ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান লেখো

ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান লেখো

ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান লেখো
ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান লেখো

ভূমিকা

মধ্যযুগে বাংলা তথা পূর্ব ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। ষোড়শ শতকে প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শে প্লাবিত হয়েছিল।

(1) পূর্ব পরিচয়: ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপের এক শিক্ষিত ব্রাহ্মণ পরিবারে শ্রীচৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল ‘নিমাই’। তিনি অতি অল্প বয়সেই বিভিন্ন শাস্ত্র ও দর্শনে পান্ডিত্য অর্জন করেন। বৈয়ব ধর্মগুরু ঈশ্বরপুরীর কাছে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি পরিচিত হন শ্রীচৈতন্যদেব নামে। কৃষ্ণমন্ত্র-এ দীক্ষা লাভের পর তিনি মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসগ্রহণ এবং বৈয়ব মতাদর্শ প্রচার করেন।

(2) মতাদর্শ : শ্রীচৈতন্যদেব বৈয়ব ধর্মের মূলমন্ত্র বৈরাগ্য, জীবে দয়া, শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেম ও ভক্তির আদর্শ প্রচার করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সকল মানুষই আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। তাই তিনি সকলের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিভাব জাগরণের জন্য ‘নামসংকীর্তন’ বা সমবেত সংগীতের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, কৃষ্ণের প্রতি প্রেম ও ভক্তি নিবেদন ছাড়া জীবের মুক্তি সম্ভব নয়। তাঁর কৃষ্ণনাম সংকীর্তন বা ভক্তিবাদী আদর্শে আপ্লুত হয়ে সমাজের উচ্চনীচ এবং বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

(3) ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতিভেদের বিরোধিতা: শ্রীচৈতন্যদেব নিজে ব্রাহ্মণ হয়েও হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতের ঘোর বিরোধিতা করেন। এজন্য তিনি উচ্চবর্ণের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

(4) ভক্তিবাদের প্রসার: শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচার করেন বাংলা, উড়িষ্যা, বারাণসী ও বৃন্দাবন সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে।

অবদান 

শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন বাংলা তথা পূর্ব ভারতের বৈয়ব ভক্তি আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ সাধক। সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষরা তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। নিত্যানন্দ, যবন হরিদাস ছিলেন তাঁর উল্লেখযোগ্য শিষ্য পরবর্তীকালে তাঁর অনুগামীরা গৌড়ীয় বৈষুব নামে একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় গঠন করেন। তাঁর জীবন ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বৈয়ব পদাবলি সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। ড. সুকুমার সেন চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনকে বাঙালি জাতির প্রথম জাগরণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top