লালন শাহ্ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Class 11

Table of Contents

লালন শাহ্ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর Class 11

লালন শাহ্ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
লালন শাহ্ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

১। লালন শাহ্ কে ছিলেন? পাঠ্য ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করো।

লালন শাহ্ পরিচয়: লালন শাহ্ ছিলেন মধ্যযুগের একজন মানবতাবাদী ফকির সাধক, যিনি সহস্রেরও অধিক সাধনসংগীত রচনা করেছেন এবং যাঁর শিষ্যের সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। সমস্ত জাত পাতের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি প্রাণের ঈশ্বরের সাধনা করেছিলেন।

কবিতার বিষয়বস্তুঃ লালন শাহ্ বিরচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ তাঁর অধ্যাত্ম ভাবনার প্রজ্বলিত প্রতিফলন। এ কবিতার মূল কথাই লালন শাহের মনের কথা, তাঁর মনের মানুষের সাধনার কথা। সাধক ঈশ্বরের সাধনা করেন। যতক্ষণ তিনি ঈশ্বরকে না পান, ততক্ষণ তিনি উন্মত্তের মতো সাধনা করে চলেন। এইজন্য প্রত্যেক সাধকই উন্মাদ। লালন বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। তাই যে ঈশ্বরের সাধনার কথা তিনি বলেন, তাঁর সর্বৈব সত্তা মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। তাই তাঁর মতে, মানুষকে বাদ দিয়ে সাধনার কথা ভাবাই যায় না।

‘দ্বি-দলের মৃণাল’ বলতে বাইরের মানুষ ও ভিতরের মানুষের কথা বলা হয়েছে। এই দুইয়ের মধ্যে মিলনই সাধনার লক্ষ্য। মানুষরূপী গুরুর সহায়তায় এই অসম্ভব সম্ভব হতে পারে। বাইরের মানুষ হল পার্থিব মানুষ, আর ভিতরের মানুষ হল অলখ মানুষ, এই ভিতরের মানুষই ঈশ্বর। তিনি যেমন চরাচরে ব্যাপ্ত, তেমনি মনের ভিতরেও বিরাজমান। তাই কবি বলেছেন, “এই মানুষে মানুষ গাথা”। কিন্তু মানুষেরা ঈশ্বর সাধনার ক্ষেত্রে ভুল করে। তারা ঈশ্বরের বিগ্রহকেই ঈশ্বর মনে করে, মন্দিরে-মসজিদে তাঁর অধিষ্ঠান কল্পনা করে, অর্থাৎ জেনেশুনে মাথা মোড়ায়। এ ভুলের মূল কারণ হল, পার্থিব আসক্তি বা মোহজাল। একে ছিন্ন করতে হবে। তবেই উত্তরণ সম্ভব। এইভাবে লালন যে ঈশ্বরের সন্ধান দিয়েছেন, যে ঈশ্বরের সাধনা করেছেন, সে আসলে মানুষ; যে সাধনার পথ তিনি বাতলেছেন, তা মূলত মানব সাধনা।

২। “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”-সোনার মানুষ হওয়ার যে পদ্ধতি আলোচ্য কবিতায় বলা হয়েছে, তা লেখো।

সোনার মানুষ হওয়া : সোনার মানুষ হওয়ার যে পদ্ধতিতে, বাউল সাধকরা বিশ্বাস করেন তা হল, মানুষের মধ্যেই পরম মানুষ অর্থাৎ, ঈশ্বরের অবস্থান। এখানে সেই পরম মানুষকে ভজনার কথাই বলা হয়েছে। এই ভজন-সাধনের মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়া যায়। তবে মানুষ ব্যতিরেকে, তার ‘দেহ ব্যতিরেকে ঈশ্বর ভজনা সম্ভব নয়। আধার ছাড়া আধেয়র কোনো অস্তিত্বই নেই। তাই সাধনার সময় দেহ আর মনের মধ্যে কোনো তফাত থাকে না। ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতার মাধ্যমে কবি লালন শাহ্ এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

৩। “মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।”-এখানে কোন্ মানুষের কথা বলা হয়েছে? ক্ষ্যাপা কে? সে কীভাবে মূল হারিয়ে ফেলে?

উদ্দিষ্ট মানুষ : কবি লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ‘মানুষ’ বলতে জাতিধর্মনির্বিশেষে সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে।

ক্ষ্যাপার পরিচয়: বাউল সাধকরা নিজেদেরকে ‘ক্ষ্যাপা’ বলেই পরিচয় দেন। কারণ, তাঁরা মনের ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সদা উন্মত্ত, উন্মুখ।

মূল হারিয়ে ফেলাঃ ‘মূল’ বলতে এখানে বলা হয়েছে পরম ঈশ্বরের সাধনাকে। মানুষকে ভালোবাসাই এই সাধনার পথ। মানুষের থেকে দূরে সরে যাওয়ার মানে পথভ্রষ্ট হওয়া।

৪। “দ্বি-দলের মৃণালে/সোনার মানুষ উজ্জ্বলে”-কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

তাৎপর্য ব্যাখ্যা: কবি লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ‘দ্বি-দল’ বলতে দুটি পদ্মের পাপড়ির কথা বলা হয়েছে, এখানে মানুষের দুটি চোখ। বাউল সাধনার দেহতত্ত্বের ব্যাখ্যা অনুযায়ী দুটি ভূ আর নাকের গোড়ায় অবস্থিত জায়গাটির নাম দ্বি-দল।

বাউল সাধকরা দেহসাধনার মধ্য দিয়ে যে পরম পরিতৃপ্তি লাভ করে তা মূলত সুষুম্নানাড়ির মধ্য দিয়ে এক বিশিষ্ট অনুভূতির সঞ্চালন। তাঁরা ভাবেন, এর মধ্য দিয়েই ‘পরম মানুষ’ পরিতৃপ্ত হন।

৫। “মানুষ-গুরু কৃপা হ’লে/ জানতে পাবি।।”- ‘মানুষ-গুরু’ কে? তাঁর কৃপা কীভাবে জানা যায়?

‘মানুষ-গুরু’ : কবি-সাধক লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ‘মানুষ- গুরু’ বলতে পরম সাধকের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা পরম মানুষের কথা বলা হয়েছে, যাঁকে চোখে দেখা যায় না। তিনিই পরমারাধ্য ঈশ্বর।

তাঁর কৃপা জানার উপায়ঃ সাধক যতক্ষণ না সাধনায় সিদ্ধি লাভ করছেন, ততক্ষণ তাঁর অন্তরে অতৃপ্তির কালো মেঘ আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। লালনের দেহতত্ত্ব অনুযায়ী যখন সেই পরম মানুষ পরম পরিতৃপ্তি লাভ করে প্রকৃত সাধনার পথ ধরেন, তখন সে কৃপা করে সাধককে। আসলে সাধক দেহসাধনার দ্বারা দেহাতীত মনোভাবে উন্নীত হলেই তাঁর কৃপার কথা জানা যায়, তা পাওয়া যায়।

৬। “এই মানুষে মানুষ গাথা। দেখনা যেমন আলেক লতা।” উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

তাৎপর্য: খ্যাতনামা বাউল সাধক লালন শাহ্ ফকির রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত।

বাউল সাধক লালন ফকির আলোচ্য কবিতায় ঈশ্বরের সত্যকারের স্বরূপ উদ্‌ঘাটন করতে চেয়েছেন। বাউলতত্ত্বে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের অধিষ্ঠান আমাদের দেহ তথা হৃদয়ের মধ্যেই। তাই যে ঈশ্বরকে আমরা বিশ্বচরাচরে ব্যাপ্ত মনে করি তিনি আসলে আমাদের দেহের মধ্যেই আছেন। এখানে বর্ণিত মানুষ সাধারণ মানুষ ও অপরটি হল মনের মানুষ অর্থাৎ, ঈশ্বর। ঈশ্বর ‘আলেক’ অর্থাৎ, অলক্ষ বা অলৌকিক হলেও লতার মতোই মানুষকে জড়িয়ে থাকেন। এ কথাই উদ্ধৃতিটির মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে।

৭। “দেখনা যেমন আলেক লতা”- ‘আলেক লতা’ কী? বাউলতত্ত্ব অনুসারে তার বৈশিষ্ট্য কী?

‘আলেক লতা’ : সাধক কবি লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতায় উল্লেখিত ‘আলেক’ কথাটির অর্থ হল- অলৌকিক বা অলক্ষ। আর লতার দ্বারা যে-কোনো লতানো গাছের কথা বলা হয়। তবে এখানে ‘আলেক লতা’ হল, লতানো গাছের মতোই মানুষকে অদৃশ্যভাবে জড়িয়ে থাকা পরম পুরুষ।

বৈশিষ্ট্য: বাউলরা কল্পনা করেন যে, অলক্ষ-অলৌকিক লতার মতোই ঈশ্বর এই দেহভাণ্ডে অবস্থান করেন। তাই দেহের সুখই মনের সুখ, আর মনের সুখ মানেই ঈশ্বরের সুখ। বাউলতত্ত্ব অনুযায়ী এটাই হল তার বৈশিষ্ট্য।

৮। “জেনে শুনে মুড়াও মাথা/জাতে তরবি।।”—কাকে উদ্দেশ করে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য কী?

উদ্দেশঃ কবি অর্থাৎ, লালন শাহ্ তার ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতায় ভবিষ্যতের বাউল সাধকদের প্রতি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

তাৎপর্য: সাধকরা সকলেই সাধারণ সমাজ থেকে উঠে আসা মানুষ। তাদের মধ্যে যেমন পার্থিব কামনা-বাসনা আছে, তেমনই জাতপাতের বিচারও আছে। সাধনা করতে করতে ক্রমশ এই সমস্ত সংস্কার ও বন্ধনকে তাঁরা উপেক্ষা করতে সমর্থ হন। এক দেহের সাধনার মধ্য দিয়েই অন্য দেহে, অর্থাৎ, ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়া সম্ভব। ‘আলেক লতা’-র মতো মানবদেহকে জড়িয়ে থাকেন পরমেশ্বর। তাই প্রয়োজন এই দেহসাধনা। এসব জেনে শুনে সাধনায় ডুব দিলে তবে জাতে উঠে প্রকৃত সাধকপ্রেমী হওয়া সম্ভব হবে।

৯। “মানুষ ছাড়া মন আমার/পড়বি রে তুই শূন্যকার”- কথাটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

তাৎপর্যঃ বাউলদের ঈশ্বর সাধনা মানে অলখ মানুষের সাধনা। পার্থিব জগৎ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর সাধনা করতে হয়। কিন্তু পার্থিব মানুষ নানা কামনা-বাসনা ও জাতপাতের বিচারে সংকীর্ণ বৃত্তে আবদ্ধ থাকে। তাই সে ঈশ্বরের সন্ধান পায় না। যতক্ষণ না সাধনা সম্পূর্ণ হয়, মনের মানুষের দেখা মেলে না। তখন মন শূন্যতায় ভরে যায়। ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ কবিতায় কবি লালন শাহ্ এ কথাই বলতে চেয়েছেন।

১০। ‘…মানুষ-আকার/ভজলে তরবি।।’-পঙ্ক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।

পঙ্ক্তিটির অর্থ : লালনের সাধনা মানুষকে ছেড়ে নিভৃত অরণ্যচারী সন্ন্যাসীর সাধনা নয়। মানুষকে নিয়েই সাধনা। কেন-না, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থান, সাধকের মধ্যেও তা-ই। তাই বাউলরা যে সাধনা করেন, তা মানুষের আকারেই ঈশ্বরের সাধনা। সাধনার এই পথ নির্দিষ্টভাবে দেখাতে গিয়েই কবি সাধক লালন তার ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতায় প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। স্পষ্টভাবেই তিনি পাঠক-শ্রোতাদের জানাতে চান নিরাকার ঈশ্বর মানুষের দেহে সাকার হন। তাই সাধনা মানুষকেই করতে হবে; তাকে বাদ দিলে সাধ্যবস্তুও অধরাই থেকে যাবে, তা নিরর্থক হয়ে পড়বে। মানুষ-আকারে তাঁর ভজনার মধ্য দিয়েই সাধক সর্বার্থ সুখ লাভ করবেন।

১১। ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতায় বাউল সাধনার দেহতত্ত্ব কীভাবে ব্যঞ্জিত হয়েছে, আলোচনা করো।

বাউল সাধনা দেহতত্ত্বঃ বাউল সাধনা মূলত দেহতত্ত্বের সাধনা। সাধন সঙ্গিনী ছাড়া এই সাধনা সম্পূর্ণ নয়। বাউলতত্ত্বের মূল শব্দের অর্থ শুক্র। সাধিকার সঙ্গে সাধক মিলিত হওয়ার সময় সংযমই আসল উদ্দেশ্য। দ্বি-দলের মৃণাল আসলে নাকের উপর ভূ-সংবলিত দুটি চোখ। সাধক কুম্ভক সাধনার মাধ্যমে সুষুম্নানাড়িকে দ্বিধাবিভক্ত করে অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করেন। এইভাবেই তারা ‘অলখ মানুষ’-এর অস্তিত্ব অনুভব করেন। এই কথাই ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতায় বলা হয়েছে।

১২। ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতাটি গীতিকবিতা হিসেবে কতদূর সার্থক তা আলোচনা করো।

গীতিকবিতা হিসেবে ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ : বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, “গীত হওয়াই গীতিকাব্যের আদিম উদ্দেশ্য।” যেসব কবিতা “…was composed to be sung to the accompaniment of lyre or harp” তাদের গীতিকবিতা বলা হয়।

লালনের গানগুলি আসলে সাধন সংগীত। বাউলতত্ত্বের নিগূঢ় সাধনার কথা বলা হয়েছে, এই কবিতা বা গানগুলিতে। কিন্তু কবিতাগুলির মানবিক আবেদন অনস্বীকার্য। মর্ত্যপৃথিবীর মানব- মানবীর প্রেম ও আনন্দ-দুঃখের অনুভূতি গানগুলির মধ্য দিয়ে পাওয়া যায়। কবিতাগুলি সেই হৃদয়ের কাছেই কিছু বলতে চায়, যে হৃদয় যুগে যুগে বিরহতাপিত হয়, আনন্দে উদ্বেলিত হয়। এইজন্য এই কবিতাটি একটি সার্থক গীতিকবিতা।

১৩। “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”-কবি এ কথা কেন বলেছেন?

এ কথা বলার কারণ : বাউল সাধক, পরম জ্ঞানী লালন ফকির উদ্ধৃতাংশটির মধ্যে দিয়ে বাউল সাধনার সারসত্যটি তুলে ধরেছেন। মানবদেহই বাউল সাধনতত্ত্বের মূল আধার। দেহভাণ্ডেই বাউলরা ঈশ্বরের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন, অর্থাৎ তাঁদের মতে, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। তাই মানুষকে ভজনা করলে পরম ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব বলে কবি এ কথা বলেছেন।

১৪। কবি ‘ক্ষ্যাপা’ বলে কাকে সম্বোধন করেছেন?

‘ক্ষ্যাপা’ সম্বোধন: লালন শাহ্ বিরচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ নামাঙ্কিত কবিতায় বাউল সাধনার গুহ্য কথা সহজভাবে প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে। সেই চেষ্টা প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে ‘ক্ষ্যাপা’ শব্দটি। এখানে কবি বাউল সাধককে ‘ক্ষ্যাপা’ বলে সম্বোধন করেছেন। এই ‘ক্ষ্যাপা’-র অর্থ পাগল নয়, উন্মত্ত সাধক।

১৫। ‘মূল হারাবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? কী কারণে মানুষ মূল হারাবে?

‘মূল হারাবি’ বলার অর্থ ঃ ‘মূল’ অর্থাৎ শিকড়। কিন্তু এখানে ঈশ্বর। সাধনার পদ্ধতি ঠিক না হলে মূল অর্থাৎ, ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না।

মূল হারানোর কারণ : বাউল সাধনা হল দেহ সাধনা, কারণ মানবদেহেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। এক্ষেত্রে মানুষ ছেড়ে মাটির পুতুলের বা অন্য কোনো পার্থিব বস্তুর সাধনা করলে মানুষ মূল হারাবে।

১৬। ‘দ্বি-দলের মৃণালে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

‘দ্বি-দলের মৃণালে’ বলার তাৎপর্য : ‘দ্বি-দলের মৃণাল’ হল দুটি বোঁটাযুক্ত পদ্ম। এই দ্বি-দল মৃণালও বাউল সাধনার সাধন পদ্ধতির ইঙ্গিতবাহী। আসলে বাউল সাধকরা সাধনার মাধ্যমে তাঁদের সুষুম্নাকাণ্ডকে দুটো ভাগে ভাগ করে নেয়, সে-কথাই উক্তিটির মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে।

১৭। ‘সোনার মানুষ’ কাকে বলা হয়েছে?

‘সোনার মানুষ’ : লালন ফকির শাহের গানের প্রতিটি কথায় বাউল সাধনতত্ত্বের সারবত্তার প্রকাশ ঘটেছে। ‘সোনার মানুষ’ শব্দযুগলও তত্ত্বকথার একটি পরত যা অন্তর-উন্মোচনের দ্বারা বাউলতত্ত্বের মূল কথার সম্বন্ধে সামান্য ধারণা মেলে। ‘সোনার মানুষ’ আসলে বাউল সাধকদের মূল উদ্দিষ্ট বা লক্ষ্য। অর্থাৎ, ‘সোনার মানুষ’ হলেন ‘অলখ মানুষ’ বা ‘মনের মানুষ’ অর্থাৎ ঈশ্বর, যিনি সাধকের দেহের মধ্যেই অবস্থান করেন।

১৮। সোনার মানুষ কী করে উজ্জ্বলতা পায়?

উজ্জ্বলতা প্রাপ্তির উপায়ঃ লালন ফকির গানে গানে কথায় কথায় সর্বদাই জাতপাতের ঊর্ধ্বে মানুষকে ও মানবধর্মকে স্থাপন করেছেন। তাই তাঁর ধর্মকথারও সারকথা হল মানব পূজা। তবে সে পূজা দৈহিক মানুষটির নয়। দেহসাধনার দ্বারা দেহের ঊর্ধ্বে যেতে হয়। সুতরাং, তাঁর সাধ্যবস্তু হলেন মানুষ। মানুষকে ভজনা করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হয় এবং তিনি উজ্জ্বলভাবে হৃদয়ে বিরাজ করতে থাকেন।

১৯। “মানুষ-গুরু কৃপা হ’লে”-‘মানুষ-গুরু’ কাকে বলা হয়েছে?

‘মানুষ-গুরু’ : বাউলরা মনে করেন যে, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজ করছেন। তাঁর অধিষ্ঠান সর্বদেহে। তবে সবাই তাঁকে খুঁজে পান না। একমাত্র প্রকৃত সাধকের মধ্যেই সন্ধান মেলে সেই ঈশ্বরের। তাই এখানে সেই অন্তরের ঈশ্বরকেই ‘মানুষ-গর’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে।

২০। “মানুষ-গুরু কৃপা হ’লে”-‘মানুষ-গুরু’ কাকে বলা হয়েছে?

‘মানুষ-গুরু’ : বাউলরা মনে করেন যে, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজ করছেন। তাঁর অধিষ্ঠান সর্বদেহে। তবে সবাই তাঁকে খুঁজে পান না। একমাত্র প্রকৃত সাধকের মধ্যেই সন্ধান মেলে সেই ঈশ্বরের। তাই এখানে সেই অন্তরের ঈশ্বরকেই ‘মানুষ-গুরু’ বলে নির্দেশ করা হয়েছে।

২১। মানুষ-গুরুর কৃপা কীভাবে পাওয়া যায়?

মানুষ-গুরুর কৃপা প্রাপ্তি : লালন ফকির গানে গানে কথায় কথায় সর্বদাই জাতপাতের ঊর্ধ্বে মানুষকে ও মানবধর্মকে স্থাপন করেছেন। তাই তাঁর ধর্মকথারও সারকথা হল মানব পূজা। তবে সে পূজা দৈহিক মানুষটির নয়। দেহসাধনার দ্বারা দেহের ঊর্ধ্বে যেতে হয়। সুতরাং, তাঁর সাধ্যবস্তু হলেন মানুষ। মানুষকে ভালোবাসতে হবে-যে ভালোবাসা বাউলদের প্রকৃত সাধনা- তবেই ‘মানুষ-গুরু’-র কৃপা পাওয়া যায়।

২২। “এই মানুষে মানুষ গাথা”-‘এই মানুষ’ ও ‘মানুষ’-এর মধ্যে তফাত কী?

‘এই মানুষ’ ও ‘মানুষ’-এর মধ্যে তাফাত : ‘এই মানুষ’ হচ্ছে আমাদের দেহ, আর ‘মানুষ’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন, মনের মানুষ বা ঈশ্বরকে। আমাদের দেহের মধ্যেই সেই পরম ঈশ্বর বিরাজ করেন। দেহসাধনার দ্বারা ‘এই মানুষ’-এর মধ্যে সেই ‘মানুষ’-কে পাওয়া যায়।

২৩। ‘যেমন আলেক লতা’- ‘আলেক লতা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

‘আলেক লতা’-তাৎপর্যঃ ‘আলেক’ কথার অর্থ হল ‘অলৌকিক’ অর্থাৎ, যা চোখে দেখা যায় না। আবার, লতা হল এমন লতানো উদ্ভিদ যা কোনো-না-কোনো অবলম্বনকে জড়িয়ে বা তাকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। বাউল সাধকরা নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তবে মানবদেহের মধ্যেই সেই ঈশ্বর বিরাজমান। অর্থাৎ, লতার মতোই তা মানবদেহকে আশ্রয়, করে। তাই তাঁকে ‘আলেক লতা’ বলা হয়েছে।

২৪। “জেনে শুনে মুড়াও মাথা” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

‘জেনে শুনে মুড়াও মাথা’ বলার অর্থঃ মাথা মোড়ানোর অর্থ হল বিভ্রান্তির মধ্যে পড়া। বাউল সাধকরা ভালো করেই জানেন যে, ঈশ্বর সকল মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। তাই ঈশ্বরের কোনো জাত নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সার কথাটি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয়। তাই তারা জাতপাতের ধর্মদ্বেষের জালে জড়িয়ে পড়ার ভুল করে ও সাধনপথ থেকে বিচ্যুত হয়, মনের মানুষের সন্ধান পায় না।

২৫। “পড়বি রে তুই শূন্যকার”-কবি এ কথা কেন বলেছেন?

এ কথা বলার কারণ: কবি ও সাধক লালন জানেন যে, বাউল সাধকরা যদি ঈশ্বরের সন্ধান না পান, তাহলে তাঁরা এই বিশ্বচরাচর শূন্যময় দেখেন। হতাশা গ্রাস করে তাদের। তাই তিনি এ কথা বলেছেন।

২৬। “…মানুষ-আকার/ ভজলে তরবি।।”-কীভাবে?

তাৎপর্যঃ মানুষের দেহের মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান। তাই ঈশ্বর আছেন মানুষের আকারেই। আসলে তিনি নিরাকার। তবে তিনি তার প্রিয় পাত্রদের কাছে ধরা দিতে চান। অবশ্য এর জন্য তাঁর প্রয়োজন একটি আকারের। তাই তিনি মানুষেরই আকার ধরেন।

সেইজন্যই মানব সাধনাই বাউলদের কাছে ঈশ্বর সাধনা।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment