‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে ফটিকের মায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

ফটিকের মায়ের চরিত্র : রবীন্দ্রনাথের অজস্র ছোটোগল্পে শাশ্বত মাতৃহৃদয়ের পরিচয় আমরা পাই। ‘ছুটি’ গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বল্প পরিসরে পরিস্ফুট ফটিকের মা গ্রাম বাংলার এক অসহায় বিধবা রমণী।
বৈধব্য ও সংসার জীবন : গ্রাম জীবনের সহায়তায় নিত্যদিনের সংসারযাপন এবং অভিভাবকহীন হয়ে বেঁচে থাকা ফটিকের মাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছিল। বিধবার সম্বল বলতে দুই সন্তান-ফটিক আর মাখন। ফটিক অত্যন্ত দুরন্ত, দামাল স্বভাবের; অন্যদিকে মাখন আপাত নিরীহ প্রকৃতির ও সুশীল স্বভাবের। এই দুই ছেলের সম্পর্ক নিয়ে বিধবা রমণীর চিন্তার অন্ত ছিল না।
স্বজন বিবর্জিত: ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু কর্মসূত্রে পশ্চিমে থাকায় দীর্ঘদিন বোনের সঙ্গে সংযোগ রাখেননি। বোনের সন্তানপ্রসব, বৈবধ্য কোনো কিছুরই খবর রাখেননি আত্মীয় হয়েও। এরপর তিনি হঠাৎই এসে হাজির হয়েছেন বোনের সংসারে, দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন বড়ো ছেলে ফটিকের। তবে সে দায়িত্ব পালনে তিনি অপারক হওয়ায় সন্তানহারা হতে হয় বিধবাকে।
দূরদর্শিতার অভাবঃ দাদার বাড়িতে দুরন্ত ছেলে ফটিক কীভাবে দিন কাটাবে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার অভাব ছিল তার মায়ের। গ্রামের থেকে শহরের জীবন যে অনেক কঠিন, সেই বাস্তবজ্ঞানের অভাবও ছিল এই গ্রাম্য রমণীর। এমনকি দাদার সংসারে ফটিক গলগ্রহ হয়ে উঠবে কি না সেই চিন্তাও তিনি করেননি।
চিরন্তন মাতৃহৃদয়: গল্পের শেষে ফটিকের রোগশয্যায় ফটিকের মায়ের মাতৃত্বের রূপ সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। তার আগে ফটিক যখন শহরে আসার জন্য তীব্র উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল, তখনও ফটিকের মা খানিকটা হলেও ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। অসুস্থ ফটিকের ঘরে ঝড়ের বেগে প্রবেশ করে ফটিকের মা। রোগশয্যায় শায়িত ফটিককে দেখে উন্মাদিনী হয়ে বলে ওঠেন “ফটিক! সোনা! মানিক আমার!…ওরে ফটিক, বাপধন রে!” ফটিকের অন্তিম শয্যায় অসহায় মাতৃহৃদয়ের তীব্র হাহাকার ও বেদনার্ত ক্রন্দনে পাঠক হৃদয়কে চিরব্যথিত করে।