বিজ্ঞানের সংজ্ঞা বা ধারণা প্রদান করো। সমাজ ও বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করো

বিজ্ঞানের ধারণা
বিজ্ঞান কী? বিজ্ঞানের প্রকৃত সংজ্ঞাই বা কী?- এই সকল প্রশ্নের উত্তর পণ্ডিতগণ নানাভাবে উপস্থাপিত করেছেন। জেমস জেরাল্ড ক্রাউথার (James Gerald Crowther)-এর ভাষায় বলা যায়, বিজ্ঞান এমন এক ধরনের ব্যবহারবিধি, যার সাহায্যে মানুষ পরিবেশের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আবার এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় স্যার উইলিয়ম সেসিল ডাম্পিয়ার (William Cecil Dampier)-এর ব্যাখ্যায়, ‘প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ও তাহাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞানই হল বিজ্ঞান।’
তবে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ। এই নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কথা ফ্রান্সিস বেকনের কণ্ঠেও শোনা যায়। আসলে বিজ্ঞানের একমাত্রিক ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। প্রাচীন গ্রিসে বিজ্ঞান ছিল দর্শনের অংশ। মধ্যযুগে দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বিজ্ঞানচর্চা এগিয়েছিল। আর আধুনিক বিজ্ঞানের একটা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সত্তা আছে। এই বিজ্ঞানের কেন্দ্রে রয়েছে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ। প্রকৃতি ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মানুষের প্রয়োজন ও মনন হল বিজ্ঞানের ভিত্তি। আদিম মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশের লব্ধজ্ঞান থেকে পাথরের হাতিয়ার বা আগুন ইত্যাদি আবিষ্কার দ্বারা বিবর্তনের পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এই পার্থিব প্রয়োজন ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কারকে আদি বিজ্ঞানচেতনার অনাবিষ্কৃত উৎস হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
সমাজ ও বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক
সমাজের বিবর্তনের সঙ্গে বিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনস্বীকার্য। এপিকিউরীয় দার্শনিকগণ প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন যে, মানুষের প্রয়োজনেই বিজ্ঞান এবং সেই প্রয়োজন পূরণ করাতেই বিজ্ঞানের সার্থকতা। রজার বেকনও স্বীকার করেছেন যে, বেকনীয় দর্শনের মূলমন্ত্র উপযোগিতা ও প্রগতি একসূত্রে গাঁথা। এই ধারার কোনও সম্পূর্ণতা নেই, বিরাম নেই। আজকের আবিষ্কার আগামীদিনের নতুনতর ও উন্নততর আবিষ্কারের প্রেরণা দেবে। এরই নাম প্রগতি। এই সামাজিক প্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিজ্ঞান। অবশ্য দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা ইত্যাদির অনুশীলন এবং উদ্ভাবনও একইভাবে সমাজের প্রগতির সঙ্গে সম্পর্কিত।