সুফিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান

সুফিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান

অথবা, সুফিবাদের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামতগুলি উল্লেখ করো

সুফিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান
সুফিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান

ভূমিকা

খ্রিস্টীয় নবম থেকে দশম শতকে ইসলাম ধর্মে এক সংস্কারকামী উদারনৈতিক মতবাদের উদ্ভব ঘটে। এই মতবাদ সুফিবাদ নামে পরিচিত। অধ্যাপক ফিলিপ হিট্টি বলেছেন- “সুফিবাদ হল ইসলামের অতীন্দ্রিয়বাদী রূপ।” সুফিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে একাধিক মতামত প্রচলিত আছে। যেগুলি হল-

(1) ইসলামীয় আদর্শের প্রভাব: অনেকের মতে, ইসলামি আদর্শ থেকেই সুফিবাদের জন্ম। অধ্যাপক ইউসুফ হুসেন বলেছেন-“ইসলামের বক্ষদেশ থেকে সুফিবাদের জন্ম।” সুফিবাদের উৎস হল পবিত্র কোরান এবং হজরত মহম্মদের জীবনদর্শন ও বাণী। কোরানের ত্যাগ, বৈরাগ্য, আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ প্রভৃতি আদর্শগুলি সুফিরা মেনে চলতেন। কিন্তু ক্রমশ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অনেকেই ইসলামের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বাহ্যিক আড়ম্বরতার প্রতি আকৃষ্ট হন। এতে শঙ্কিত হয়ে একদল ভাববাদী সাধক ইসলামের বাহ্যিক আড়ম্বরতার বিরোধিতা করে ঈশ্বরের (আল্লাহর) করুণা লাভের জন্য অন্তরের পবিত্রতার ওপর জোর দেন। এইসকল সংস্কারকগণ ইসলামের মূলতত্ত্ব প্রচার ও প্রসার করেন। এইভাবে সুফিবাদের উদ্ভব ঘটে। এককথায়, সুফিবাদ হল ইসলাম ধর্মেরই পরিশীলিত রূপ।

(2) খ্রিস্টান আদর্শের প্রভাব: অনেকে মনে করেন যে, খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের আদর্শ সুফি মতবাদের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের সংস্পর্শে এসে সুফিবাদ নতুন গতিবেগ পায়। খ্রিস্টান ধর্মের একেশ্বরবাদ, প্রার্থনা, অন্তরের পবিত্রতা সুফিবাদকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

(3) হিন্দু ও বৌদ্ধদর্শনের প্রভাব: কেউ কেউ মনে করেন, সুফিবাদের উদ্ভব ও বিকাশে হিন্দু ও বৌদ্ধদর্শনেরও যথেষ্ট প্রভাব আছে। তাঁদের মতে, পবিত্রতা, শুদ্ধতা, সততা, দারিদ্রতা প্রভৃতি সুফি আদর্শগুলি হিন্দুদর্শনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। অনেকের মতে, বৌদ্ধদর্শন থেকেই তাঁরা ‘নির্বাণ’ (ফানা)-এর আদর্শ গ্রহণ করেন। তাই ড. সতীশচন্দ্র বলেছেন, এ কথা সত্য যে সুফিবাদের সঙ্গে বৌদ্ধ ও হিন্দু যোগীদের মত ও পথের বেশ কিছু সাদৃশ্য ছিল।

মূল্যায়ন

সবশেষে বলা যায় যে, সুফিদর্শনের ওপর অন্যান্য ধর্মীয় আদর্শের প্রভাব থাকলেও পবিত্র কোরান এবং হজরত মহম্মদের বাণী ও জীবনাদর্শের ওপর ভিত্তি করেই সুফিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top