“কে, নিরঞ্জন এলি?”-নিরঞ্জন কে? কোন পরিস্থিতিতে গল্পের নায়ক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন

নিরঞ্জনের পরিচয় : প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রাণশক্তি যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের বোনপো হল নিরঞ্জন। সে যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তেলেনাপোতায় কোনোদিন ফেরেনি।
নিরঞ্জন হিসেবে গল্পের নায়কের ভূমিকা: গল্পের নায়ক চরিত্র তাঁর দুই বন্ধুসহ জঙ্গলাকীর্ণ তেলেনাপোতা গ্রামে উপস্থিত হয়ে যামিনীদের ভগ্ন অট্টালিকায় আতিথ্য গ্রহণ করেন। সেখানে দ্বিপ্রাহরিক আহারের সময় যামিনীর মুখের গাম্ভীর্য আর মৌন বেদনা নায়কের দৃষ্টি এড়ায় না। খাবার পরিবেশন করার সময় উপরের কোনো-একটি ঘর থেকে আসা ক্ষীণ তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর যামিনীকে চঞ্চল করে, সে ব্যস্ত হয়ে বাইরে চলে যায়, ফিরে যখন আসে তখন সেই বেদনার ছায়া আরও দীর্ঘ হয়।
মধ্যাহ্নভোজের পর গল্পের নায়ক ও তার বন্ধুরা বিশ্রাম নেওয়ার সময় যামিনী অত্যন্ত দ্বিধা নিয়ে নায়কের এক বন্ধু, যামিনীর জ্ঞাতিসম্পর্কিত মণিদাকে নীচু স্বরে বিপন্নভাবে জানায় যে, তার শয্যাশায়ী, অন্ধ, অসুস্থ মা মণিদা ও তার বন্ধুদের আসার খবর পাওয়ামাত্র অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠেছেন। তার ধারণা নিরঞ্জন নিশ্চয়ই এসেছে, শুধু লজ্জায় তাঁর সামনে আসছে না। যামিনীর মণিদার সঙ্গে নায়কও সেই বৃদ্ধার ঘরে যান। আগন্তুকদের পদধ্বনি শুনেই বৃদ্ধা জানতে চান যে নিরঞ্জন এসেছে কিনা। নিরঞ্জনের উপস্থিতি সম্পর্কে একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই কাতর অনুনয়ের সুরে তিনি বলেন, “এবার তো আর অমন করে পালাবি না?” তখন আবেগপ্রবণ গল্পনায়ক বৃদ্ধা ও যামিনীর প্রতি সহমর্মী হয়ে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।