‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটির বর্ণনা দাও

খেলার দৃশ্যের বর্ণনা : বিশ্ববরেণ্য লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ছুটি’ গল্পের বিষয়বস্তু আহরণ করেছিলেন পদ্মা নদী তীরবর্তী সাজাদপুর গ্রামে একদল বালক-বালিকাকে আপন খেয়ালে খেলতে দেখে। ‘ছিন্নপত্র’-এর ২৮ সংখ্যক চিঠিতে তারই বর্ণনা পাওয়া যায়।
‘ছুটি’ গল্পের মূল কিশোর চরিত্র ফটিক চক্রবর্তী তার বন্ধুবর্গের তথা খেলার সঙ্গীদের মধ্যে চিরসর্দার। তার মাথায় নিত্যনতুন খেলার পরিকল্পনা আসে। নদীর ধারে প্রকাণ্ড এক শালকাঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ফটিক ও তার বন্ধুরা ঠিক করল সকলে মিলে সেটিকে গড়িয়ে নিয়ে যাবে-এটাই তাদের খেলা। সেই শালকাঠের মালিক প্রয়োজনের সময় যখন সেটিকে পাবেন না এবং রীতিমতো বিরক্ত হবেন, অসুবিধায় পড়বেন এসব ভেবে নিয়ে ফটিকের খেলার সঙ্গীরা তার প্রস্তাবে সম্মতি দেয়।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ, বালক দলের এই দুষ্টুমিই দৃশ্যটিকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরিয়ে তুলল। কিন্তু তাদের খেলায় বাধ সাধে ফটিকের ছোটোভাই মাখন। সে হঠাৎ এসে সেই শালকাঠের গুঁড়ির উপর গম্ভীরভাবে বসে পড়ল। একটি ছেলে এসে ভয়ে ভয়ে ফটিকের ভাই মাখনকে একটু-আধটু ঠেললেও মাখন একেবারে অনড়। ভাইয়ের এই অবাধ্য আচরণে ভাইয়ের গালে ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল ফটিকের, কিন্তু সাহসে কুলোয় না। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় ফটিক বন্ধুদের কাছে প্রস্তাব করল মাখন সমেত ওই কাঠ গড়াতে আরম্ভ করা যাক। “মাখন মনে করিল, ইহাতে তাহার গৌরব আছে;” কিন্তু এতে যে বিপদও আছে সেটি বালকের বোধগম্য হল না। ছেলেরা কোমর বেঁধে ‘সাবাস জোয়ান হেঁইয়ো’ ধ্বনি দিতে দিতে গুঁড়িকে এমন ঠেলল যে স্বাভাবিকভাবেই গুঁড়ি এক পাক ঘুরতে না ঘুরতেই মাখনের সদ্যপ্রাপ্ত গৌরব ভূলুণ্ঠিত হল। বিপর্যস্ত মাখন ভূমিশয্যা ছেড়ে ফটিকের ওপর চড়াও হল এবং অন্ধভাবে দাদাকে মারতে লাগল। ফটিক মাখনের পড়ে যাওয়ায় খানিকটা শশব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বটে কিন্তু মাখনের এই আচরণে তার আর প্রতিবাদের উপায় রইল না। অগত্যা মাখনের আক্রমণ সহ্য করতে হল। এরপর দাদার নাকে, মুখে, চোখে আঁচড় কেটে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেলে মাখন এবং বালকদের সেদিনের মজার খেলা ভেঙে গেল।