‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে গল্পের নায়কের চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো

নায়ক চরিত্র : প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের এক রাত, দুই দিনের কাহিনিতে গল্প নায়কের উপস্থিতি তার চরিত্রের ভিন্ন কতগুলি বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে-
অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় : কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দুই দিনের ছুটিতে জনবিরল এক গ্রামের মানুষের স্পর্শহীন সরোবরের সন্ধান পেয়েই দুই বন্ধুকে নিয়ে সেখানে চলে গেছেন গল্প নায়ক, গহন অরণ্যে ক্ষুদ্র গো-শকটের অভিযান উপভোগ করেছেন।
কৌতূহলী: রাত গভীর হলে বিনিদ্র নায়ক ভগ্ন অট্টালিকার বিপজ্জনক সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে যান। কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ আলোয় রাস্তার অপর পারের একটি ভগ্ন দ্বিতলে ছায়ামূর্তি – দেখে বিস্মিত হন তিনি। আবার, মধ্যাহ্নভোজের পর বন্ধু মণির সঙ্গে যামিনীর কথোপকথনও তাকে কৌতূহলী করে।
রোমান্টিক: “থাক-না। এবারে পারিনি বলে তেলেনাপোতার মাছ কি বারবার ফাঁকি দিতে পারবে?”-ফিরে আসার আগে যামিনীকে বলা এই কথাগুলি নায়কের রোমান্টিক মনেরই প্রকাশ।
সহানুভূতিশীল : অরণ্যাচ্ছাদিত ভগ্ন অট্টালিকায় আসার পর থেকেই এই জনহীন অঞ্চল নায়কের মনে সহানুভূতির সঞ্চার করে। আবার, সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা যামিনীর চেহারার লাবণ্যহীনতা বা মুখে বয়সবিরোধী গাম্ভীর্য ও মলিন বেদনার স্পর্শ যামিনীর প্রতি তাকে সহানুভূতিশীল করে তোলে। সেই স্পর্শকাতর মন থেকেই যামিনী ও তার বৃদ্ধা মায়ের জীবনসংগ্রামের প্রতি তিনি বেদনাতুর হয়ে ওঠেন।
আবেগ তাড়িত: নিরঞ্জন প্রতারণা করেছে যামিনী ও তার বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে। নায়কের আবেগপ্রবণ মন সেটা মেনে নিতে পারেনি। তাই নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমার কথার নড়চড় হবে না।”
প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থঃ শেষ পর্যন্ত গল্প নায়ক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হন। ম্যালেরিয়া জ্বরে দীর্ঘদিন ভুগে তেলেনাপোতার স্মৃতি ম্লান হয়ে যায় তার। তেলেনাপোতা ‘চিরন্তন রাত্রির অতলতায়’ হারিয়ে যায়।
এভাবেই মানবমনের নানারকম বিন্যাসে গল্প নায়কের চরিত্রটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।