‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে যামিনীর মায়ের চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো

যামিনীর মায়ের চরিত্র : প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে যামিনীর মায়ের প্রত্যক্ষ উপস্থিতির পরিসর সংক্ষিপ্ত হলেও গল্পের ক্লাইম্যাক্স তিনিই তৈরি করে দেন।
কন্যার ভবিষ্যৎ চিন্তায় উদ্বিগ্না : ঘন অরণ্যাচ্ছাদিত অন্ধকারময় মৃত্যুপুরীর ভাঙা অট্টালিকার দু-একটি প্রকোষ্ঠে কৈশোর উত্তীর্ণা একমাত্র কন্যাকে নিয়ে যামিনীর মায়ের দিনযাপন। অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী তিনি। তাই কন্যার ভবিষ্যৎ চিন্তায় সবসময় উৎকণ্ঠায় থাকেন। মেয়ের একটা নিরাপদ ও নিশ্চিত ভবিষ্যৎ স্থির না হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন মরতেও পারছেন না।
মানসিক অস্থিরতা : একদিকে শারীরিক অসুস্থতা, অন্যদিকে মেয়ের ভবিষ্যৎচিন্তা তাঁকে অস্থির করে তোলে। সারাক্ষণ তিনি মেয়ের সঙ্গে খিটমিট করেন, কোনো কথা তাকে বোঝাতে পারে না যামিনী। নিজেও সে-কথা স্বীকার করে নেন তিনি-“…রাতদিন খিটখিট করে মেয়েটাকে যে কত যন্ত্রণা দিই, তা কি আমি জানি না।”
সহজতা ও সরলতা : অত্যন্ত সহজ মনের অধিকারিনী এই বৃদ্ধা তাঁর দূরসম্পর্কীয় নিরঞ্জন নামের এক বোনপোর সঙ্গে মেয়ের সম্বন্ধ স্থির করেছিলেন। কিন্তু বয়ঃপ্রাপ্ত নিরঞ্জন এই বিয়েতে অসম্মত হলেও বৃদ্ধাকে সেটা জানাতে পারেনি, বরং বিদেশে চাকরি থেকে ফিরে যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। বৃদ্ধা সেই কথায় বিশ্বাস করে বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। অতঃপর গল্প নায়ক আবেগবশত নিরঞ্জনের ভূমিকায় পুনরায় একই প্রতিশ্রুতি দিলে বৃদ্ধা সেটাও বিশ্বাস করতে শুরু করেন।
মমতাময়ী : মেয়ের সঙ্গে খিটমিট করলেও তিনি বোঝেন এটা তাঁর অন্যায়। মুখ বুজে সব অন্যায় মেনে নিয়ে যামিনী যে মাকে সেবা করে যাচ্ছে-সে-কথা আগন্তুকদের জানাতে তিনি ভোলেন না।
এভাবেই এক অসহায়া মায়ের চরিত্রের সব রকম বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল যামিনীর মা সমগ্র গল্পকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।