বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
  • জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিকতা বোধ
  • ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
  • বিদ্যালয়ে সতর্কতা গ্রহণ
  • ছাত্রছাত্রীদের চরিত্রগঠন
  • খেলাধুলার প্রকারভেদ
  • আদর্শবোধ, নিয়মানুবর্তিতা শৃঙ্খলাবোধ, দলবদ্ধভাবে কর্ম সম্পাদনের শিক্ষা
  • দলবদ্ধ আনন্দলাভ ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি

ভূমিকা: বিদ্যালয়ে একটা ছাত্র বা ছাত্রীকে যেমন মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হয়, তেমনই তার সাথে সাথে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার বিশেষ প্রয়োজন আছে, কারণ অসমর্থ ও দুর্বল শরীরে কখনও ভালো পড়াশোনা হয় না। খেলার মাধ্যমে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন যেমন হয় তেমনই তাতে পাওয়া যায় বিশুদ্ধ আনন্দ।

খেলাধুলা ও শরীরচর্চা: খেলাধুলা আমাদের মনকে সতেজ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। ছাত্রদের বিদ্যালয় জীবনে অনাবিল আনন্দ দেয় একমাত্র খেলাধুলা। সুস্থ শরীরের অধিকারীই পারে সুন্দর কিছু করতে ও লেখাপড়ায় আরও আগ্রহী হতে। নিয়মিত খেলাধুলোর মধ্যে থাকলে মনে কোনো দুষ্টু বুদ্ধি বা কুচিন্তা বাসা বাঁধতে পারে না।

চরিত্রগঠনে খেলাধুলা : বিদ্যালয় জীবনে চরিত্রগঠনের ক্ষেত্রে খেলাধুলা একটি বিশিষ্ট স্থান আছে। নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সময় সচেতনতা, পারস্পরিক সহযোগিতার বোধ, নীতিবোধ, সততা প্রভৃতি হল মানবচরিত্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক। খেলার মাধ্যমেই এগুলির পর্যাপ্ত অনুশীলন হয়ে থাকে। খেলার মাঠে যে নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস তৈরি হয়, তার প্রতিফলন বাস্তব জীবনেও দেখা যায়।

খেলাধুলার প্রকারভেদ: খেলাধুলা মূলত দুই প্রকারের। একটা হল ইন্ডোর গেম আর অপরটি হল আউটডোর গেম। ঘরে বসে যে খেলাগুলো খেলা হয় যেমন-লুডো, দাবা, তাস ইত্যাদিকে বলা হয় ইনডোর গেম, আর যেগুলো বাড়ির বাইরে মাঠে খেলা হয়, যেমন- ফুটবল, ভলিবল, কবাডি, ক্রিকেট ইত্যাদিকে বলা হয় আউটডোর গেম।

অন্যান্য গুণ অর্জনে খেলাধুলা: খেলাধুলার মাধ্যমে কিছু গুণ ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে অর্জন করে। যেমন খেলতে গিয়ে দলবদ্ধভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর অভ্যাস গড়ে ওঠে। তৈরি হয় দলগত সংহতির বোধ। খেলাধুলায় মন থেকে ভীরুতা দূর হয়। একটি সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। খেলায় হারজিতের বিষয়টিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে বলে, বাস্তব জীবনের হারজিতের খেলায় তারা ভেঙে পড়ে না।

আধুনিক জীবন ও খেলাধুলা: আধুনিক জীবনে যৌথ পরিবার বা একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে গিয়ে ছোটো ছোটো নিউক্লীয় পরিবারে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে বাচ্চারা বড়ো বেশি একাকিত্বে ভুগছে। এরপর আছে পড়াশোনার চাপ, এসব টানাপোড়েনে ছাত্রছাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রবল চাপে অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র খেলাধুলা। খেলাধুলা মনের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।

সতর্কতা: বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম হলেও সতর্কতারও প্রয়োজন আছে। যদি কোনো ছাত্রছাত্রীর মনোযোগ শুধু খেলায় থাকে তখন তার পড়াশোনায় যথেষ্ট ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তারপর সাবধানে খেলাধুলা করা উচিত যাতে লেগে না যায়। শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে খেলাধুলার প্রয়োজন।

খেলাধুলা ও জাতীয়-আন্তর্জাতিকতা: বর্তমানে খেলাধুলা শুধু চিত্ত বিনোদন বা শরীর গঠন করে না, আরও বৃহত্তর জগতে পরিচিত হতে সাহায্য করে। খেলাধুলার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে। এক রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা হয়। সেখান থেকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জন্ম নেয়। ক্রিকেট, দাবা, ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি খেলাধুলা আজ শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, পৃথিবীর বহু দেশের সঙ্গে ভারতীয়রা ক্রিকেট, দাবা, হকি প্রভৃতি খেলছে। এইভাবে আন্তর্জাতিকতাবোধ জাগ্রত হচ্ছে।

উপসংহার: খেলাধুলা মানুষকে শক্ত সমর্থ করে তোলে। মানুষকে জীবনসংগ্রামী করে তোলে। এ ছাড়াও মানুষকে জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত করে খেলাধুলা। নিয়মিত শরীরচর্চা সুস্থ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই ছাত্রজীবনে খেলাধুলার চর্চা হওয়া অবশ্য প্রয়োজন। খেলাধুলায় জাতি শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ওঠে। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই খেলাধুলার উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা আছে, সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top