তেলেনাপোতায় গল্পের নায়ক চরিত্র ও তাঁর বন্ধুদের রাত্রিযাপনের পরিচয় দাও

নায়ক ও তার বন্ধুদের রাত্রিযাপন: বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নায়ক ও তার দুই বন্ধু বহু কষ্টের পর শেষ পর্যন্ত অনেক রাতে অভীষ্ট স্থানে পৌঁছোন। একটা পানাপচা নাতিদীর্ঘ পুকুরের পাশে ভগ্নপ্রায় অট্টালিকার কোনো-একটি অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। ইতোমধ্যেই একটা ভাঙা লণ্ঠন আর এক কলশি জল এনে রেখে গেছেন গাড়োয়ান। ঘরের ঝুল, জঞ্জাল আর ধুলো পরিষ্কার করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা কেউ করে গেছে। কয়েকটি চামচিকে আর মশার সান্নিধ্য এরই মধ্যে তারা পেয়েছেন।
নায়কটির ঘুমকাতুরে বন্ধু ভগ্ন অট্টালিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরে ঢুকেই শতরঞ্জি বিছিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। মণি নামক অপর এক পানরসিক বন্ধু পানপাত্রে নিজেকে নিমজ্জিত করে দেন। কিন্তু গল্পের নায়ক চরিত্রের চোখে ঘুম নেই। মশাদের ঘনিষ্ঠতা ও শোণিত সম্পর্ক বেড়ে চলায় উপায়ান্তর না দেখে নায়ক বাধ্য হন শয্যা ত্যাগ করতে। টর্চ হাতে ভগ্নপ্রায় সিঁড়ি বেয়ে, ক্রমান্বয়ে ধসে পড়া ইট-বালির বিপর্যয় অতিক্রম করে ছাদে ওঠার চেষ্টা করেন। আলিসা ভাঙা ছাদ ততক্ষণে কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ আলোয় মোহময় হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে অকস্মাৎ সংকীর্ণ রাস্তার অপর প্রান্তের দৃশ্যমান ভগ্নস্তূপের কোনো-একটি জানলায় আলো হাতে এক বাতায়নবর্তিনীর অস্পষ্ট ছায়া দেখে চমক লাগে তার মনে। অবশ্য মুহূর্তের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায় সে। বিমূঢ় ভাব কেটে গেলে নায়কের মনে হয় এ হয়তো তার মনের ভুল। অতঃপর অতি সন্তর্পণে নীচে নেমে ঘুমন্ত দুই বন্ধুর পাশে একটু জায়গা করে নেন তিনি। এভাবেই গল্পের তিন আগন্তুক চরিত্রের রাত অতিবাহিত হয়।