মধ্যযুগে ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাব বা ফলাফল উল্লেখ করো

মধ্যযুগে ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাব বা ফলাফল উল্লেখ করো

মধ্যযুগে ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাব বা ফলাফল উল্লেখ করো
মধ্যযুগে ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাব বা ফলাফল উল্লেখ করো

ভূমিকা

খ্রিস্টীয় নবম শতক নাগাদ দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের সূচনা হলেও চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত এই আন্দোলন প্রায় সারা ভারতে ব্যাপ্তিলাভ করে। মধ্যযুগে ভারতীয় ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতিতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

(1) জাতিভেদের কঠোরতা হ্রাস: ভক্তিবাদী সাধকরা জাতিভেদ ও সমাজে উচ্চ-নীচ বৈষম্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। এঁদের অনেকেই ছিলেন সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষ। অগণিত উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণির মানুষ ভক্তিবাদী আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন। ভক্তিবাদ মধ্যযুগে জাতি বা বর্ণভেদের কঠোরতা অনেকটাই হ্রাস করেছিল বলা যায়।

(2) হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের প্রচেষ্টা: সুলতানি আমলে দীর্ঘকাল হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ রচিত হয়েছিল। কিন্তু ভক্তিবাদী সাধকদের ধর্ম-সমন্বয়ীবাদী আদর্শের প্রচার উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি করেছিল।

(3) ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ: ভক্তিবাদী সাধকরা ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করে হিন্দুধর্মের বহু কুসংস্কার দূর করার পাশাপাশি বহু সামাজিক ব্যাধিও দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন- “ভক্তিবাদী আন্দোলন প্রচলিত হিন্দুসমাজে ও ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারেনি।”

(4) হিন্দুসমাজের ভাঙনরোধ: ভারতে যুগ যুগ ধরে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ছিল সমাজে অবহেলিত ও অত্যাচারিত। তাই তারা ঘৃণা ও বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পেতে সুলতানি যুগের শেষ দিকে ইসলাম ধর্মের প্রতি ক্রমশই আকৃষ্ট হতে থাকে। কিন্তু ভক্তিবাদী সাধকদের সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি হিন্দুসমাজের ভাঙনকে অনেকটাই রোধ করতে পেরেছিল।

(5) স্বতন্ত্র ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব: মধ্যযুগে ভারতে ভক্তিবাদী সাধকদের মত ও আদর্শের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে একাধিক স্বতন্ত্র ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উত্থান হয়। যেমন-কবীরকে কেন্দ্র করে কবীরপন্থী, নানককে কেন্দ্র করে শিখ, শ্রীচৈতন্যদেবকে কেন্দ্র করে গৌড়ীয় বৈষুব সম্প্রদায় প্রভৃতি।

(6) আঞ্চলিক ভাষার সমৃদ্ধি : ঐতিহাসিক আর কে মুখার্জি সহ অনেকেই বলেছেন ভারতের সাংস্কৃতিক জীবনেও ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব ছিল গভীর। ভক্তিবাদী সাধকরা তাঁদের বাণীগুলি প্রচার করতেন হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, মৈথিলি প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষায়। ফলে আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের যথেষ্ট সমৃদ্ধি ঘটেছিল।

মূল্যায়ন

ঐতিহাসিক এ এল শ্রীবাস্তব বলেছেন-“বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আমাদের দেশে ভক্তিবাদী আন্দোলনের মত এত ব্যাপক ও জনপ্রিয় আন্দোলন আর সংঘটিত হয়নি।”

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top