ভারতে সুফিবাদ বা সুফি আন্দোলনের প্রভাব বা ফলাফল লেখো

ভূমিকা
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক নাগাদ সুফিরা ভারতবর্ষে প্রবেশ করলেও দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তাঁদের বিভিন্ন সম্প্রদায় ভারতে প্রবেশ করে। এরপর সুফিরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁদের মতবাদ প্রচার করেন। ভারতীয় সমাজ ও জনজীবনে ভক্তিবাদের ন্যায় সুফিবাদের প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। এগুলি হল-
(1) সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা: সুফিরা ইসলামের সামাজিক সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শ মেনে চলতেন। তাঁদের সামাজিক সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণী সমাজের নীচ ও অবহেলিত শ্রেণির মানুষদের সামাজিক অধিকার লাভে সাহায্য করেছিল। অধ্যাপক আই এইচ সিদ্দিকী বলেছেন যে, হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের বর্ণ ও জাতিভিত্তিক ভেদাভেদের বিরুদ্ধে এক বিপ্লব ছিল সুফিদর্শন।
(2) হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের সমন্বয় : সুফিরা সর্বজনীন আদর্শ ধর্মীয় উত্তেজনাকে প্রশমিত করে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির ভাব গড়ে তুলেছিল। তাঁদের সমন্বয়বাদী আদর্শ উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ধর্মীয় সহনশীলতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।
(3) কুপ্রথা দূরীকরণের প্রচেষ্টা: সুফিবাদীরা জুয়া খেলা, সুরাপান, ক্রীতদাস প্রথা প্রভৃতির তীব্র বিরোধিতা করে নানা সামাজিক কুপ্রথা দূর করার চেষ্টা করেছিলেন।
(4) ভাষা ও জ্ঞানচর্চার উন্নতি: সুফি সাধকদের পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দি ও উর্দু ভাষার বিশেষ উন্নতি ঘটে। কাওয়ালি সংগীতের বিকাশে তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়। তা ছাড়া সুফিদের খানকা বা দরগাগুলি ছিল বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞান অর্জনের বিশেষ কেন্দ্র।
(5) শাসক শ্রেণির ওপর প্রভাব: সুফিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন আলাউদ্দিন খলজি, শেরশাহ, আকবর প্রমুখ ভারতের বহু মুসলমান শাসক। সুফিবাদের আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দিল্লির শাসকদের অনেকেই ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদার ও সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। ফলে রাষ্ট্রীয় ঐক্য অনেকাংশেই সুদৃঢ় হয়েছিল।
মূল্যায়ন
মধ্যযুগে ভারতের ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফিবাদের প্রভাব ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সুফিদের সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন এবং তাঁদের জীবনদর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বহু মানুষ সুফি মতাদর্শ তথা ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন।