“মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”-তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

“মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”-তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

"মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”-তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো
“মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”-তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

তাৎপর্য : বিশ্বমানবতার আলোক দিশারি ছোটোগল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহের সাজাদপুর পতিসরের পল্লিগ্রামের শ্যামল প্রকৃতিতে বিশ্বলোকের সাড়া পেয়েছিলেন। প্রকৃতির অযাচিত দান কবিকে বিমুগ্ধ করেছে বারবার। তাই প্রকৃতি যেমন রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রাণময় হয়ে উঠেছে ঠিক তেমনি রবীন্দ্রসৃষ্ট চরিত্ররাও প্রাণ পেয়েছে প্রকৃতির বুকেই।

‘ছুটি’ গল্পে প্রকৃতির উদার অসীমতায় মুক্তপ্রাণের প্রতীক ফটিক অসহায় গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তিলাভের পথ খুঁজেছে। শহর দেখার অদম্য ইচ্ছায় মামার সঙ্গে কলকাতায় পাড়ি দিলেও গ্রামে ফেরার প্রবল টানকে কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি সে। জননীর স্নেহাঞ্চল আর প্রকৃতির প্রেমাঞ্চল খানিকটা দূরে সরিয়ে ফটিক যখন শহরে পাড়ি দেয় তখন অচিরেই সে অনুভব করে তার জীবনের খেলা সাঙ্গ হতে চলেছে। পল্লিগ্রামের সঙ্গে বিচ্ছেদ তার আত্মার মৃত্যু ঘটিয়েছে। সেই সঙ্গে মামার বাড়িতে মামির অসহ্য তিরস্কার, গঞ্জনা, স্নেহ-ভালোবাসাহীন দুর্বিষহ জীবন তার মানসিক মৃত্যু ঘটিয়েছে। খেলা-প্রাণ ফটিক যখন স্কুলে শিক্ষকদের নিগ্রহ, আপন মামাতো ভাইদের দুর্ব্যবহার আর সহপাঠীদের ঠাট্টা-তামাশার শিকার হয়েছে তখনই তার প্রাণচাঞ্চল্যের মৃত্যু ঘটেছে। এই মৃত্যু তো কায়িক মৃত্যুরই সমান। ফলত, শরীরে বাসা বেঁধেছে অসুখ, প্রাণ ঝরনা পরিণত হয়েছে ক্ষীণস্রোতা নদীতে। মুক্তি পাগল ফটিক মামার কাছে করুণ আর্তিতে ছুটি প্রার্থনা করেছে। শহরে আসার জন্য ফটিকের মধ্যে যে ব্যাকুলতা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাকুল হয়েছে সে তার আজন্ম লালিত পল্লির বুকে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হতভাগ্য ফটিক তা পারেনি। অনাদরে-অবহেলায়, অবজ্ঞায়, উপহাসে মাতুলালয় থেকে সে বিদায় নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের চরম পরিহাসে সেখানেই ফিরতে হয় তাকে। পিঞ্জরাবদ্ধ বন্য পাখির মতো সে ব্যাকুল থেকে ব্যাকুলতর হয়েছে বন্দি জীবন থেকে ছুটি পাওয়ার জন্য। অবশেষে অসুখ এসে তাকে মুক্তি দিল। চিরচঞ্চল কিশোর জীবনের দুস্তর পথ ত্যাগ করতে চাইল অচিরেই। চেতনালুপ্ত ফটিক যখন জ্বরতপ্ত শিরে জননীর কোমল হস্তস্পর্শ পেয়েছে, তখন তার বিদায় বেলা সমাসন্ন। মায়ের অসংযত শোকোচ্ছ্বাসে অস্ফুট কণ্ঠে ফটিক বলে উঠেছে -“মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।” বন্দিত্বের শৃঙ্খলমোচন হয়েছে ফটিকের অনন্ত যাত্রাপথের আহ্বান শুনে। উদার বিশ্বপ্রকৃতির বুকে মৃত্যুতেই সে পেয়েছে ছুটির নিমন্ত্রণ। ফটিক চরিত্রের ট্র্যাজিক পরিণতি এখানেই।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top