ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান

ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান

অথবা, ভক্তিবাদের উদ্ভব বা উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামতগুলি উল্লেখ করো

ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান
ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কী জান

ভূমিকা

খ্রিস্টীয় নবম থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে ভারতে ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। তবে প্রাচীন ভারতীয় ধর্মশাস্ত্রগুলি থেকে প্রথম ভক্তিবাদের আভাস পাওয়া যায়। ভক্তিবাদের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। যথা-

(1) খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব: গ্রিয়ারসন, ওয়েবার, হপকিন্স প্রমুখ পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা মনে করেন, খ্রিস্টধর্ম থেকেই ভক্তিবাদী আদর্শের উদ্ভব ঘটেছে। ওয়েবার বলেছেন-“মোক্ষলাভের পথ হিসেবে ভক্তিমার্গের ধারণা খ্রিস্টধর্ম থেকেই নেওয়া হয়েছে।” গ্রিয়ারসন বলেছেন, খ্রিস্টধর্মে প্রথম একেশ্বরবাদী তত্ত্ব প্রচারিত হয়। এই একেশ্বেরবাদী ধারণা ভক্তিবাদকে প্রভাবিত করেছিল। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ ইউরোপীয়দের এই দাবিকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন।

(2) ইসলাম ধর্মের প্রভাব: অধ্যাপক ইউসুফ হুসেন, ড. কুরেশি প্রমুখরা মনে করেছেন যে, ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রেরণা এসেছিল ইসলাম ধর্মের নীতি ও আদর্শ থেকে। ইসলামের সাম্যবাদ ও একেশ্বরবাদী আদর্শ থেকেই হিন্দুধর্মে ভক্তিবাদের জন্ম। ড. রোমিলা থাপার আবার বলেছেন, ভক্তিবাদীদের ওপর সুফিবাদের প্রভাব বিশেষভাবে পড়েছিল। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. শ্রীবাস্তব প্রমুখরা উক্ত মতের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

(3) প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের প্রভাব: অধিকাংশ ভারতীয় ও বিদেশি পণ্ডিতরা মনে করেন যে, ভক্তিবাদের আদর্শ প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের মধ্যেই নিহিত আছে। বেদে দেবতা ইন্দ্র বা বরুণের স্তবে ভক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরের ধর্মাদর্শেও ভক্তিবাদ ও জাতিভেদ বিরোধিতারও উল্লেখ পাওয়া যায়।

মূল্যায়ন

সবশেষে বলা যায় যে, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ভক্তিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল। তবে এ কথা সত্য যে, ভক্তিবাদের আদর্শ বহু প্রাচীন। তবে দক্ষিণ ভারতের শৈব নায়নার এবং বৈয়ব আলওয়ার সম্প্রদায়ই ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের সূচনা করে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top