নুন কবিতার নামকরণের তাৎপর্য

সমাজের প্রান্তিক, খেটেখাওয়া ও অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষেরাই জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতার ভরকেন্দ্র। নিম্নবিত্ত এই মানুষগুলো অল্পে খুশি বলেই সাধারণ ভাতকাপড়ে, দুঃখে, অসুখে কিংবা ধারদেনাতেও এদের জীবনের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয় না। এরা জানে দুঃখ করলে দুঃখ দূর হয় না। তাই সস্তা খুশির খোঁজে গাঁজায় টান দেয়। এভাবে বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করলেও, খিদে-ঘাম ও রক্তে ভেজা বাস্তব এদের পিছু ছাড়ে না। তাই কোনোদিন হয়তো বাজার করার সামর্থ্য থাকে না, আবার কোনোদিন অভাবিত আয়ের সুবাদে দীর্ঘলালিত স্বপ্নপূরণের ঘোরে এরা মাত্রাছাড়া বাজার করে ফেলে। রুগ্ম-জীর্ণ জীবনে নতুনের মোহে কিংবা সৌন্দর্যের আকাঙ্ক্ষায়, গোলাপচারা অব্দি কিনে আনে। অথচ বাড়িতে স্থানাভাব, ফুল ফোটার নিশ্চয়তা নেই-এইসব ভবিতব্যের ঘাড়ে চাপিয়ে হাসি-রাগ-কষ্টে এদের দিন কাটে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই অভাবের হাত থেকে এ মানুষগুলো নিস্তার পায় না। তাই মাঝে মাঝে রাত্তিরে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে সামান্য নুনটুকু না-পাওয়ায়; রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তখন সামাজিক সম্ভ্রম-মর্যাদা ভুলে, মেনে-মানিয়ে নেওয়ার মুখোশ এক টানে ছিঁড়ে ফেলে রাষ্ট্র কিংবা ভদ্রসমাজের কাছে এরা থালার শুকনো ভাতে সামান্য লবণের সোচ্চার দাবি জানায়। এখানে লক্ষণীয় ‘নুন’ আসলে অপরিহার্যতার প্রতীক। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু অপরিহার্য, মানুষ যেন শুধু সেটুকুর উপরেই নিজের অধিকার পেশ করে। তাই গোটা কবিতাজুড়ে অভাবী মানুষের মানিয়ে চলা ও সহনশীলতার কথা থাকলেও; একদম শেষে ‘নুন’-এর রূপকে সে নিজের অধিকারকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। এসব দিক দিয়ে বিচার করলে কবিতাটির ‘নুন’ নামকরণ গভীরভাবে ব্যঞ্জনাময় ও সার্থক হয়েছে বলেই আমাদের মনে হয়।