বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ
  • বিশ্ব উষ্ণায়নের ধারণা
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের উপায় 
  • বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ
  • বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব

ভূমিকা: দিনের পর দিন বিশ্বের উষ্ণতা বেড়েই চলেছে, পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, একেই বলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন। সূর্য থেকে আগত তাপশক্তি পৃথিবী-পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং এই তাপশক্তির অধিকাংশই পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। মানবসৃষ্ট দূষণ এবং বনভূমি উজাড় করার ফলেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে, আসলে এই গ্যসগুলো ভারী বলে হালকা বায়ুগুলো এর উপরে থাকে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ: (ক) বায়ুতে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেলেই বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে রয়েছে- কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) প্রভৃতি। (খ) মানবসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বৃক্ষচ্ছেদনের পরিণাম এই বিশ্ব উন্নায়ন। (গ) জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটছে। (ঘ) অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের জন্য এবং জৈবমল ও পচনশীল উদ্ভিদের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে ও ফলস্বরূপ বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটছে। (ঙ) রেফ্রিজারেটার ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ঠান্ডা মেশিনগুলোর ব্যবহারের ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের পরিমাণ বর্ধন হচ্ছে যার ফলে বিশ্ব উন্নায়ন হয়ে চলেছে। (চ) কৃষিজমিতে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহারের মাধ্যমে বা অরণ্যে দাবানলের সৃষ্টি হলে বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) মেশে যা বিশ্ব উষ্ণায়নে সহায়ক।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব: মানুষের নানা অবিবেচনামূলক কাজের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে। এর প্রভাবগুলি হল- (ক) পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় শীতের তুলনায় গ্রীষ্মের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, প্রতিটি ঋতুর আগমন অনিয়মিত ও বিলম্বিত হচ্ছে। (খ) পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। (গ) ভূমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন পৃথিবীর বিভিন্ন পার্বত্য হিমবাহ গলে যাওয়ার জন্য ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে অর্থাৎ এদের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। (ঘ) হিমবাহ সংকুচিত হওয়ার ফলে হিমবাহ সৃষ্ট নদনদীতে জলের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। (ঙ) মেরু অঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। (চ) কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নতা বৃদ্ধি ও খরাজনিত কারণে প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন ১০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে যাবে। (ছ) অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাবে। (জ) বিশ্ব উন্নায়নের ফলে পৃথিবীব্যাপী দাবানল বাড়বে এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ নিশ্চিহ্ন হবে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের উপায়: (ক) গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদানগুলির বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব দ্রব্য বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। (খ) বিশ্বজুড়ে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। (গ) জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমাতে হবে। (ঘ) রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে হবে। (ঙ) অচিরাচরিত শক্তি যেমন-সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি জলবিদ্যুৎ, জোয়ারভাটা ইত্যাদি শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

উপসংহার: বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যাসমাধান করতে বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সকলকেই সাধ্যমতো প্রচেষ্টা করতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের জন্য যে-সমস্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ রয়েছে তা হল-বসুন্ধরা সম্মেলন (১৯৯২), কিয়েটো প্রোটোকল (১৯৯৭), দোহা সম্মেলন (২০১২), ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করলেই হবে না, প্রত্যেকটা দিন সব মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎস বন্ধ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top