শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর (S.A.Q) Class 11

শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর

শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর

মনোবিদ ফেল্ডম্যান প্রত্যক্ষণ বলতে কী বুঝিয়েছেন? মনোবিদ টিচেনার (Titchener)-এর মতে, প্রত্যক্ষণ কী?

মনোবিদ ফেল্ডম্যান ইন্দ্রিয়সমূহ এবং মস্তিষ্কে সংযুক্ত উদ্দীপকের বাছাই, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং সমন্বয়করণকে প্রত্যক্ষণ বলেছেন।

মনোবিদ টিচেনার প্রত্যক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন- “Most of our perception are mixed perception complexes of sensory and imaginal element.” অর্থাৎ, আমাদের অধিকাংশ প্রত্যক্ষণই সাংবেদনিক এবং কাল্পনিক উপাদানের সংমিশ্রণ।

প্রত্যক্ষণ বলতে কী বোঝো? প্রত্যক্ষণ সৃষ্টিকারী সংবেদনকে জটিল প্রক্রিয়ারূপে বর্ণনা করেছেন কে?

প্রত্যক্ষণ: উদ্দীপক দ্বারা সৃষ্ট উদ্দীপনা জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অন্তর্বাহী সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছোলে আমাদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের সংবেদনের সৃষ্টি হয়। সেই সংবেদন যখন একটি নির্দিষ্ট অর্থ তুলে ধরে, তখন প্রত্যক্ষণ হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, অর্থপূর্ণ সংবেদনই হল প্রত্যক্ষণ। যেমন, শব্দ শোনা-সংবেদন কিন্তু শব্দের উৎস, প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান হল প্রত্যক্ষণ।

মনোবিদ টমাস রিড প্রত্যক্ষণ সৃষ্টিকারী সংবেদনকে জটিল প্রক্রিয়ারূপে বর্ণনা করেছেন।

প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে কয় ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, এদের নাম লেখো। অবগতি (Cognition) এবং প্রত্যভিজ্ঞা (Recognition)-র মাধ্যমে কী জানা যায়।

প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে দুই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। যথা- অবগতি (Cognition) এবং প্রত্যাভিজ্ঞা (Recognition)।

অবগতির মাধ্যমে কোনো বস্তুর অস্তিত্ব আছে কিনা সে সম্পর্কে জানা যায় এবং প্রত্যভিজ্ঞার মাধ্যমে কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে চিনে নেওয়া যায়।

প্রত্যক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রত্যক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

  • সক্রিয়তা: প্রত্যক্ষণ হল সক্রিয়তাভিত্তিক জটিল মানসিক প্রক্রিয়া।
  • নির্বাচনধর্মিতা: প্রত্যক্ষণ হল এক প্রকারের নির্বাচনমূলক মানসিক প্রক্রিয়া।

প্রত্যক্ষণ গঠনের নীতিগুলি কী কী?

প্রত্যক্ষণ গঠনের নীতিগুলি হল- নৈকট্যের নীতি, ভগ্নতা পূরণের নীতি, আকৃতি এবং ক্ষেত্রের সম্পর্কের নীতি, অনুবন্ধের নীতি এবং নিরবচ্ছিন্নতার নীতি, অন্তর্ভুক্তির নীতি।

সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য লেখো।

সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য হল-

উদ্ভব: পরিবেশের উদ্দীপককে কেন্দ্র করেই সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের সৃষ্টি হয়।

একই ঘটনা: সংবেদন ও প্রত্যক্ষণ একই প্রক্রিয়ার দুটি ঘটনা।

সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের সম্পর্ক লেখো।

সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের মধ্যে সম্পর্ক হল- সংবেদন মানুষকে একটি উদ্দীপক সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান সরবরাহ করে আর প্রত্যক্ষণ ব্যক্তিকে তার সংবেদন সৃষ্টিকারী উৎস সম্পর্কে অর্থপূর্ণ জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে। সংবেদনে আমাদের মন নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু প্রত্যক্ষণ সংবেদন বিশ্লিষ্ট হয় এবং মন সক্রিয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ সংবেদন হলে তারপর প্রত্যক্ষণ হয়।

প্রত্যক্ষণের দুটি ধর্ম লেখো। 

প্রত্যক্ষণের দুটি ধর্ম হল-

  • বিস্তৃতি: বস্তু দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে প্রত্যক্ষণের বিস্তৃতি ঘটে। 
  • স্থায়িত্ব: প্রত্যক্ষণ স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী উভয়ই হতে পারে।

প্রত্যক্ষণকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ও প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে লেখো।

প্রত্যক্ষণকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষণ: এটি এক ধরনের মৌলিক প্রত্যক্ষণ। এই ধরনের প্রত্যক্ষণে চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক ও জিহ্বার মধ্যে যে-কোনো একটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বস্তুর কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণকে নির্বাচন করা হয়।
  • অর্জিত প্রত্যক্ষণ: এই ধরনের প্রত্যক্ষণে একাধিক ইন্দ্রিয় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • সংপ্রত্যক্ষণ: পূর্বঅভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনো নতুন ঘটনাকে প্রত্যক্ষণ করাই হল সংপ্রত্যক্ষণ।

সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষণ (Direct Perception) এবং অর্জিত প্রত্যক্ষণ (Acquired Perception) বা গৌণ প্রত্যক্ষণ বলতে কী বোঝো?

  • সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষণ: পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মধ্যে যে-কোনো একটির সাহায্যে বস্তুর কোনো বিশেষ গুণকে অবধারণ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষণ। এই জাতীয় প্রত্যক্ষণকে মৌলিক প্রত্যক্ষণও বলা হয়।
  • অর্জিত প্রত্যক্ষণ: যে ইন্দ্রিয় যে বিষয়ের সংবেদন গ্রহণে সক্ষম, সেই ইন্দ্রিয় যদি বিশেষভাবে উদ্দীপিত হয়ে সেই বিষয়ের প্রত্যক্ষণ উৎপন্ন করে, তবে তাকে অর্জিত প্রত্যক্ষণ বলা হয়। যেমন- এক টুকরো বরফকে দেখে আমরা বলি ঠান্ডা।

সংপ্রত্যক্ষণ (Apperception) বলতে কী বোঝো?

অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানের কোনো অভিজ্ঞতাকে স্পষ্টভাবে জানাকে বলে সংপ্রত্যক্ষণ। যেমন- একটি পাখিকে দেখে একজন সাধারণ মানুষ পাখি হিসেবেই প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু একজন পক্ষীবিশারদ পাখিটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং পক্ষীজগৎ সম্পর্কে তার পূর্ব-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পাখিটির শ্রেণিবিন্যাস করেন।

ভ্রম প্রত্যক্ষণ (Illusion) বা অধ্যাস বলতে কী বোঝো? ফাই- ফেনোমেনন কাকে বলে?

কোনো সংবেদনের অপব্যাখ্যার ফলে যে বিকৃত প্রত্যক্ষণ ঘটে, তাকে ভ্রম প্রত্যক্ষণ বলে। যেমন- রজ্জুতে সর্পভ্রম।

ফাই-ফেনোমেনন হল একটি ভ্রম অর্থাৎ ক্রমানুযায়ী, আলো জ্বলা এবং বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে গতিশীলতার যে একটি ভ্রম সৃষ্টি হয়, তাকেই বলে ফাই-ফেনোমেনন।

জ্যামিতিক ইলিউশন কাকে বলে? একটি ভ্রম প্রত্যক্ষণের উদাহরণ দাও?

জ্যামিতিক চিত্র অনেকসময় আমরা ভুলভাবে প্রত্যক্ষণ করি। জ্যামিতিক চিত্রের ভুল প্রত্যক্ষণকে আমরা জ্যামিতিক অধ্যাস (Geometric Illusion) বলি। যেমন-সেনডোর একপ্রকার জ্যামিতিক ভ্রম দেখান। একে বলা হয় সামন্তরিক ভ্রম। 

ভ্রম প্রত্যক্ষণ বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন-শুক্তিতে রজত ভ্রম হল ভ্রম প্রত্যক্ষণের একটি উদাহরণ।

মূলার লায়ার-এর ভ্রমের সচিত্র উদাহরণ দাও?

জ্যামিতিক অধ্যাসের সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ হল মূলার লায়ার ভ্রম। এটির একটি উদাহরণ দেওয়া হল। এখানে দেখানো হচ্ছে একই লাইনের উপর বিভিন্ন রেখার সমন্বয় কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে মানুষের মনে ভ্রম সৃষ্টি করে।

অমূলক প্রত্যক্ষণ বা অলীক প্রত্যক্ষণ (Hallucination) বলতে কী বোঝো ? অমূলক প্রত্যক্ষণের দুটি উদাহরণ দাও।

যে প্রত্যক্ষণের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই, বাহ্যিক কোনো উদ্দীপক এ ইন্দ্রিয়ের উপর ক্রিয়া করে সংবেদন ও প্রত্যক্ষ জ্ঞান উৎপন্ন করে না, অথচ বস্তুর প্রত্যক্ষণ হয়, সেই প্রত্যক্ষণকে অমূলক প্রত্যক্ষণ বলে।

রাত্রিকালীন স্বপ্ন ও দিবাস্বপ্ন হল অমূলক প্রত্যক্ষণের দুটি উদাহরণ। কারণ রাত্রিকালীন স্বপ্নের ক্ষেত্রে যেমন কোনো ভিত্তি থাকে না, তেমনই দিবাস্বপ্নও হয় অলীক। এরও কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এইগুলি হল অমূলক প্রত্যক্ষণ।

‘প্রত্যক্ষণ হল বস্তু সম্বন্ধে একক অভিজ্ঞতা’- এই কথাটি ব্যাখ্যা করো?

‘প্রত্যক্ষণ হল বস্তু সম্বন্ধে একক অভিজ্ঞতা’-এ কথা বলার কারণ হল- বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে আমরা যখন সংবেদনকে পূর্ব-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচার করি, তখন ওই বস্তু সম্পর্কে আমাদের একক অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। সমগ্রতাবাদীরা প্রত্যক্ষণের এই একক সাংগঠনিক রূপের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

বস্তুর স্থানব্যাপ্তি বলতে কী বোঝো?

কোনো জিনিসকে আমরা ছোটো দেখি আবার কোনো জিনিসকে বড়ো দেখি। প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে বস্তুর এই যে বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়, একে বলা হয় বস্তুর স্থানব্যাপ্তি। কোনো বস্তুর স্থানব্যাপ্তি উপলব্ধি করার জন্য বিস্তৃত ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন হয়। এই জন্য আমরা বস্তুর স্থানব্যাপ্তি ত্বক (Skin) ও চোখের (Eye) সাহায্যে বুঝতে পারি।

প্রত্যক্ষণের ক-টি স্তর বা পর্যায় রয়েছে ও কী কী?

প্রত্যক্ষণের পাঁচটি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। এগুলি হল-

পৃথক্করণ (Discrimination), সাদৃশ্যকরণ (Similarities), অনুষঙ্গ ও পুনরুত্থান (Association and Reawakening), বস্তুচেতনা ও স্থান নির্ণয় (Objectification and Localisation), বিশ্বাস (Belief)।

প্রত্যক্ষণের প্রথম স্তরটি সম্পর্কে লেখো। 

প্রত্যক্ষণের প্রথম স্তরটি হল পৃথক্করণ। এই স্তরে সংবেদনকে পৃথক করা হয়। যেমন, আমরা যদি কোনো বস্তুকে বই হিসেবে জানতে চাই, তাহলে বই নয় এমন বস্তু যেমন- পেন, পেনসিল, খাতা ইত্যাদি থেকে সেটি যে আলাদা সে বিষয়ে জানতে হবে।

প্রত্যক্ষণের দ্বিতীয় স্তরটি সম্পর্কে লেখো। 

প্রত্যক্ষণের দ্বিতীয় স্তরটি হল সাদৃশ্যকরণ। এই স্তরে কোনো বস্তুর সম্পর্কে বর্তমান সংবেদনের সঙ্গে পূর্বের অর্জিত সংবেদনগুলির সাদৃশ্য অনুসন্ধান করা হয়। যেমন-একটি পাখি সম্পর্কে জানতে হলে, পাখি সম্পর্কে আমাদের পূর্বের যে অভিজ্ঞতা আছে, সেটি মিলিয়ে নিতে হয়।

প্রত্যক্ষণের তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তরটি সম্পর্কে লেখো।

প্রত্যক্ষণের তৃতীয় স্তরটি হল অনুষঙ্গ ও পুনরুত্থান। এই স্তরে ব্যক্তির মনে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার পুনরুত্থান ঘটে ও পূর্ব-অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান অভিজ্ঞতার অনুষঙ্গ স্থাপিত হয়।

প্রত্যক্ষণের চতুর্থ স্তরটি হল বস্তুচেতনা ও স্থান নির্ণয়। এই স্তরে বহির্জগতের কোথা থেকে সংবেদনটি এসেছে এবং কখন উৎপন্ন হয়েছে সেই ধারণাটি স্থির করা হয়। যেমন-একটি শব্দ কাছ থেকে না দূর থেকে আসছে এবং কখন আসছে সেটি বুঝতে পারাই প্রত্যক্ষণের বস্তুচেতনা ও স্থান নির্ণয় করে।

প্রত্যক্ষণের শ্রেণিকরণ সম্পর্কিত নীতিগুলি কী কী? প্রত্যক্ষণের যে- কোনো একটি স্তর সম্পর্কে লেখো।

প্রত্যক্ষণের শ্রেণিকরণ সম্পর্কিত নীতিগুলি হল- সাদৃশ্যের নীতি, নৈকট্যের নীতি, প্রবহমানতার নীতি, সরলতার নীতি এবং সাপেক্ষ পরিচয় নির্দেশকের নীতি।

প্রত্যক্ষণের একটি স্তর হল-বিশ্বাস (Belief)। এটি প্রত্যক্ষণের পঞ্চম তথা শেষ স্তর। প্রত্যক্ষণের ফলে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় সেই বিষয়ে প্রত্যয়ই হল বিশ্বাস।

প্রত্যক্ষণের সময় মানুষের মন কেমন অবস্থায় থাকে? প্রত্যক্ষণ বস্তু সম্পর্কে কেমন অভিজ্ঞতা দান করে?

প্রত্যক্ষণের সময় মানুষের মন সক্রিয় অবস্থায় থাকে। প্রত্যক্ষণ বস্তু সম্পর্কে মূর্ত অভিজ্ঞতা দান করে।

তীব্রতার প্রত্যক্ষণ বলতে কী বোঝো?

তীব্রতার প্রত্যক্ষণ বলতে, সাধারণত বস্তুর গুণের তীব্রতাকে (Intensity) বোঝায়, একটি শব্দ খুর জোর এবং অপর একটি শব্দ খুব ক্ষীণ। একটি জিনিস টকটকে লাল, আর একটি ফিকে লাল। কোনো বস্তু সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান উপলব্ধির জন্য তার গুণের তীব্রতা বিচার করা প্রয়োজন। প্রত্যক্ষণের মধ্যে এই কাজ হয়। সংবেদনের তীব্রতার দ্বারা বস্তুর গুণগত তীব্রতা নির্ধারিত হয়।

প্রত্যক্ষণের দুটি শিক্ষাগত গুরুত্ব লেখো।

প্রত্যক্ষণের দুটি শিক্ষাগত গুরুত্ব হল- প্রত্যক্ষণ বিভিন্ন কাজে ব্যক্তির দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে, এটি ব্যক্তির যে-কোনো জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে।

প্রত্যক্ষণ ও ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের মধ্যে পার্থক্য লেখো। ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের কয়েকটি কারণ লেখো।

প্রত্যক্ষণ হল সংবেদনের অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা। ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ হল সংবেদনের একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যা। যেমন- হালকা অন্ধকারে রাস্তায় পড়ে থাকা দড়িকে অনেক সময় ‘সাপ’ বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আলোকিত অবস্থায় এটিকে আমরা দড়ি হিসেবেই দেখি। এর কারণ মূলত দুটি শারীরিক কারণ মানসিক কারণ।

ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের কয়েকটি কারণ হল- বৈপরীত্য, সন্দেহ, ঈর্ষা প্রভৃতি।

স্কিমা (Schema) কী? “Psychology of Learning and Instruction” গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

মনোবিদ পিয়াজের মতে, ‘Schema’ হল এক ধরনের মানসিক জট। অর্থাৎ কোনো বিষয় সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্যের ক্ষুদ্রতম এককই হল ‘স্কিমা’।

“Psychology of Learning and Instruction” গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন জন পি ডিসিকো।

ধারণা কী?

বহু মনোবিদ ধারণাকে সবরকম শিখনের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একই ধরনের বস্তুসমূহের মধ্যে যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য বা বৈশিষ্ট্যগুলি বর্তমান, সে সম্পর্কে জ্ঞান বা জানাকে ধারণা বলা হয়। অর্থাৎ একই শ্রেণির নানা বস্তুর মধ্যে যে সাধারণ গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে, তার অভিজ্ঞতাই হল ধারণা।

মনোবিদ হাল্স-এর মতে, ধারণা কী? উডওয়ার্থের (Woodworth) মতে, ধারণা কী?

মনোবিদ হাল্স-এর মতে, একটি নির্দিষ্ট নিয়মে আবদ্ধ একগুচ্ছ বৈশিষ্ট্যই হল ধারণা।

মনোবিদ উডওয়ার্থের মতে, কোনো বস্তু সম্পর্কে সামগ্রিক জ্ঞান হওয়াকেই ধারণা বলা হয়।

মনোবিদ ডিসিকো (Dececco)-এর মতে ধারণা কী? ধারণা গঠনের একটি নিয়মের উল্লেখ করো।

মনোবিদ জন পি ডিসিকো-র মতে, সাধারণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একশ্রেণির উদ্দীপনাকেই ধারণা বলা হয়।

ধারণা গঠনের একটি নিয়ম বা নীতি হল-

মূল্যায়নের নীতি: ধারণা গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির মধ্যে মূল্যায়নের নীতি উল্লেখযোগ্য। কারণ বিষয়বস্তু বা ঘটনার সঠিক মূল্যায়নের দ্বারা সঠিক ধারণা গড়ে ওঠে।

মনোবিদ ম্যাকডোনাল্ড (McDonald)-এর মতে, ধারণা কী? মনোবিদ কাগান (Kagan) ‘ধারণা’ সম্পর্কে কী বলেছেন?

মনোবিদ ম্যাকডোনাল্ড-এর মতে, সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমন্বিত কিছু উদীপকের শ্রেণিকে ধারণা বলে।

মনোবিদ কাগানের মতে, বৌদ্ধিক কাজের মৌলিক উপাদান হল ‘ধারণা’। রসায়নশাস্ত্রে যেমন যোজ্যতা, জীববিদ্যায় যেমন জীবতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যায় যেমন শক্তি, তেমনই মনস্তত্বের ক্ষেত্রে ‘ধারণা’।

মনোবিদ রাসেল (Russell) ধারণা সম্পর্কে কী বলেছেন? মনোবিদ ফ্লাভেল (Flavell) ধারণা সম্পর্কে কী বলেছেন?

ধারণা সম্পর্কে মনোবিদ রাসেলের মত হল বিভিন্ন উপাত্ত থেকে যে সাধারণধর্মী মতামত গ্রহণ করা যায়, তাই-ই হল ধারণা।

ধারণার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো?

ধারণার দুটি বৈশিষ্ট্য হল- ধারণা হল প্রত্যক্ষণনির্ভর। শিশুর প্রত্যক্ষণ অভিজ্ঞতা বেশি হলে তার ধারণার বিস্তৃতিও বেশি হবে। ধারণা সবসময়ই পরিবর্তনশীল হয়। ধরা যাক, কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু পরবর্তীকালে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেই ধারণার পরিবর্তন হতে পারে।

ধারণা গঠনের কয়েকটি মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি লেখো।

ধারণা গঠন হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া। মনোবিদরা মনে করেন এই ধারণা গঠনের জন্য বিভিন্ন রকমের মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল- সহজ বিষয়ের থেকে কঠিন বিষয়ের দিকে মনোযোগী হয়ে কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা গঠন করা। জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ের সম্পর্কে ধারণা গঠন করা। মূর্ত (Concrete) বিষয় থেকে বিমূর্ত (Abstruct) বিষয়ের প্রতি ধারণা লাভ করা।

ধারণা গঠনের একটি সহজ উপায় লেখো?

ধারণা গঠনের বেশ কিছু সহজ উপায় আছে। তবে তার মধ্যে একটি যথার্থ উপায় হল- যথাযথ বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে ধারণা গঠন করা হলে তা অপেক্ষাকৃত সহজতর ও বাস্তবসম্মত হয়। এর ফলে ব্যক্তির সেই বিষয়টি সম্পর্কে যে ধারণা লাভ হয়, সেটি ব্যক্তির স্মৃতিতে অনেক দিন ধরে সঞ্চিত থাকে।

শিখনের ক্ষেত্রে ধারণা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

শিখনের জন্য ধারণা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। কারণ ঠিকমতো ধারণা গঠন হলে না বুঝে মুখস্থ করার (Rote learning) প্রবণতা অনেক কমে যায়। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায় এবং শিক্ষার্থী বহুদিন সঠিকভাবে মনে রাখতে সমর্থ হয়। আর শিখনের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুকে স্মৃতিতে ধারণ করে রাখা একান্ত প্রয়োজন। না হলে শিক্ষার্থী ওই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন করতে পারবে না। তাই বলা হয় শিখনের ক্ষেত্রে ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সংবেদন ও ধারণার মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো। মিশ্র পদ্ধতি কাকে বলে?

সংবেদন ও ধারণার মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই সমস্ত পার্থক্যের মধ্যে একটি হল-

  • সরলতা: সংবেদন হল সরল মানসিক প্রক্রিয়া এবং ধারণা হল জটিল মানসিক প্রক্রিয়া।
  • মিশ্র পদ্ধতি: যখন কোনো ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে অবরোহ এবং আরোহ উভয় পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়, তখন সেই পদ্ধতিকে বলে মিশ্র পদ্ধতি।

ধারণা গঠনের সহায়ক বিষয়গুলি কী কী?

ধারণা গঠনে যেমন কিছু নীতি ও পর্যায় আছে, তেমনই এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলি ধারণা গঠনে সাহায্য করে থাকে। যেমন-সময়, সংখ্যা, বর্ণ ইত্যাদি। সময় যেমন কোনো একটি কাজ করতে কতক্ষণ লাগতে পারে সেই সম্পর্কে ধারণা দেয়, তেমনই সংখ্যা কোনো ঘটনার ক্রম, দিন, মাস, বছর ইত্যাদির গণনার ক্ষেত্রে ধারণা দেয়। আবার বর্ণ পরিবেশে অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুর রং কেমন হবে, সেই সম্পর্কে ধারণা দেয়।

মানসিক প্রতিরূপ বলতে কী বোঝায়? ‘বিয়োজন ধারণা’ কাকে বলে?

  • মানসিক প্রতিরূপ: কোনো বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে একাধিক তথ্য ক্রমান্বয়ে একত্রিত ও সংগঠিত হয়ে ওই বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে যে প্রতিরূপ স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়, তাকে মানসিক প্রতিরূপ বলে। তবে মানসিক প্রতিরূপ কোনো প্রতিচ্ছবি নয়। এটি একটি সক্রিয় ও পরিবর্তনশীল সংগঠন।
  • বিয়োজন ধারণা: যে-সমস্ত ধারণা অনন্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে অন্য ধারণা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক, তাদের বলা হয় বিয়োজক ধারণা। যেমন কোনো উদ্ভিদের ‘মূল’ ও ‘পাতা’।

আরোহ এবং অবরোহ পদ্ধতি বলতে কী বোঝানো হয়?

  • আরোহ পদ্ধতি: যে পদ্ধতিতে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ ধারণা গঠন করা হয়, তাকে আরোহ পদ্ধতি বলে। যেমন-বিভিন্ন উৎস থেকে জল নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যে- তাতে দুই ভাগ হাইড্রোজেন ও এক ভাগ অক্সিজেন আছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই পদ্ধতিকেই বলা হয় আরোহ পদ্ধতি।
  • অবরোহ পদ্ধতি: কোনো একটি বিশেষ শ্রেণির অন্তর্গত বস্তু বা প্রাণীর সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ওই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বস্তুসমূহকে বা প্রাণীর বৈশিষ্ট্যসমূহকে পৃথকভাবে শনাক্ত করতে যে পদ্ধতি সাহায্য করে তাই হল অবরোহ।

ধারণা শিখনের পদ্ধতিগুলি কী কী?

ধারণা শিখনের পদ্ধতিগুলি হল-

  • আরোহ পদ্ধতি: যে পদ্ধতিতে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা বস্তুর অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা গঠিত হয়, সেই পদ্ধতিকে আরোহ পদ্ধতি বলে।
  • অবরোহ পদ্ধতি: এক্ষেত্রে প্রথমে সামগ্রিক অভিজ্ঞতা দান করে ক্রমশ বিশেষ অভিজ্ঞতার দিকে এগোনো হয়।
  • মিশ্র পদ্ধতি: এক্ষেত্রে আরোহ এবং অবরোহ উভয় পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।

নামবাচক ধারণা কাকে বলে?

যখন একটিমাত্র গুণের ভিত্তিতে কোনো ধারণাকে চিহিত করা যায়, তখন তাকে বলে নামবাচক ধারণা। যেমন- নদী একটি ধারণা যাতে আমরা বুঝি দুই তীরের মধ্যবর্তী অংশে ক্রমাগত জলপ্রবাহকে। সুতরাং নদী নামবাচক ধারণা।

ধারণা গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা উল্লেখ করো।

ধারণা গঠনে শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব হল-

  • ধারণার গুণ বিশ্লেষণ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধারণা গঠনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকার কাজ হবে শিক্ষাদানের আগে ধারণাটির গুণ শিক্ষার্থীর কাছে বিশ্লেষণ করা।
  • শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা: শিক্ষকের আর-একটি দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীকে ধারণা গঠনে প্রস্তুত করে তোলা।
  • যথাযথ উদাহরণ দান: ধারণা গঠনের জন্য উপযুক্ত উদাহরণ দিতে হবে, যাতে তাড়াতাড়ি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধারণা গঠন হয়।

Read More – The Garden Party Question Answer

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top