ভক্তি আন্দোলনে নানকের অবদান লেখো

ভূমিকা
মধ্যযুগে ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের একজন অন্যতম প্রবক্তা হলেন গুরু নানক। তিনি ছিলেন পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে উত্তর ভারতের ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রচারক।
(1) পূর্ব পরিচয়: ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে নানক পাঞ্জাবের তালবন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই ঈশ্বর ভাবনা তাঁর মনকে আচ্ছন্ন করে রাখত। অল্প বয়সেই তিনি সংসার ত্যাগ করে ভারতের নানা স্থানে পরিভ্রমণ করেন। কথিত আছে, তিনি সত্যানুসন্ধানের জন্য সুদূর সিংহল এমনকি মক্কা ও মদিনাতেও ভ্রমণ করেন। এরপর তিনি সত্যানুসন্ধান বা দিব্যজ্ঞান লাভ করেন এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভক্তিবাদ প্রচার করেন।
(2) মতাদর্শ: কবীরের মতোই নানকও ছিলেন একেশ্বরবাদী এবং মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। তিনি সকল ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলতেন যে, জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে যে কেউ প্রেম ও ভক্তি সহকারে ঈশ্বরের নামজপ করলে মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করবে। তিনি বলতেন- “মানুষ পুরস্কার ও তিরস্কার দুই-ই লাভ করে ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী।” তাঁর মতাদর্শের তিনটি প্রধান সূত্র হল-এক ঈশ্বর, গুরু এবং নামজপ। তিনি বলতেন যে, নাম অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের গুণকীর্তন’, দান অর্থাৎ ‘জীবে সেবা’, ও স্নান অর্থাৎ দেহের পরিচ্ছন্নতা বা শুদ্ধির মাধ্যমেই মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব। তিনি মনে করতেন ভক্তি সহযোগে ঈশ্বরের নামজপ করলে গার্হস্থ্য জীবনেও মানুষের মোক্ষ বা মুক্তিলাভ সম্ভব।
(3) জাতিভেদ বিরোধিতা: নানক অন্যান্য ভক্তিবাদীদের ন্যায় জাতিভেদ প্রথার ঘোর বিরোধিতা করেন। তিনি অস্পৃশ্যতারও তীব্র নিন্দা করতেন।
অবদান
মধ্যযুগে উত্তর-পশ্চিম ভারতের ভক্তিবাদ প্রচার ও প্রসারে নানকের অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার বাণী প্রচার করে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে মিলনের চেষ্টা করেন। অগণিত হিন্দু এমনকি মুসলমানও তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিষ্যরা বর্তমানে ‘শিখ’ নামে পরিচিত। তাঁর বাণী ও উপদেশগুলি অবলম্বন করেই পরবর্তীকালে রচিত হয় শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব।