সুফিবাদ’ বলতে কী বোঝ? সুফিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

খ্রিস্টীয় নবম থেকে দশম শতকে ইসলাম ধর্মে যে এক উদারনৈতিক সংস্কারকামী মতবাদের উদ্ভব ঘটে, তা সাধারণভাবে সুফিবাদ নামে পরিচিত। সুফিবাদীরা ধর্মের রক্ষণশীলতা ও বাহ্যিক আচার-আচরণের ঘোরবিরোধী ছিলেন।
ভূমিকা
সুফিবাদ বিশ্লেষণ করে এর কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যায়। যথা-
(1) একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী: সুফিবাদীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, আল্লাহ বা ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং নিরাকার।
(2) ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বিরোধী: সুফিবাদে ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা হয়েছে।
(3) কোরানের আদর্শ অনুসরণ: সুফিবাদীরা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান বা আড়ম্বরতার পরিবর্তে কোরানের মর্মবাণীকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছেন। কোরান তাঁদের কাছে ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং পয়গম্বর ছিলেন হজরত মহম্মদ।
(4) অন্তরের পবিত্রতা: সুফিবাদে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বা ঈশ্বরের করুণা লাভের জন্য অন্তরের পবিত্রতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক ইউসুফ হুসেন বলেন, “সুফিরা গুরুত্ব দেন অন্তরের শুদ্ধতাকে।”
(5) প্রেম ও ভক্তির আদর্শ: সুফিবাদীগণ বিশ্বাস করতেন যে, বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রেম ও ভক্তির দ্বারাই একমাত্র আল্লাহ বা ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভ সম্ভব। তাঁরা আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণের কথা বলেন।
(6) অনাড়ম্বর জীবনযাপন: সুফিবাদে সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ত্যাগ, বৈরাগ্য, উপবাস প্রভৃতি ছিল সুফিবাদীদের মূল আদর্শ।
(7) পির বা গুরুর ভূমিকা: সুফিগুরুকে বলা হয় পির বা খাজা। সুফিদর্শনে ‘পির’ বা গুরুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিষ্যকে সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন ‘পির’ বা গুরু। ‘পির’ বা গুরুর কর্মকেন্দ্র বা আশ্রমকে বলা হয় দরগা বা খানকা।
(8) ধর্মীয় সাধনা স্তর: একটি মত অনুযায়ী, ঈশ্বর বা আল্লহর সান্নিধ্যলাভের জন্য একজন ব্যক্তিকে সুফি সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-তত্তবা (অনুশোচনা), জুহুদ (ধার্মিকতা), রিজা (আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ), ওয়ারা (লোভ দমন), ফকর (দারিদ্রতা) ইত্যাদি।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামের ধর্ম ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই সুফিবাদের উদ্ভব ঘটেছিল। এককথায়, সুফিবাদ হল ইসলাম ধর্মেরই পরিশীলিত রূপ।