“মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।”- কার এ কথা মনে হবে? কোন্ পরিস্থিতিতে, কেন এ কথা মনে হবে

যার মনে হবে: প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নায়ক চরিত্রের এই কথা মনে হবে।
পরিস্থিতি ও মনে হওয়ার কারণ: গল্পের নায়ক চরিত্র তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে আকস্মিকভাবে অরণ্যাচ্ছাদিত তেলেনাপোতা গ্রামে মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন। সেখানে তারই বন্ধু মণির জ্ঞাতিস্থানীয়া যামিনী নাম্নী রমণীর ভাঙা অট্টালিকায় তাদের দ্বিপ্রাহরিক আহারের ব্যবস্থা হয়। যামিনীর মুখের গাম্ভীর্য আর মলিন বেদনা নায়কের দৃষ্টি এড়ায় না। মধ্যাহ্নভোজের পর যামিনী ও মণির নীচু স্বরের কথোপকথন থেকে নায়ক জনতে পারেন যামিনীর শয্যাশায়ী, অন্ধ, অসুস্থ মা মণিদা ও তার বন্ধুদের আসার খবর পাওয়ামাত্র অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠেছেন। তাঁর ধারণা নিরঞ্জন নিশ্চয়ই এসেছে, শুধু লজ্জায় তাঁর সামনে আসছে না। পরে মণি গল্প নায়ককে জানান যে এই নিরঞ্জন হল যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের বোনপো। সে যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তেলেনাপোতায় কোনোদিন ফেরেনি। এসব শুনে মণির সঙ্গে নায়ক সেই বৃদ্ধার ঘরে যান। আগন্তুকদের পদধ্বনি শুনেই বৃদ্ধা নিশ্চিত হন যে নিরঞ্জন এসেছে। কাতর অনুনয়ের সুরে তিনি বলেন, “এবার তো আর অমন করে পালাবি না?” সকলকে হতবাক করে নায়ক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলে ওঠেন, “না মাসিমা, আর পালাব না।” তারা সেদিন বিকেলে ফিরে এলেন কলকাতায় এবং এর দু-একদিনের মধ্যেই তিনি ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন। দীর্ঘ রোগভোগের পর যখন সুস্থ হলেন, বুঝলেন, তেলেনাপোতার স্মৃতি তার কাছে একটা ঝাপসা স্বপ্ন। এভাবেই তেলেনাপোতা হঠাৎ আবিষ্কৃত হয়ে আবার গভীর রাত্রির অতলে ডুবে যায়।