দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান প্রযুক্তি – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক
- প্রযুক্তির অবদান
- বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন
- বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সমাজের সর্বত্র
নিশ্বাসপ্রশ্বাসের মতো বিজ্ঞানও আজ আমাদের কাছে অপরিহার্য। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানই আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে। শুধু বিজ্ঞান নয়, এই একবিংশ শতাব্দী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগল অন্বেষণ। চিকিৎসা কৃষি, মহাকাশ গবেষণা, পারমাণবিক শক্তি সর্বোপরি মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। ‘বিজ্ঞান দেয় নিত্যনতুন সত্যের সন্ধান। সেই আবিষ্কৃত সত্যকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি আমাদের হাতে হাতে উপহার দিচ্ছে ব্যাবহারিক নানা জিনিস।
সভ্য সমাজের যে-কোনো ক্ষেত্রে চোখ মেললেই দেখা যায়, সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজ্ঞানের অবদান। সকালে শয্যাত্যাগ থেকে শুরু করে রাতে শুতে যাওয়ার প্রাকমুহূর্ত পর্যন্ত বিজ্ঞান আমাদের সেবায় নিযুক্ত থাকে। পথে চলছে বাস, লরি, ট্যাক্সি ইত্যাদি; পথের দু-পাশে বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা গড়ে উঠেছে; বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলছে, পাখা ঘুরছে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, যানবাহন, আমোদ-প্রমোদ, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান। বিজ্ঞান আজ দূরকে করেছে নিকট। দূরদূরান্তে আমরা সহজেই পাড়ি দিতে পারি।
টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন ব্যবস্থার কল্যাণে দূরদূরান্তে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে এখন সেকেন্ডের মধ্যে কথা বলা যায়।
বর্তমান বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মুখে খাদ্য জোগাবার জন্য কৃষিকে করা হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক। ভূমিকর্ষণ থেকে ফসল সংগ্রহ, ঝাড়াই, মাড়াই, সংরক্ষণ প্রভৃতি সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান অনস্বীকার্য। কৃষির সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের দান যথেষ্ট-তা যে-কোনো শিল্পের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। দেশ ও দশের উন্নতি ও বিকাশে আজ কারিগরি বিদ্যার অবদান অনস্বীকার্য। খরস্রোতা প্রমত্তা নদীতে আজ ইঞ্জিনিয়ারিং দৌলতে বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জলসেচের ব্যবস্থা হয়েছে। সেতু নির্মাণ, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ নির্মাণ, পথঘাট তৈরি, হাইওয়ে নির্মাণ প্রভৃতি নির্মাণ করে চলেছে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিবিদ্যা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে আজ এসেছে যুগান্তর। মানুষ বহু দুরারোগ্য ব্যাধিকে নির্মূল করতে পেরেছে; যেমন- কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, এ ছাড়া এক্স-রে, রঞ্জনরশ্মির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। শুধু তাই নয়, সার্জারির ক্ষেত্রে আজ বিপুল পরিবর্তন এসেছে।
মানুষ আজ মহাকাশে উপগ্রহ পাঠিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাচ্ছে এবং উপগ্রহ প্রেরিত ছবি দেখে আগামী দিনে গ্রহান্তরে পাড়ি দেবার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়। পরমাণুরহস্য ভেদ করে এবং পরমাণু ভাঙার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে মানুষ আজ অসীম ক্ষমতার অধিকারী। তবে পরমাণু বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক দিকটিও স্মরণে রাখতে হবে। পুষ্টিবিজ্ঞান আজ আমাদের সুষম খাদ্যের তালিকা প্রস্তুত করে দিয়েছে, যা জীবনধারণের ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বর্তমান যুগে শিক্ষাদীক্ষায়ও বিজ্ঞানের কল্যাণহস্ত প্রসারিত। লেখনী সামগ্রী, কাগজ, কলম, পেনসিল রবার সবই বিজ্ঞানের দান। এখন ঘরে বসেই ইনটারনেট ও টিভি খুলে পড়াশোনা করা যায়।
মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য বিজ্ঞান আজ বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। রেডিয়ো, টিভি, ভিডিয়ো, স্টিরিয়ো সেট মানুষকে আনন্দ দান করছে। মানুষের একঘেয়েমি ও ক্লান্তিকর জীবনে বিজ্ঞান এনে দিচ্ছে বৈচিত্র। বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদানের মধ্য দিয়ে শুধু মাত্র যে দৈহিক শান্তি লাভ করা যায় তা নয়, বরং মানুষ আজ মানসিক দিক থেকে অনেক তৃপ্ত। এভাবেই দিনের শুরু থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞান বিশ্বস্তভাবে মানুষের সেবা করে চলেছে।
বর্তমান যুগে মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে শতদল মাথায় করে জীবনকে করছে সুন্দর। বিজ্ঞান আজ মানুষের বন্ধু, সহযোগী, সেবক। এ কথা ভাববার বিষয় যে, বিজ্ঞান যদি এত প্রসন্ন না হত তাহলে এই গতিময় বিশ্বে আমরা বাঁচতাম কী করে!