তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণের সার্থকতা

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণের সার্থকতা

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণের সার্থকতা
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের নামকরণের সার্থকতা

ভূমিকা : নামকরণ সাহিত্যের যে-কোনো শাখায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামকরণকে বলে সাহিত্যের প্রবেশদ্বার। তাই মূল রচনাটির মতো নামকরণের ক্ষেত্রেও রচয়িতা অত্যন্ত সাবধানী হয়ে থাকেন।

কাহিনি বিশ্লেষণ: রোমান্টিক কবি-মন নিয়ে ভবিষ্যৎ কালের ভঙ্গিতে লেখা এই গল্পে গল্পকথক পাঠককে নিয়ে গেছেন তেলেনাপোতা নামে এক বিস্মৃতপ্রায়, জনমানবহীন অতীতের এক কাল্পনিক জনপদকে আবিষ্কার করার জন্য। তেলেনাপোতায় গেলে কী ঘটতে পারে তার একটা আভাস দিয়েছেন তিনি। গল্প-নায়ক তাঁর দুই বধুসহ মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে, জনবহুল কলকাতার থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে অন্ধকার জঙ্গল পথে ভাঙাচোরা এক গোরুর গাড়িতে কোনোরকমে বসে বাঘের ভয়কে সঙ্গী করে অবশেষে পৌঁছোবেন তেলেনাপোতার এক জরাজীর্ণ বাড়িতে। পরদিন মধ্যাহ্নভোজের পর গল্পের নায়ক তারই বন্ধু, যামিনীর সম্পর্কিত দাদা মণির কাছে জানতে পারবেন, যামিনীর অসুস্থ বৃদ্ধা জননী তাঁর কন্যার ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তায় নিরঞ্জন নামে এক কল্পিত হবু জামাইয়ের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন এবং এদের উপস্থিতিকে তিনি নিরঞ্জনের উপস্থিতি বলেই মনে করেছেন। যামিনীর অনুরোধে সেই বন্ধু বৃদ্ধার কাছে গিয়ে তাকে আসল ঘটনা বোঝানোর উপক্রম করতে গেলে হঠাৎ নায়ক রোমান্সপ্রবণ হয়ে নিজেকে নিরঞ্জন রূপে উপস্থাপিত করে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন।

কলকাতায় ফিরে আসার পরেও কিছুদিন তেলেনাপোতার এই স্মৃতি থেকে যায় নায়কের মনে। আবার, তিনি তেলেনাপোতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবেন, আর ঠিক তখনই ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হবেন তিনি। দীর্ঘ রোগভোগের পর দুর্বল শরীরে যেদিন বাড়ির বাইরে এসে বসেন, সেদিন উপলব্ধি করেন তার জীবনে অনেক কিছু ইতোমধ্যে ধোয়া-মোছা হয়ে গেছে। তেলেনাপোতার স্মৃতি হয়ে পড়েছে ম্লান। যামিনী বা তেলেনাপোতা বলে সত্যি কিছু আছে কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ জাগে তার মনে।

মূল্যায়ন : লেখকের গল্পের বুনন থেকেই পরিষ্কার, তেলেনাপোতা বলে বাস্তবে কিছু নেই, আবার আছেও। বাংলার বহু গ্রাম তেলেনাপোতার মতোই দারিদ্র্য ও অসহায়তাকে সঙ্গী করে, শুধুমাত্র স্বপ্নে ভর করে বেঁচে থাকে। সেখানে এমন কতশত যামিনী এবং তাদের অসুস্থ বৃদ্ধা মায়েরা রয়েছে যারা অন্যের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করে ভাগ্যের কাছে সমস্ত কিছু সমর্পণ করে কোনোরকমে জীবন অতিবাহিত করেন। পাশাপাশি, শহুরে মানুষ রোমান্টিক আবেগে গ্রামের প্রকৃতির স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে যায় বটে, কিন্তু সেখানকার জীবন যন্ত্রণার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারে না। বাংলার গ্রামীণ জীবনের এই সত্যস্বরূপকে আবিষ্কার করতে চেয়েছেন লেখক আলোচ্য গল্পের মধ্য দিয়ে। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ এভাবেই গ্রাম বাংলার এক খন্ড জীবনপ্রবাহের আবিষ্কার হয়ে ওঠে। তাই বিষয়গত বিবেচনায় ও ব্যঞ্জনার বিচারে আলোচ্য নামকরণটি নিঃসন্দেহে সার্থক হয়ে উঠেছে। 

আরও পড়ুন – ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top