‘ছুটি’ গল্পে প্রকৃতির ভূমিকা কতখানি তা আলোচনা করো

‘ছুটি’ গল্পে প্রকৃতির ভূমিকা কতখানি তা আলোচনা করো

'ছুটি' গল্পে প্রকৃতির ভূমিকা কতখানি তা আলোচনা করো
‘ছুটি’ গল্পে প্রকৃতির ভূমিকা কতখানি তা আলোচনা করো

প্রকৃতির ভূমিকাঃ রবীন্দ্রনাথের অন্যতম সৃষ্টি-প্রেরণা বিশ্বপ্রকৃতি বা নিসর্গ-প্রকৃতি। ‘পারস্যযাত্রী’ গ্রন্থে কবি বলেছেন- “শৈশব থেকেই আমি মানুষ হয়েছি নির্জনতার আবহাওয়ায়, প্রকৃতির নিবিড় সংস্পর্শে।” শিলাইদহ, সাজাদপুর, পতিসরের গ্রাম্য প্রকৃতি, পদ্মার দুই তীরবর্তী গ্রামের জনজীবন কবিকে মুগ্ধ করেছিল অচিরেই। সাজাদপুরের কাছারিবাড়ি, কুঠিবাড়িতে কবি পেতেন প্রাণের স্পর্শ। গ্রামজীবনের রুগ্ধতা ও নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি নিসর্গ-প্রকৃতির সৌন্দর্য রোমান্টিক আকুলতা কবিকে ছুঁয়েছে বারবার।

এই পর্বের ‘ছুটি’ গল্পটি গড়ে উঠেছে পদ্মা-তীরবর্তী সহজ-সরল গ্রাম্য আটপৌরে জীবন থেকেই। নদীতীর, জলিধান, উদার মুক্ত আকাশ, নদীতীরের প্রবহমান বায়ু-এই সবকিছুর মধ্যেই ডানা মেলেছিল গল্পের প্রধান চরিত্র কিশোর ফটিক। শরতের প্রকৃতি এই গল্পে অনিবার্যভাবে ফুটে ওঠে। নীল আকাশে যেমন সাদা মেঘের ভেলা রূপকথার গল্প শোনায়, ঠিক তেমনই বালক সর্দার ফটিক নিত্যনতুন খেলা আবিষ্কার করে বন্ধুমহলে রূপকথার রাজপুত্র হয়ে বসে।

নদীর পাড়ে পড়ে থাকা শালকাঠের গুঁড়ি তাদের রাজ্যের পক্ষীরাজ। কাশফুলে ঢাকা প্রান্তর তাদের অকারণে চঞ্চল করে তোলে। কোথাও কোনো বন্ধন নেই। অথচ ফটিক বাঁধা পড়ল শহরের চার দেয়ালের গণ্ডিতে। গ্রামের মুক্ত প্রকৃতিতে বড়ো হয়ে ওঠা ফটিক তাই শহর থেকে গ্রামে ফেরার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায় ‘ছুটি’ চায়; নিখিল মানবাত্মা প্রকৃতির উদার অসীমতায় মুক্তিলাভের জন্য ছটফট করে ওঠে, প্রকৃতি-জননীর কোলে শেষ আশ্রয় চায়। শেষ পর্যন্ত জীবন থেকে ছুটি পায় ফটিক। মুক্তি পায় অনন্ত বিশ্বপ্রকৃতির মাঝে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top