‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি ছোটোগল্প হিসেবে কতদূর সার্থক হয়েছে তা আলোচনা করো

ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য : আধুনিক সাহিত্যের একটি বিশেষ প্রকরণগত বিন্যাস হল ছোটোগল্প। একটিমাত্র কেন্দ্রীয় ঘটনা অল্প কয়েকটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করলে তবে সেই গল্প ছোটোগল্প হয়ে ওঠে। গল্পকারের উদ্দেশ্য যেখানে থেমে যায়, গল্পের পরিসমাপ্তিও সেখানে ঘটে। তাই গল্প পাঠের পরও পাঠকের অন্তরে অতৃপ্তি থেকে যায়।
সার্থক ছোটোগল্প রূপে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ : এই গল্পের নায়ক চরিত্র মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে তার দুই বন্ধুকে নিয়ে ঘনান্ধকার অরণ্যপথে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত পৌঁছোন জনমানবহীন তেলেনাপোতা গ্রামে। সেখানেই এক ভগ্ন অট্টালিকায় যামিনী নাম্নী কৈশোর উত্তীর্ণা এক কন্যার ও তার মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধা মায়ের জীবন সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করেন তারা। মেয়েটির বয়সবিরোধী গাম্ভীর্য ও চোখমুখের মলিন বেদনা, নিরঞ্জন নামক দূরসম্পর্কীয় যুবকের যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর তেলেনাপোতায় ফিরে না আসার বিষয়গুলি তার মনে করুণার উদ্রেক করে। একসময় বৃদ্ধার কাছে নিজেকে নিরঞ্জন রূপে উপস্থিত করে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন নায়ক। কিন্তু কলকাতায় ফিরে এসে ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর যখন সেরে ওঠেন, তখন তিনি অনুভব করেন তেলেনাপোতা তাকে আর আকর্ষণ করছে না।
কোনো উপকাহিনি নেই, ‘ঘটনার ঘনঘটা’ নেই, গল্পের উদ্দেশ্য যেখানে শেষ হল, সেখানেই গল্পটিকে সমাপ্ত করলেন লেখক। তাই গল্প পাঠের শেষে পাঠকের অন্তরে একটা অতৃপ্তি থেকে যায়। সুতরাং, সার্থক ছোটগল্পের সমস্ত বৈশিষ্ট্যে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি যে উজ্জ্বল এ কথা বলাই যায়।