নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো

নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
সংবিধানের ৩২৪(১) নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আইনসভা, রাজ্য আইনসভা, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্মের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের সমস্ত দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য যে-সমস্ত কাজকর্ম করতে হয়, সেগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল- পরামর্শদানমূলক কাজ (Advisory), প্রশাসনিক কাজ (Administrative) এবং আধা-বিচারবিভাগীয় কাজ (Quasi Judicial)। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
(1) ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা
যে-কোনো সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের পূর্বে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেই তালিকা সংশোধন করা হল নির্বাচন কমিশনের সর্বাপেক্ষা প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক ব্যক্তির নাম যাতে একাধিক কেন্দ্রে নথিভুক্ত না থাকে, সেই বিষয়ে কমিশনকে সতর্ক থাকতে হয়। মূলত লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশন আইনানুসারে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের নামের তালিকা আপডেট (Update) করে থাকে। রাজ্যগুলিতে এই দায়িত্ব পালনের জন্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকরা কমিশনকে সহযোগিতা করে থাকেন। ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় উল্লিখিত কোনো তথ্য সম্পর্কে ব্যক্তিরা কমিশনে অভিযোগ জানাতে পারে, অভিযোগগুলি বিচারবিবেচনা ও অনুসন্ধানের পর কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে কমিশন নাগরিকদের পরিচয়পত্র, বয়সের প্রমাণপত্রও পরীক্ষা করে।
(2) নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ
নির্বাচনের তারিখ ও নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা কমিশনের একটি গুরুদায়িত্ব। কমিশন লোকসভা, রাজ্য বিধানসভা, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনের তারিখ, মনোনয়নপত্রের বৈধতা বিচারের তারিখ, বৈধ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ প্রভৃতির দিন ধার্য করে। এ ছাড়া যে-কোনো উপনির্বাচনের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের দিন-সহ নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ঘোষণা করতে হয়।
(3) নির্বাচনি প্রতীক প্রদান
নির্বাচন কমিশনের অপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনি প্রতীক প্রদান করা ও দলগুলিকে নথিভুক্ত করা। বহু সময় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভাঙন লক্ষ করা যায়, এমতাবস্থায় দলীয় প্রতীক নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দল কংগ্রেস (ই) এবং কংগ্রেস (স) দলে বিভাজিত হয়ে পড়লে নির্বাচন কমিশন কংগ্রেস (ই) দলকেই স্বীকৃতি প্রদান করে। আবার লোকদল-বহুগুণা গোষ্ঠী ও অজিত গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়লে নির্বাচন কমিশন লোকদল-বহুগুণা গোষ্ঠীকেই লোকদলের নির্বাচনি প্রতীক প্রদান করে।
(4) দলীয় স্বীকৃতি প্রদান বা প্রত্যাহার
রাজনৈতিক দলগুলির রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্তকরণের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের অন্যতম কাজ হল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলিকে নির্বাচন কমিশনের নিয়মমাফিক নথিভুক্ত করা। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির মান যাচাই করে দেখার পরে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে। যথা জাতীয় দল, রাজ্য বা আঞ্চলিক দল এবং অন্যান্য স্বীকৃত দল। উক্ত দলগুলি ছাড়াও নির্দল প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ মাসে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ৬টি জাতীয় দল, ৫৭টি রাজ্য বা আঞ্চলিক দল এবং ২৭৬৪-র বেশি নথিভুক্ত অস্বীকৃত দল (Unrecognised Parties) রয়েছে।
এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলির – স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতাও নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রদান করা হয়েছে। কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে না পারলে কমিশন জাতীয় বা আঞ্চলিক দলের মর্যাদা প্রত্যাহার করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৬ সালে জাতীয় দলের মর্যাদা অর্জন করেছিল কিন্তু ২০২৩ সালে কমিশন নির্ধারিত মানদণ্ড না থাকায় তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় দলের মর্যাদা হারায়।
(5) নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল ঘোষণা
নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন যে-কোনো নির্বাচনি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রাখতে পারে বা বাতিল ঘোষণা করতে পারে এবং পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তামিলনাডুর ভেলোরে ভোটারদের ঘুষ প্রদান এবং দুর্নীতির কারণে নির্বাচন বাতিলের কথা বলা যায়। ভেলোরের ডি এম কে প্রার্থী নগদ অর্থ বিতরণের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করেন। এই ‘বেআইনি কার্যকলাপের’ জন্য ওই কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন কোনো নির্দিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্রের ভোটগণনা সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে স্থগিত রাখতে পারে, প্রয়োজনে ফলপ্রকাশও স্থগিত রাখতে পারে। একইসঙ্গে আবার ভোট কারচুপি, জালভোট (Rigging), ভোটকেন্দ্র দখল (Booth Capturing), হিংসা প্রয়োগ ইত্যাদি ঘটনাকে প্রতিরোধ করে আইনসংগতভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পাদনের চেষ্টা করে।
(6) প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ
নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য এবং নির্বাচনি কার্যে সহযোগিতার স্বার্থে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপাল প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারেন। ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে সাধারণ বা উপনির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই নির্বাচনকার্য সম্পাদনের জন্য বিপুল সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করা আবশ্যক হয়ে পরে। এক্ষেত্রে কমিশন রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যক্ষেত্রে রাজ্যপালের কাছে অনুরোধ ও আবেদন জানাতে পারে।
সংবিধানের ৩২৪ (৬) নং ধারানুযায়ী তাদেরকে এই অনুরোধ রক্ষা করতে হয়। কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচনি কর্মচারী নিয়ে নির্বাচন প্রশাসন গঠন করে। এক্ষেত্রে কমিশন প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একজন মুখ্য নির্বাচন অফিসার নিয়োগ করেন, যিনি সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা ও সংযোগ বজায় রাখেন। এ ছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রে একজন করে নির্বাচনি অফিসার (Electoral Officer) নিযুক্ত করেন। কমিশন নির্বাচনি কর্মী ছাড়াও সামরিক বাহিনী প্রেরণের ব্যবস্থা করার জন্যও রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের কাছে অনুরোধ করতে পারে।
(7) নির্বাচন সম্পর্কিত কার্যপরিচালনা
সাংবিধানিক আইনানুযায়ী, নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় আইনসভা পার্লামেন্ট, রাজ্য বিধানসভা, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কার্যপরিচালনা এবং তদারকি করতে হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন তথা গ্রাম পঞ্চায়েত ও শহরাঞ্চলের পৌরসভা ও পৌরনিগম-এর নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা থাকে না। উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে রাজ্য আইনসভা দায়ভার গ্রহণ করে।
(8) তদন্ত কমিশন গঠন
নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বিষয় সম্পর্কিত যে-কোনো বিরোধ অনুসন্ধানের স্বার্থে তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারে।
(9) আইনসভার সদস্যদের অযোগ্যতা বিচার
পার্লামেন্ট এবং রাজ্য আইনসভার কোনো সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নির্বাচন কমিশন সেই প্রশ্নে যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। পার্লামেন্টের কোনো কক্ষের কোনো সদস্যদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা – দিলে, তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পেশ করতে হয়। এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও, বিষয়টিতে সিদ্ধান্তগ্রহণ করার পূর্বে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। এই পরামর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন (১০৩ নং ধারা)।
অন্যদিকে, রাজ্য আইনসভার কোনো সদস্যের অযোগ্যতা সম্পর্কে রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন (১৯২ নং ধারা)। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৪২তম সংবিধান-সংশোধনী আইনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল সদস্যদের – যোগ্যতা প্রসঙ্গে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করলেও, সেই পরামর্শ মানতে তারা বাধ্য নন। যদিও ৪৪তম সংশোধনীতে (১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ) এটি বাতিল করা হয়।
(10) সচিত্র পরিচয়পত্র প্রদান
ভোটদাতাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা এবং নির্বাচনক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের মাধ্যমে তা বণ্টন করা নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রে কমিশন ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র প্রদান করে থাকে, যার মূল উদ্দেশ্য ভুয়ো বা জাল ভোট প্রতিরোধ করা বা যে-কোনো প্রকার নির্বাচনি দুর্নীতিকে পরিহার করা।
(11) ভোটগণনা এবং নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা
নির্বাচন পরিসমাপ্তির পর ভোটগণনা করা এবং ফলাফল ঘোষণা করা হল নির্বাচন কমিশনের আবশ্যিক কাজ। নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণার পরে জয়ী প্রার্থীকে শংসাপত্র (Certificate) প্রদান করাও কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
(12) আচরণবিধি নির্ধারণ
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন প্রতিটি রাজনৈতিক দল, নির্বাচন প্রার্থী, সরকার ও সরকারি কর্মচারী এবং ভোটদাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণবিধি বা Code of Conduct নির্ধারণ করে এবং নিয়মাবলি যাতে মান্য করা হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচার করার জন্য গণমাধ্যমকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশদান করে বা সীমাবদ্ধতা আরোপিত করে। নির্বাচনি আচরণবিধি অমান্য বা লঙ্ঘন করা হলে কমিশন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
(13) পরিদর্শক বা পর্যবেক্ষক নিয়োগ
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মকানুন মানা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিদর্শক নিয়োগ করে। পরিদর্শকের প্রতিবেদন বা রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিশন নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণ করে।
(14) নির্বাচনি প্রচারে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংযোগ
যে-কোনো নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য নির্বাচনি প্রচার সম্পর্কিত বিভিন্ন নিয়মনীতি নির্ধারণ, নির্বাচন বিষয়ক যাবতীয় তথ্য, পরিসংখ্যান ও বিবরণ (Statistics and other documents) নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয় এবং জনসাধারণকে নির্বাচন সম্পর্কিত নীতি ও নিয়ম সম্পর্কে অবগত করার জন্য প্রচার করে থাকে। এ ছাড়া Exit Poll বা বুথ ফেরত সমীক্ষা যাতে ভোটের আগে প্রকাশ করা না হয় সেদিকে নজর রাখে কমিশন। সরকারি গণমাধ্যমগুলি যাতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে তাও নজর রাখা কমিশনের কাজ।
(15) নির্বাচনে অর্থের নিয়ন্ত্রণ
নির্বাচনে আর্থিক শক্তির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলি প্রচারকার্য ও রাজনৈতিক শিবির তৈরিতে বহু অর্থ ব্যয় করে। এমনকি আর্থিক শক্তির জোরে নির্বাচনে জয়লাভের চেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন একাদশ লোকসভা (১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ) নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলির বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের সর্বোচ্চসীমা নির্ধারণ করে দেয় এবং নির্বাচনি খরচের বিস্তারিত হিসাব পেশ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
(16) আঞ্চলিক এলাকা নির্ধারণ
পার্লামেন্টের সীমানা নির্ধারণ কমিশন আইন (Delimitation Commission Act of Parliament)-এর ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সারা দেশে নির্বাচনি এলাকার আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করে।
(17) জরুরি অবস্থায় নির্বাচনি সুপারিশ
কোনো অঙ্গরাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন একবছরের অধিক বলবৎ রাখার ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রপতির শাসনাধীন রাজ্যে নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে কমিশন রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান করে। এক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সম্মতিতে কাজ হয়।
(18) নির্বাচনি প্রচারের নীতি নির্ধারণ
নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দল নিজেদের মতাদর্শ প্রচারে কতক্ষণের জন্য রেডিও বা টেলিভিশন ব্যবহারের সুযোগ পাবে সে বিষয়টি কমিশন নির্ধারণ করে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনি কেন্দ্রে ও ভোটগণনা কেন্দ্রে সংবাদ চ্যানেলের সাংবাদিক ও আলোকচিত্রকার (Photographer)-দের উপস্থিত থাকার জন্য কমিশন অনুমতিপত্র দিতে পারে।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি সম্পর্কে আরও একটি কথা উল্লেখ্য যে, পূর্বে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভার অধ্যক্ষের নির্বাচন সংক্রান্ত যে-কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল (Election Tribunal) গঠন করতে পারবে। কিন্তু ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ১৯তম সংবিধান-সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনি বিরোধ মীমাংসার দায়িত্ব আদালতের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন বিষয়ে কোনো বিরোধ হলে তা সুপ্রিমকোর্টের বিচারাধীন এবং পার্লামেন্ট ও রাজ্য আইনসভার নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা হাইকোর্টের অধীনস্ত।
Read More – The Garden Party Question Answer