‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা যাওয়ার জন্য কলকাতা থেকে বাসে আসার অভিজ্ঞতা কেমন? গল্পের চরিত্রদের গোরুর গাড়িতে চেপে তেলেনাপোতা যাওয়ার বর্ণনা দাও।
অথবা, তেলেনাপোতা যাওয়ার সমগ্র যাত্রাপথটি বর্ণনা করো

বাসযাত্রার অভিজ্ঞতা : মহানগরী কলকাতা থেকে ত্রিশ মাইল দূরে এই অখ্যাত জনমানবহীন তেলেনাপোতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে সম্ভবত কোনো-এক পড়ন্ত বিকেলে ভিড় বাসে ওঠেন গল্পের নায়ক ও তাঁর দুই সঙ্গী। ভাদ্র মাসের পচা গরমে ঝাঁকুনি আর মানুষের ঠেলাঠেলি সহ্য করে দুই ঘণ্টার এই বাস যাত্রা। এরই সঙ্গে যুক্ত হয় পথের ধুলো এবং শরীরের ঘামে চটচটে হয়ে যাওয়া এক অস্বস্তিকর অবস্থা। তারপর তাঁরা নেমে আসেন তেলেনাপোতার কাছাকাছি কোনো-একটি অনামী বাসস্টপেজে। একটা জলার মতো জায়গার উপর দিয়ে ঘর্ঘর শব্দে বাসটা পথের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
গোরুর গাড়ির অভিজ্ঞতা : তখনও সন্ধে নামেনি, কিন্তু চারিদিকের ঘন অরণ্যে জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিছুটা সময় উপযুক্ত যানের জন্য প্রতীক্ষার পর কাদাজলের নালার দিক থেকে অতি ক্ষুদ্র আকৃতির গোরুর গাড়ি বিচিত্র শব্দে তাদের সামনে উপস্থিত হয়। গোরুর গাড়ির ছইয়ের ভিতর তিন সঙ্গী কোনোক্রমে জায়গা করে নেন। এরপর ঘনান্ধকার জঙ্গল ভেদ করে সুড়ঙ্গের মতো পথ ধরে একটু একটু করে এগোতে থাকে এই অতি ক্ষুদ্র গো-শকট। গাড়ির ঝাঁকুনিতে সওয়ারিদের মধ্যে মাঝেমধ্যে অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষও ঘটে। চারপাশের অভেদ্য অন্ধকারে তাদের চেতনা বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে হয়, মনে হয় চেনা পৃথিবীকে ছেড়ে তারা বহুদূর চলে এসেছেন যেখানে সময় নিস্তব্ধ-নিশ্চল। হঠাৎ জঙ্গলে চিতা বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে গাড়োয়ানের ক্যানেস্তারা বাজানোর উৎকট আওয়াজে হুঁশ ফেরে তাদের। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের আলোয় তারা দেখতে পান দু-পাশে আবছা প্রাচীন অট্টালিকা, ভগ্ন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মহাকালের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে। দুই-তিনবার বাঁক ঘুরে গোরুর গাড়িটি শেষ পর্যন্ত একটি ভগ্ন অট্টালিকার সামনে এসে দাঁড়ায়।