ছুটি গল্পে ফটিকের পরিণতিতে তার মামির ভূমিকা কতখানি

ছুটি গল্পে ফটিকের পরিণতিতে তার মামির ভূমিকা কতখানি

ছুটি গল্পে ফটিকের পরিণতিতে তার মামির ভূমিকা কতখানি
ছুটি গল্পে ফটিকের পরিণতিতে তার মামির ভূমিকা কতখানি

ফটিকের পরিণতিতে মামির ভূমিকা : রবীন্দ্রসাহিত্যে স্নেহ ও মমতাময়ী নারীদের পরিচয় যেমন পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই পরিচয় মেলে হৃদয়হীনা, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক নারীমননেরও। ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের মামি দ্বিতীয় শ্রেণির নারীর প্রতিনিধি চরিত্র।

স্বামীর প্রতি অনাস্থা : স্বামী বিশ্বম্ভরবাবু কনিষ্ঠ ভগিনীর পরিচয় মেলে হৃদয়হীনা, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক নারীমননেরও। ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের মামি দ্বিতীয় শ্রেণির নারীর প্রতিনিধি চরিত্র। জ্যেষ্ঠপুত্রটির দায়িত্বভার গ্রহণ করলে তার স্ত্রী অনাবশ্যক পরিবার বৃদ্ধিতে মনে মনে অসন্তুষ্টই হয়েছিলেন। তাঁর নিজের তিন ছেলে নিয়ে একেবারে নিজের নিয়মে পাতানো ঘরকন্নায় অচেনা, অশিক্ষিত গ্রাম্য ছেলে ফটিককে তাঁর গলগ্রহই মনে হয়েছিল। স্বামীর দায়িত্বজ্ঞানের প্রতি আস্থা তিনি রাখতে পারেননি। সেইসঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে ফটিককে সামান্য স্নেহ ও মমতা দিয়েও গ্রহণ করতে পারেননি এই নারী।

অপরিচিত স্থানে ফটিকের নরক যন্ত্রণা: মামার বাড়িতে মামির অনাদরে ও দুর্ব্যবহারে ফটিক পদে পদে কণ্টক যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়। মামির নিদারুণ উপেক্ষা তার কাছে দুঃসহ বলে বোধ হয়। মামি যে তাকে সংসারের গলগ্রহের মতো দেখেন, এটাই ছিল ফটিকের সবচেয়ে বড়ো যন্ত্রণা। তাই মামি কখনও কোনো কাজ করতে বললে, ফটিক আনন্দে যতটা না আবশ্যক তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে ফেলত। কিন্তু অচিরেই ফটিকের সেই উৎসাহ, তার মামি দমন করে বলতেন- “ঢের হয়েছে … এখন তুমি নিজের কাজে মন দাও গে।” আসলে ফটিকের মামি ফটিককে সন্তানস্নেহে কখনও কাছে টানতে পারেননি।

স্কুলে বই হারিয়ে ফেললে, ফটিকের নিজেকে অপরাধীর মতো মনে হয়েছে। তবে মামির কাছে এসে দোষ স্বীকার করে সে। কিন্তু প্রত্যুত্তরে পায় তিরস্কার- “বেশ করেছ! আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।”

ফটিকের জীবনবিমুখতায় মামির ভূমিকা: স্কুল থেকে ফিরে যে রাতে ফটিকের জ্বর আসল, সে রাতেই ফটিক বুঝল, অসুখ বাঁধালে মামির প্রতি অনর্থক উপদ্রব করা হবে। ফটিক স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারল, তার অসুখ মামির কাছে অকারণ, অনাবশ্যক জ্বালাতনের বিষয় হিসেবে প্রতিপন্ন হবে। ফটিক যখন মুশলধারে শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজে, তার জ্বর বাড়িয়ে তুলল এবং বাড়ি পালানোর চেষ্টা করল তখন তার মামির প্রতিক্রিয়া-“পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ।”

মাতৃসমা মামির কাছ থেকে ফটিকের প্রাপ্তি শুধু যন্ত্রণা, অনর্থক তিরস্কার। প্রবল জ্বরের সময়ও মামি তার মাথায় স্নেহের হাতটুকু, রাখেননি। তাই মামির সামান্যতম স্নেহ সে পায়নি। সে ফিরে যেতে চেয়েছে মায়ের কাছে, যেখানে রয়েছে তার শেষ আশ্রয়। ফটিকের অন্তিম পরিণতিতে তার মামির ভূমিকা অবশ্যই উজ্জ্বল।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top