখেন।

(2) শারীরবিদ্যা: এ বিষয়ে সর্বাগ্রগণ্য লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, যিনি শিল্পী হিসেবে সমধিক প্রসিদ্ধ হলেও শারীরবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন যা তাঁর ‘নোটবুক’ থেকে প্রমাণিত। শবব্যবচ্ছেদের সঙ্গেও তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ভেসালিয়াস শবব্যবচ্ছেদের ক্ষেত্রে অপর ব্যক্তিত্ব যাঁকে অ্যানাটমির জনক বলা হয়। এ বিষয়ে তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘De Fabrica Corporis Human’। মানবশরীরে রক্ত সংবহন নিয়ে আধুনিক ধারণা দেন উইলিয়াম হার্ভে।

(3) রসায়ন: আধুনিক রসায়নের জন্ম দিয়েছিলেন অপরসায়নবিদরা এবং এক্ষেত্রে প্যারাসেলসাসকেই পথপ্রদর্শক বলা যায়, যিনি বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে চিকিৎসা করতেন। সালফার, লেড, আর্সেনিক, পারদ ইত্যাদির রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা তিনি দ্রবণ তৈরি করতেন। দস্তা ধাতুটির আবিষ্কারও করেন প্যারাসেলসাস। এরপর ভ্যান হেলমন্ট, জর্জ অ্যাগ্রিকোলা প্রমুখ রসায়নে বিভিন্ন গবেষণা করেন।

(4) জীববিজ্ঞান: জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী ব্লুনফেলস (১৪৬৪-১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দ) ও হিরোনিমাস বখ (১৪৯৮-১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দ) নতুন প্রজাতির বহু উদ্ভিদ আবিষ্কার করেন এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদের তালিকা তৈরি করেন; যা পরিপূর্ণ রূপ পায় আন্দ্রিয়া সিজালপিনো (১৫১৯-১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ) রচিত De Planti’s নামক গ্রন্থে। প্রাণীবিদ্যায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন কনরাড গেসনার।

(5) জ্যোতির্বিদ্যা: নবজাগরণের যুগের বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ও প্রতিভার স্ফুরণের সর্বোচ্চ নিদর্শন পাওয়া যায়, এ যুগের জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার অগ্রগতিতে। মধ্যযুগীয় টলেমীয় বিশ্বব্রহ্মান্ডের ধারণায়-মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পৃথিবী এবং তার চারপাশে সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করছে বলে মনে করা হত। এই তত্ত্ব Geocentric system নামে পরিচিত ছিল যা চার্চের দ্বারা অনুমোদিত ও প্রচারিত হত।

পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দ) প্রথম ভূকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ভ্রান্ত ধারণাকে নস্যাৎ করে বলেন যে- বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে পৃথিবী নয়, সূর্য অবস্থান করছে এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলি আবর্তিত হচ্ছে। এইভাবে Helio- centric Theory বা system-এর প্রচলন হয় এবং এর প্রবক্তা কোপারনিকাসকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। পরবর্তীতে জিওরদানো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০ খ্রিস্টাব্দ), টাইকো ব্রাহে (১৫৪৬-১৬০১ খ্রিস্টাব্দ), গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) প্রমুখ এই তত্ত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।

মূল্যায়ন

এইভাবে নবজাগরণের যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিস্থাপন করে। এই অগ্রগতি মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তর আনে এবং আধুনিক বিশ্বের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top