সাহিত্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব উল্লেখ করো

সাহিত্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব উল্লেখ করো

সাহিত্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব উল্লেখ করো
সাহিত্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব উল্লেখ করো

ভূমিকা

ইতালীয় নবজাগরণ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে আলোড়িত করেছিল। নতুন মনন, চিন্তা ও জীবনবোধ প্রভাবিত করেছিল চিত্রশিল্প, ভাস্কর্য, স্থাপত্য সহ সামগ্রিক শিল্পদর্শনকে। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও রেনেসাঁর প্রভাব অত্যন্ত গভীর ও সুদূরপ্রসারী। অন্যভাবে বলা যায় সাহিত্যের নতুন ধারা রেনেসাঁকে আরও বেশি প্রসারিত করেছে। নবজাগরণের যুগের সাহিত্যের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্যসৃষ্টি: মধ্যযুগে সাহিত্য ছিল মূলত ধর্মভিত্তিক। পোপতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সাহিত্য চর্চায় দৈবশক্তি ও পরলোক প্রাধান্য পেত। রেনেসাঁ সাহিত্যে ধর্মের বেড়াজাল মুক্ত বিশ্বজগৎ ও মানবজীবনের নানা বিষয় প্রাধান্য পায়।

(2) মানবতাবাদী সাহিত্য: মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব ও দার্শনিকদের প্রভাবে রেনেসাঁ যুগের সাহিত্যে মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, চাওয়া পাওয়া, প্রেম-ভালোবাসা, প্রকৃতি-সবই বিষয় হয়ে উঠেছে। ইহজগতের মানবজীবনকে সামগ্রিকভাবে সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এ যুগের সাহিত্যিকরা।

(3) স্থানীয় ও মাতৃভাষায় সাহিত্য: শুধুমাত্র গ্রিক ও লাতিন ভাষা নয়-জনসাধারণের বলার ও বোঝার মতো স্থানীয় ও মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু হয় এ সময়। প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন সাহিত্যসমূহের পান্ডুলিপিগুলি থেকে ইটালির বিভিন্ন শহরে দেশীয় ভাষার অনুবাদ হতে থাকে। ফলে আঞ্চলিক ভাষার প্রসার ঘটে।

(4) ধ্রুপদি সাহিত্যের পুনরুদ্ধার: প্রাচীন ধ্রুপদি যুগের গ্রিক ও লাতিনে রচিত অমূল্য গ্রন্থসমূহের উদ্ধার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের ইটালিতে সাহিত্যচর্চার এক নতুন ধারার সৃষ্টি হয়। এগুলির পাঠোদ্ধার ও চর্চা যেমন প্রাচীন আমলকে জানার সুযোগ করে দেয়, তেমনই সমকালীন লেখকরা তাঁদের নতুন সাহিত্যসৃষ্টির অনুপ্রেরণা লাভ করেন।

(5) রেনেসাঁ সাহিত্যচর্চা-ইটালি: মধ্যযুগের শেষ থেকেই ইটালিতে নবধারার সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয়।

  • দান্তে: ইটালির নবজাগরণের অন্যতম প্রাণপুরুষ ছিলেন দান্তে। তিনি লাতিন ও মাতৃভাষা টাসকান-এ সাহিত্যরচনা করেন। তাঁর রচিত ‘ডিভাইন কমেডি’ কাব্যগ্রন্থে মানুষের প্রেম, ভালোবাসা, দেশপ্রেম, প্রাকৃতিক ঘটনা এবং সর্বোপরি স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইটালির গঠনের বার্তা বর্ণিত হয়েছে। তাঁর অপর রচনা হল ‘ব্যাঙ্কোয়েট’।
  • পেত্রার্ক: ফ্রান্সিসকো পেত্রার্ক ছিলেন ‘সনেট’ বা চতুর্দশপদী কবিতার জনক। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা ‘লে রাইখ’, ‘ট্রাম্পস’, ‘সনেট টু লরা’ ইত্যাদি। তিনি হোমারের ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’ লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন।
  • বোকাচ্চিও : জিওভান্নি বোকাচ্চিও ইতালীয় ‘গদ্যসাহিত্যের জনক’ নামে অভিহিত। তাঁর রচিত ‘ডেকামেরন’ গ্রন্থের একশোটি গল্পের মাধ্যমে তিনি সমাজের বাস্তবচিত্র, গির্জার দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে তুলে ধরেছেন।
  • ম্যাকিয়াভেলি: নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ। তাঁর রচিত ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থ রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রামাণ্য গ্রন্থ। এজন্য তাঁকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

(6) ফ্রান্সে রেনেসাঁ যুগের সাহিত্যচর্চা: ফ্রাঁসোয়া রেবেলিয়াসের ‘গারগায়া’ ও ‘প্যান্টায়েল’ গির্জা, সামন্তপ্রভু, কুসংস্কার, রক্ষণশীলতাকে সমালোচনা করা হয়েছে।

(7) ইংল্যান্ডে রেনেসাঁ যুগের সাহিত্যচর্চা: জিওফ্রে চসার-এর ‘ক্যান্টারবেরি টেল্স’ সমকালীন বাস্তবের জীবন্ত দলিল, এডমন্ড স্পেনসার-এর ‘দ্য ফেয়ারি কুইন’, উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’, ‘হ্যামলেট’, ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ ইত্যাদি এ যুগের অমর সৃষ্টি।

মূল্যায়ন

ইটালি থেকে নবজাগরণের নতুন সাহিত্যচর্চার ধারা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তচিন্তার হাওয়ায় সাহিত্য হয়ে ওঠে প্রকৃতিগতভাবেই জীবনমুখী উপন্যাস, ছোটোগল্প, ট্রাজেডি-কমেডি নাটক, ঐতিহাসিক কাহিনির পুননির্মাণ সবই এ যুগে শুরু হয়।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top